বরং একটু সময় বার করে ঘরোয়া উপায়েই জেল্লা ফিরিয়ে আনুন।
পুজোর সময়ে যাঁরা নিয়মিত বাইরে বেরোন, তাঁদের শরীরের পাশাপাশি ত্বক ও চুলের উপরেও অত্যাচার হয়েছে এই ক’টা দিন। অত্যাচার অর্থাৎ অনিয়ম আর অযত্নে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ পড়ে যাওয়া। পুজোর আগে অনেকেই নিজেদের যেমন রূপরুটিনে বেঁধে ফেলেন, তেমনই পুজোর পরেও ত্বক ও চুলের বিশদ যত্ন প্রয়োজন। দরকার ডিটক্সিফিকেশনেরও। এর জন্য পার্লারে গিয়ে একটা ফেশিয়াল করেই দায় সেরে ফেলবেন না। বরং একটু সময় বার করে ঘরোয়া উপায়েই জেল্লা ফিরিয়ে আনুন।
নো মেকআপে ক’দিন
উৎসবের সময়ে যেহেতু টানা মেকআপ করা হয়, তাই পুজোর পর চেষ্টা করুন মিনিম্যাল মেকআপে কাজ সারতে। মেকআপ করলেও তা ভাল ভাবে তুলে ফেলাটাও আবশ্যিক। শুধু ফাউন্ডেশন, কনসিলার আর কাজল-মাসকারায় মেকআপ সেরে ফেললেও রাতে শুতে যাওয়ার আগে মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করে তা তুলে ফেলুন। চোখের মেকআপ তুলুন যত্ন নিয়ে। বিশেষ করে মাসকারা। মেকআপ তোলার জন্য নারকেল তেলের জুড়ি নেই। বেবি অয়েল বা ময়শ্চারাইজ়ারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
গভীরে যাও...
উৎসবের মরসুমে রোজ বাইরে বেরোনোর ফলে দূষণ, চড়া মেকআপের পরত এবং অপ্রতুল বিশ্রামের কারণে ত্বক নিষ্প্রাণ দেখাতে পারে। এর সবচেয়ে কার্যকর প্রতিকার হল ডিপ ক্লেনজ়িং। রোমকূপের গভীরে গিয়ে ত্বককে পরিষ্কার করে তোলাই হবে প্রধান লক্ষ্য। সানস্ক্রিন, ফাউন্ডেশনের ব্যবহার ও তার উপরে ধুলোময়লা জমে রোমকূপের মুখ আটকে যায়। ফলে অ্যাকনে ও ব্ল্যাকহেডসের প্রবণতাও বাড়ে। বাজারচলতি জেল বা ফোম-বেসড ডিপ ক্লেনজ়ার ব্যবহার করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত অয়েল-ফ্রি ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। বাড়িতে দুধ বা সয় মিল্কের মধ্যে আমন্ডের গুঁড়ো বা ওটস গুঁড়ো মিশিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন ক্লেনজ়ার।
মন দিন এক্সফোলিয়েশনে
ক্লান্ত, নির্জীব ত্বককে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রয়োজন এক্সফোলিয়েশন। অর্থাৎ মৃত কোষ তুলে ফেলার পরে ত্বকের ফ্রেশ লেয়ার এক্সপোজ়ড হলে জেল্লা আপনিই ঠিকরে বেরোবে। এক্সফোলিয়েটর হিসেবে বিভিন্ন স্ক্রাবিং এজেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। একটি পাকা কলা, ১/৪ কাপ চিনি গুঁড়ো, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস আর ভিটামিন ই ক্যাপসুলের জেল একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন স্ক্রাবার। মধু, অলিভ অয়েল, ওটমিল বা চালের গুঁড়ো দুধে মিশিয়েও সার্কুলার মোশনে মাসাজ করে স্ক্রাবিং করতে পারেন। আলাদা যত্ন নিন ঠোঁটেরও। লিপস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে ঠোঁট শুষ্কও হয়ে যায় এই সময়ে। তাই মধু, চিনি কিংবা অলিভ অয়েল দিয়ে স্ক্রাবিং করুন ঠোঁট। তুলো দুধে ভিজিয়েও লাগাতে পারেন কালো ভাব দূর করতে।
