ক্রিসমাসের
সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় ঝোলানো মোজার ভিতরে হাত চালিয়ে চকলেট খুঁজেছেন, এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। শীতের সকালে একটা চকমকে প্যাকেট খুলে চকলেট বার
করে মুখে চালান দেওয়ার আমেজই আলাদা। বাচ্চা থেকে বয়স্ক... চকলেটের স্বাদে মজে যেতে
সময় লাগে না কারও।
একটা চকলেটের
দোকান যদি নিজের হত, শৈশবের এই ইচ্ছে প্রায় অনেকেরই মধ্যবয়স
অবধি সঙ্গী হয়। কিন্তু চার্লির মতো গোটা একটা চকলেট ফ্যাক্টরি পাওয়ার সৌভাগ্য
সকলের হয় না। তাই স্বাদপূরণে ভরসা নানা রকম চকলেট আর চকলেট দিয়ে তৈরি খাবার।
চকলেট দিয়ে তৈরি খাবারের তালিকাও কম নেই। চকলেট কুকি, ব্রাউনি, পুডিং,
লগ কেক, ট্রাফল... কত কী! সেই স্বাদবাহারের গল্প শুরু হলেও শেষ হওয়ার নয়। তবে
চকলেটের রকমফেরও কম নয়।
কতশত
চকলেট
-
চকলেট লিকার: এটি হল আনসুইটেনড
চকলেট। মূলত সব চকলেটের বেস হিসেবে এই ঘন, ডার্ক ব্রাউন চকলেট লিকার ব্যবহার করা
হয়। এটা পাওয়া যায় কোকো বিনের ভিতরে কোকো নিবস থেকে। এই নিবস গুঁড়িয়ে মসৃণ
করে তৈরি হয় লিকার। এর থেকেই পরে চকলেট বারও তৈরি করা হয়। আর উচ্চ চাপে এটাই
কোকো বাটার আর কোকো পাউডারে ভাগ করা হয়।
-
হোয়াইট চকলেট: এটা তৈরি হয় কোকো
বাটার, দুধ, ভ্যানিলা, চিনি ও লেসিথিনের
মিশ্রণে। দুধ ও চিনির ফ্লেভার এতে বেশি থাকে।
-
মিল্ক চকলেট: আমাদের দেশে এই
চকলেটই সহজপ্রাপ্য। জন্মদিন থেকে বিবাহবার্ষিকী, এই চকলেটই সব
আনন্দ উদ্যাপনের সঙ্গী। দুধ, চিনি ও চকলেটের লিকারের মিশ্রণে তৈরি
লাইট ব্রাউন রঙের এই চকলেট বার বা টফি আকারেই বেশি বিক্রি হয়। কখনও কখনও
টেক্সচার স্মুদ করার জন্য এমালসিফায়ারও মেশানো হয়ে থাকে। এটার স্বাদ একটু
মিষ্টির দিকেই বেশি হয়।
-
ডার্ক চকলেট: এটা আবার একটু
তিতকুটে স্বাদের। এই চকলেটে কোনও রকম ডেয়ারি প্রডাক্ট বা দুধ মেশানো হয় না।
ফলে ভিগানদের মধ্যেও এই চকলেট বেশ প্রিয়। মূলত চকলেট লিকার আর চিনি দিয়েই
তৈরি ডার্ক চকলেট। স্বাস্থ্যের জন্যও অন্যান্য চকলেটের তুলনায় ডার্ক চকলেট
বেশি ভাল।
-
বিটারসুইট চকলেট: ডার্ক চকলেটের
জনপ্রিয়তার পর থেকেই এই চকলেটের চাহিদা বাড়ে বাজারে। এই চকলেটে কোকো থাকে
প্রায় ৭০ শতাংশ। এই চকলেট ডার্ক চকলেটের মতো একটু তিতকুটে হলেও এর ফলের
ফ্লেভার আর মিষ্টতা ব্যালান্স করে। মূলত চকলেট কুকিজ়, মোল্টেন চকলেট
কেক তৈরিতে এটির ব্যবহার বেশি।
-
রুবি চকলেট: এটা চকলেট
পরিবারে নবতম সংযোজন। ২০১৭ সালে এক বেলজিয়ান চকলেট প্রস্তুতকারক এই রুবি
চকলেট তৈরি করেন। তবে কৃত্রিম ভাবে এর রং তৈরি হয় না। বরং রুবি কোকো বিনস, দুধ ও চিনি
সহযোগে এই চকলেট তৈরি হওয়ায় গোলাপি ঘেঁষা রং আসে। ফলজাতীয় ফ্লেভার ও এর
রক্তিম রঙের জন্য এই চকলেট ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়।
স্বাদবাহারে
চকলেট
-
কুকি থেকে কেক: চকলেট চিপস কুকি
হোক বা প্লেন চকলেট কুকি, শীতের সকালে গরম কফি কাপের পাশে ওম
ছড়াতে এর জুড়ি মেলা ভার। তবে কুকির উপরে রয়্যাল আইসিং দিয়ে পছন্দমতো নকশাও
করে নিতে পারেন। এ সময়ে ক্রিসমাস ট্রি, সান্তার হ্যাট শেপের কুকিও অনেকে তৈরি
করে নেন আইসিং দিয়ে। সে সব তো রইলই। তৈরি করে নিতে পারেন চকলেট ট্রাফল কেক, লগ কেক, ডার্ক চকলেট
পেস্ট্রিও। আর বাড়িতে তৈরির ঝামেলা এড়াতে অর্ডারও করতে পারেন।
-
চকলেট ট্রাফল: চকলেটের মধ্যে
ট্রাফলের চাহিদা কচিকাঁচাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এখানে দু’টি স্তর থাকে।
টেম্পারড চকলেট দিয়ে তৈরি হয় বাইরের স্তর আর ভিতরে থাকে সান্দ্র চকলেট
গানাশ। এই গানাশ আবার তৈরি হয় বিটারসুইট চকলেট ও ঘন ক্রিম দিয়ে। ট্রাফলের
স্বাদ ও ফ্লেভার কম নয়। ক্যারামেল, হেজ়েলনাট, রাস্পবেরি, মোকা, এসপ্রেসো, পিস্তাশিও
ইত্যাদি নানা ফ্লেভারের ট্রাফল পাওয়া যায়। তবে সাধারণ চকলেট বারের চেয়ে ভাল
ট্রাফলের দামও একটু বেশি।
এ ছাড়াও
আইসক্রিম, পুডিং,
মুসেও
ব্যবহার হয় নানা রকমের চকলেট। তবে শীতের মরসুমে সান্ধ্য বা নৈশ আড্ডার সঙ্গী হতে
পারে হট চকলেট। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বৈঠকি মেজাজ জমে যাবে হট চকলেটের কাপে। তার
সঙ্গে যদি থাকে কয়েকটা মার্শমেলো,
তা হলে তো
কথাই নেই। অলস শীতের সঙ্গী হোক মনের মতো চকলেট। ওয়াঙ্কা বারের জাদুটিকিট না পেলেই
বা, একটুআধটু চকলেট জুটে গেলেও শীত কাটবে
তোফা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)