—প্রতীকী চিত্র।
আচমকা শারীরিক কোনও সমস্যা হলে অনেকেই হকচকিয়ে যান, বুঝতে পারেন না তৎক্ষণাৎ কী করতে হবে। তেমনই এক সমস্যা নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা নোজ় ব্লিডিং। শরীরে তেমন কোনও সমস্যা নেই কিন্তু হঠাৎ নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে। কারণ একটা নয়, বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
কেন পড়ে নাক দিয়ে রক্ত
নাক থেকে রক্তক্ষরণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় দু’বছর থেকে দশ বছরের বাচ্চাদের মধ্যে এবং ৪৫ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে। এই সমস্যা কেন হয় তার উত্তরে ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘নসট্রিলস বা নাকের দুটো ছিদ্র দিয়ে রক্তক্ষরণের পিছনে আবহাওয়া, অ্যালার্জি, উচ্চ রক্তচাপ, সংক্রমণ ইত্যাদি একাধিক কারণ আছে। তবে সবচেয়ে বেশি হয় আবহাওয়ার জন্য। আমাদের নাসিকা ছিদ্রের ভিতরে খুব পাতলা স্বচ্ছ আবরণ বা মিউকাস মেমব্রেন থাকে। সেই আবরণের তলায় থাকে অসংখ্য রক্তনালিকা বা ব্লাড ভেসেলস, যেগুলো জলহাওয়ার সংস্পর্শে আসে। জলবায়ু যদি শুষ্ক হয় বা খুব গরম হয়, তা হলে সেই প্রতিক্রিয়ায় নাকের ভিতরের আবরণ শুকিয়ে যায়। তখন কড়কড় করে, অস্বস্তি হয়, অনেকে অবচেতন মনে নাকের ভিতরে আঙুল দিয়ে খোঁচাতে থাকে, বিশেষত শিশুরা। এই খোঁচানোর ফলে স্বচ্ছ আবরণ ছিঁড়ে গিয়ে রক্তনালিকা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এটাই হল সবচেয়ে বড় কারণ।’’
এ ছাড়া যাঁদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, অধিকাংশ সময় নাক দিয়ে জল পড়ে, নাক লাল হয়ে থাকে তাঁরা সেই অস্বস্তি থেকে চটজলদি মুক্তি পেতে নেজ়াল স্প্রে ব্যবহার করেন। দীর্ঘ দিন নেজ়াল স্প্রে ব্যবহার করলে মিউকাস মেমব্রেন শুকিয়ে যায় এবং এর জন্যও রক্তনালিকা ফেটে রক্তপাত হতে পারে। নাকের ভিতরে কোনও কারণে ইনফেকশন হলে তার জন্যও রক্তপাত হতে পারে। ‘‘যাঁদের রক্তচাপ বেশি, বিশেষত বয়স্কদের, তাঁদেরও এই সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত রক্তচাপের জন্য যেমন স্ট্রোক হয় বা মাথার মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়, তেমন নাক দিয়েও রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু আগের তিনটে কারণের চেয়ে ব্লাডপ্রেশারের জন্য নাক থেকে রক্তক্ষরণের অনুপাত কম,” বললেন ডা. তালুকদার। আবহাওয়া, অ্যালার্জি, রক্তচাপ ইত্যাদির বাইরে আরও দু’-একটি কারণ আছে। দুর্ঘটনার জন্য নাকে আঘাত পেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে। চোয়ালের দু’পাশে চোট লেগে সেখানে মিউকাস মেমব্রেন ছিঁড়ে গিয়ে নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্যও নাক থেকে রক্তপাত পড়তে পারে।
চিকিৎসা
বাড়ি বা পাবলিক প্লেসে যেখানেই এই সমস্যা হোক না কেন, ভয় না পেয়ে রক্ত বন্ধ করার জন্য তখনই কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। নোজ় ব্লিডিং বন্ধ করার বেশ কিছু উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দিলেন ডা. তালুকদার।
অনেক সময়ে নাকের উপরের দিকে রক্তক্ষরণ হয়। হাড় থাকার জন্য উপরের দিক চেপে ধরা যায় না। তখন রক্ত গলা দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বেরোতে পারে, তাতেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকেরা নাকের ভিতরে গজ গুঁজে দেবেন, এতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। অনেক সময় রক্তনালিকা সার্জারি করে রক্তপাত বন্ধ করা হয়।
আগাম সতর্কতা
শীত আসছে, ত্বক শুষ্ক হচ্ছে, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁদের সচেতন হওয়ার সময় হয়েছে।