বাষ্পে ভাসান ত্বক
ত্বককে ডিটক্স করতে স্টিম ট্রিটমেন্টের জুড়ি হয় না। ল্যাভেন্ডার জাতীয় কোনও এসেনশিয়াল অয়েল, কয়েকটা নিমপাতা কিংবা গ্রিন টি লিফ জলে ফেলে দিন। অল্প ফুটতে শুরু করলে একটা তোয়ালে মাথায় জড়িয়ে মুখে গরম ভাপ নিন। এতে রোমকূপগুলির মুখ খুলে যাবে। ঘাম ও মেকআপ প্রডাক্টের মিশেলে অনেক সময়েই রোমকূপের মুখ আটকে থাকে, যা ফেসওয়াশ দিয়ে ধুলেও পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। স্টিম নিলে এর সমাধান সম্ভব। মুখের তৈলাক্ত ভাবও দূর হয়, সেবামের নিঃসরণও নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে স্টিম নেওয়ার ঠিক পরেই ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন এবং টোনার দিয়ে ওপেন পোরস বন্ধ করে দিন।
এক নজরে
দরকার পড়লে তবেই মিনিম্যাল মেকআপ করুন। আর মেকআপ তুলুন যত্ন নিয়ে কোনও রকম কেমিক্যাল প্রডাক্ট ব্যবহার না করাই ভাল। বরং ভরসা রাখুন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি ঘরোয়া ফেসপ্যাক বা মাস্কে
মুখোশের আড়ালে
তৈলাক্ত ত্বকের ডিটক্সিফিকেশনে যেমন উপকারী ক্লে বা চারকোল মাস্ক, তেমনই শুষ্ক বা মিশ্র ত্বককে হাইড্রেট করতে দরকার যে কোনও ধরনের ময়শ্চারাইজ়িং মাস্ক। ত্বকের ধরন অনুযায়ী বেছে নিন। রোমকূপে আটকে থাকা ধুলোময়লা দূর করতে ক্লে বা চারকোল মাস্কের জুড়ি নেই। আবার মধু, দই আর সামান্য ইস্ট দিয়েও বানিয়ে ফেলতে পারেন হাইড্রেটিং মাস্ক। মুখে যখন মাস্ক লাগাবেন, তখন বাকি শরীরও রিল্যাক্সড রাখবেন। ফ্রিজে রাখা শসার চাকতি কিংবা ঠান্ডা গোলাপজলে ভেজানো তুলো চোখের পাতায় দিন।
ফেরান চুলের চাকচিক্য
পুজোর সময়ে অনেকেই খোলা চুলে নানা ধরনের হেয়ার স্টাইল করে থাকেন। এ ছাড়া স্ট্রেটনিং, হাইলাইটস, কালার কিংবা ব্লো ড্রাইয়ের মাধ্যমে নানা স্টাইলিং করতে গিয়েও চুলে যথেচ্ছ অত্যাচার চলে। চুল বাঁধতে গিয়ে হেয়ার স্প্রে কিংবা ল্যাকারের ব্যবহারও একই রকম ক্ষতিকর। পুজোর আগে যেমন হেয়ার স্পা করিয়ে থাকেন, তেমনই পরেও একটা স্পা ট্রিটমেন্ট জরুরি। কেরাটিন বা সিস্টিনের মতো ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন। বিভিন্ন সালঁয় আলাদা করে স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্টও করানো হয়। বাড়িতে ডিম-দইয়ের প্যাক লাগিয়েও প্রয়োজনীয় প্রোটিনের জোগান দিতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন হট অয়েল টারবান থেরাপি করুন নারকেল বা আমন্ড অয়েল দিয়ে। শোয়ার আগে কাঠের চিরুনি দিয়ে ভাল করে চুল আঁচড়ান।
মডেল: মুনমুন রায়;
ছবি: দেবর্ষি সরকার, সুপ্রতিম চট্টোপাধ্যায় (প্যাক লাগানো ছবি)