স্বামী শিবানন্দের এই দীর্ঘ জীবন লাভের রহস্য কী? নিজস্ব চিত্র।
কী জল খান আপনি? জল কি কিনে খান? আমিষ খান? না পুরো নিরামিষ? কখনও নেশা করেছেন? একের পর এক প্রশ্ন ধেয়ে আসছিল যাঁর দিকে, তাঁর বয়স ১২৬। সুদূর বারাণসী থেকে কলকাতার আলিপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে এসেছেন শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে নিতে। সেখানেই তাঁকে ঘিরে অনেকগুলো কৌতুহলী চোখ। সবার একটাই জিজ্ঞাসা। অধিকাংশ মানুষের কাছেই যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা। কী কী করলে দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়? জল বেশি খেতে হবে, না কি ফল? ঘুমাতে হবে কতক্ষণ? মোদ্দা কথা, আপনার বেশি দিন বেঁচে থাকার রহস্য কী?যাঁকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল, তিনি স্বামী শিবানন্দ। চলতি বছরেই পদ্মশ্রী পেয়েছেন সেবামূলক কাজে অবদানের জন্য। বহু বছর ধরে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা হলেও, তিনি বাঙালি। জন্ম ১৮৯৬ সালে, বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটে।
শিবানন্দের ছোটবেলা কেটেছে চূড়ান্ত অভাবের মধ্যে। খাওয়ার জন্য তাঁর বাবা-মাকে ভিক্ষা পর্যন্ত করতে হয়েছে। তাঁর যখন চার বছর বয়স, তখন পরিবার চলে আসে নবদ্বীপে। তার পর, জীবনের স্রোত শিবানন্দকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে দেশের নানা দিকে, নানা কর্মকাণ্ডে। যে কাজই করুন না কেন, নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থেকেছেন বরাবর। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন এবং শরীরচর্চাকে গুরুত্ব দিয়ে গিয়েছেন, এবং এখনও যাচ্ছেন।
কলকাতায় তাঁর শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে বেশ সন্তুষ্ট চিকিৎসকেরা। শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর জন্য মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করা হয়। সব পরীক্ষাতেই তিনি উত্তীর্ণ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, বয়সজনিত কিছু সমস্যা ছাড়া আর কিছু ধরা পরেনি। ফলে, তাঁর জীবনযাপনে কোনও পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। শনিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে বেরনোর আগে, তাঁকে ঘিরে ধরেন সাংবাদিকরা। সঙ্গে আরও অনেক উৎসুক মানুষ।
চলতি বছরেই সেবামূলক কাজে অবদানের পদ্মশ্রী পেয়েছেন স্বামী শিবানন্দ। নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতাল চত্বরে একটি চেয়ারে বসে, সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেন তিনি। যদিও বয়সের কারণে কণ্ঠ ক্ষীণ, কাঁপা কাঁপা। অনেক কথাই স্পষ্ট শোনা বা বোঝা যাচ্ছিল না। তার উপর, কৌতুহলীদের প্রশ্নের পর প্রশ্ন, প্রশ্নের উপর প্রশ্ন সেই অস্পষ্টকে আরও অস্পষ্ট করে দিচ্ছিল। তার মধ্যেই যেটুকু বোঝা গেল, তাঁর প্রধান পরামর্শ নিয়মিত যোগাসন এবং নিয়মনিষ্ঠ জীবনযাপন। শিবানন্দের মতে, যোগাসনের মাধ্যমে সুস্থ জীবন সম্ভব। প্রতিদিন যোগাসন করার পরামর্শ তাঁর। তবে কঠিন বা সময়সাপেক্ষ যোগাভ্যাস দরকার নেই, শিবানন্দের কথায়, প্রতিদিন নিয়ম করে শুধু সর্বাঙ্গাসন করলেই হবে। সুস্থ থাকার এই চাবিকাঠি তিনি তাঁর গুরুজির কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানালেন। আরও জানালেন, আট বছর বয়স থেকে দীর্ঘ ১১৮ বছর ধরে দিনে তিন বার দু’মিনিট করে এই একটি যোগাসন তিনি নিয়মিত করে চলেছেন।
শিবানন্দের যে ছাপা পরিচয়পত্র হাতে এল তাতে লেখা রয়েছে, তিনি তেল এবং নুন যেমন খান না, তেমনই দুধ এবং ফলও তাঁর খাদ্যতালিকা থেকে বাদ। সবার জন্যই কি তাঁর এই পরামর্শ? তাঁর কণ্ঠ স্পষ্ট বোঝা গেল না।
তবে আরও কয়েকটি কথা তিনি বোঝাতে পারলেন। দিনের বেলা ঘুম নয়। রাতে ঠিক সময়ে ঘুম। দুশ্চিন্তামুক্ত মন। এবং পরিচ্ছন্নতা। তাঁকে অনেক দিন ধরে দেখা চিকিৎসক শ্যামাপদ গড়াই জানালেন, কোভিড বিধি আসার বহু আগে থেকেই উনি নিয়মিত নিজের হাত পরিষ্কার করে রাখেন। সেই জন্যই হয়তো কোভিড ওঁকে ছুঁতে পারেনি। হাসপাতালে দেওয়া ভিটামিন ট্যাবলেটটি এমন কায়দায় মোড়ক ছাড়িয়ে সোজা মুখে দিয়েছেন যে, চিকিৎসকদের কাছেও তা শিক্ষণীয় বলে মনে হয়েছে।