— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ঝকঝকে হাসি কার না চাই? কিন্তু চাইলেও অনেক সময়ে ধবধবে দাঁতের পাটি সঙ্গ দেয় না। দাঁতে হলুদ ছোপ, কালচে দাগ অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময়ে এই অবাঞ্ছিত দাগ আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে। দাঁতে এই ধরনের দাগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিয়মিত দাঁত না মাজা, তামাক সেবন বা পানমশলার অভ্যেসের ফলে চলে যেতে পারে দাঁতের স্বাভাবিক সৌন্দর্য। এই দাগ-ছোপ সহজে দূর করাও যায় না। এর থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব কী ভাবে?
মুশকিল আসান
জন্মগত ভাবে না হলেও টিথ হোয়ায়েটনিং-এর মাধ্যমে সুন্দর, সাদা, ঝকঝকে দাঁতের সারি পাওয়া সম্ভব। দন্ত চিকিৎসক পারমিতা গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “দাঁত সাদা করার প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে নানা কেমিক্যাল ব্যবহারের মাধ্যমে দাঁতের বিভিন্ন প্রকার দাগ দূর করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি দাঁতের পুরনো শুভ্রতা ফিরিয়ে আনা হয়।” ডা. গঙ্গোপাধ্যায় এ-ও জানালেন, প্রাপ্তবয়স্কদের দাঁতের রং কখনওই ধবধবে সাদা হয় না। টিথ হোয়ায়েটনিং করালেই যে দাঁত একেবারে মুক্তোর মতো সাদা হয়ে যাবে, এই ধারণাও ভুল। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দাঁতের রং কেবল কয়েক পরত হালকা করা সম্ভব। অন্য দিকে, দাঁত সাদা করতে অনেকেই ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে থাকেন। তবে সেগুলি বিশেষ কার্যকর নয়।
সমস্যার বিবিধ কারণ
কী ভাবে দাঁত সাদা করা হয়?
ব্লিচিং পদ্ধতির মাধ্যমে দাঁতের রং পরিবর্তন করা যায়। এটি একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি এবং এতে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়। প্রথমে কেমিক্যাল এজেন্টস দাঁতে লাগানোর আগে মাড়ি ঢেকে দেওয়া হয়। এর পরে দাঁতের এনামেলে তৈরি হওয়া দাগ দূর করতে ব্লিচিং করা হয়। এই ব্লিচিং এজেন্টের সক্রিয়তা বাড়াতে লেজ়ার আলো ব্যবহার করা হয়। এটি ক্লিনিকে গিয়ে করাতে হয় বলে এই পদ্ধতির নাম হোয়ায়েটনিং অফিস। যদি কারও দাঁতে কড়া দাগছোপ থাকে, তা হলে চিকিৎসকেরা এই প্রক্রিয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই বাড়িতে কিছু নিয়ম অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। দাঁতের দাগের উপরে নির্ভর করে, প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে। মোটামুটি ঘণ্টাখানেকের মধ্যে এটি সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
আর একটি পদ্ধতি হল কাস্টম-ফিট ট্রে। এই পদ্ধতিতে দাঁতের ছাপ নিয়ে চিকিৎসকেরা সেই মাপের একটি ট্রে তৈরি করে দেন। এই ট্রে-র মধ্যে দাঁত সাদা করার জেল দিয়ে সেটি দাঁতে পরে থাকতে হয়। জেলটি কয়েক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে দাঁতের রং হালকা করে দেয়। সাধারণত রাতের দিকে কয়েক ঘণ্টা এটি পরে থাকতে হয়। সমস্যা বুঝে এর মেয়াদ ঠিক করা হয়। এটি পরে থাকাকালীন খাওয়াদাওয়া করা যায় না। এ ছাড়াও দাঁত সাদা করার মাজন ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তবে এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক এবং চোখে পড়ার মতো ফল মেলে না।
দাগ-ছোপ কি ফিরে আসতে পারে?
ডা. গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “দাগ ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকেই যায়। যেমন মাথার সাদা চুল ঢাকতে বারবার রং করতে হয়, ঠিক তেমনই দাঁতের শুভ্রতাও সাময়িক। সাধারণত এক থেকে দু’বছর দাঁতের এই সাদা ভাব স্থায়ী হয়। তবে মুখের ভিতরকার স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস এবং সামগ্রিক জীবনশৈলীর উপরেও এটির স্থায়িত্ব নির্ভরশীল।”
যাঁদের বারণ...
অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের পক্ষে এই কেমিক্যাল পদ্ধতি ব্যবহার না করাই ভাল। আগে থেকেই দাঁতের স্পর্শকাতরতায় ভুগছেন, এমন ব্যক্তিরাও এড়িয়ে চলুন এই চিকিৎসাপদ্ধতি।
টিথ হোয়ায়েটনিং বা দাঁত সাদা করার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। মেকআপ, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে সচেতন হলেও আমরা অনেক সময়েই দাঁতের ব্যাপারে অযত্ন করি। দাঁতের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা, দাগ-ছোপ থেকে মুক্তি তো বটেই, সর্বোপরি একগাল ঝকঝকে হাসি ফিরে পেতে ভরসা হতে পারে টিথ হোয়ায়েটনিং।
মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়; ছবি: জয়দীপ মণ্ডল; লোকেশন: ক্লাব ভর্দে ভিস্তা