এই ফলে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন সি। সব থেকে বেশি উপকার মিলবে কাঁচা খেতে পারলে। ফাইল ছবি।
চরক সুশ্রুতের সময়েরও আগে থেকে জানা ছিল খানিক কষাটে মার্বেল গুলির আকারের এই ফলের ম্যাজিকের কথা। সে কালের মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা আর বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে এই ফলের রহস্য ভেদ করেছিলেন। সংস্কৃত ভাষায় হালকা স্বচ্ছ সবুজ রঙের এই ফলটির নামকরণ করা হয় আমলকি, এর শব্দগত অর্থ অমৃত ফল।
সর্দি-কাশি থেকে ক্যানসার এমনকি বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধেও আমলকির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে তার প্রমাণ পেয়েছিলেন সেকালের আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিককালে আমলকি নিয়ে গবেষণায় এর অজস্র গুণাগুণের কথা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আমলকিকে সুপার ফুডের তকমা দেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় জানা গিয়েছে, আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি চুলের কোলাজেন প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এর ফলে চুলের জেল্লা ফিরে আসে এবং চুল ঝরে যাওয়া, খুশকি, অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়েটা সহ নানা সমস্যার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। তবে আমলকি গাছে বা বাজারে রইল আর চুল ত্বক ঝকঝকে হয়ে গেল এমন ম্যাজিকের কথা ভাবা ঠিক নয়। আমলকির সাহায্যে চুল ও ত্বক ঝকঝকে করতে চাইলে মাখার পাশাপাশি খেতেও হবে।
আরও পড়ুন:শুরু নিউ নর্ম্যাল, ছোটদের সুরক্ষায় এই সব মানতেই হবে
এই সময়ে বাজারে কাঁচা আমলকি পাওয়া যাচ্ছে। মিক্সি বা শিলে বেটে নিয়ে গ্লাসে জল দিয়ে ভিজিয়ে রেখে সেই জল পান করলে ত্বক ও চুলের সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে ভাল থাকা যাবে। ত্বক হল শরীরের আয়না। তাই শরীর সুস্থ থাকলে ত্বক ও চুল উজ্জ্বল থাকবে। ধুলো, ধোঁয়া, রোদ্দুরের প্রথম ঝাপটা সামলায় ত্বক। ত্বকেরই বর্ধিত অংশ চুল তাই সুন্দর রাখার পাশাপাশি মাথা বাঁচায় একঢাল চুল।
মেডিক্যাল নিউজ টুডে-সহ একাধিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জার্নালে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে যে আমলকিতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইটো-কেমিক্যালস। এগুলি চুল ত্বক সবই ভাল রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
• দূষণের কারণে অনেকেরই অল্প বয়সে চুলে পাক ধরে। চুলের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে আমলকি অত্যন্ত উপযোগী। কাঁচা আমলকি বেটে নিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে রেখে আধ ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেললে চুলে পাক ধরবে না।
• চুল ঝরে যাওয়া প্রতিরোধ করতেও এই দাওয়াই দারুণ কার্যকর।
• চুল লম্বায় বাড়তে সাহায্য করে আমলকির ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং ভিটামিন সি স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে চুল লম্বা হতে এবং ঘন হতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। কারণ আমলকির ফা্ইটোনিউট্রিয়েন্টস চুলের কোলাজেন নামে এক বিশেষ প্রোটিন তৈরি করে।
• শুকনো চুলে জেল্লা আনতে আমলকি শুকিয়ে গুঁড়ো করে জল দিয়ে পেস্ট করে মাথায় লাগিয়ে রাখুন ঘণ্টাখানেক। শ্যাম্পু করে নিলেই সুন্দর ফুরফুরে চুল পাবেন।
আরও পড়ুন: বাইরে বেরচ্ছেন রোজ? করোনা ঠেকাতে এই সব মানতেই হবে নিউ নর্ম্যালে
• অনেকেই নাছোড়বান্দা খুশকির সমস্যায় ভোগেন। কালো পোশাক তো দূরের কথা যে কোনও ঘন রঙের পোশাক পড়াই যেন লজ্জার। কাঁধে আর ঘাড়ে খুশকির সাদা খোলসে ভর্তি হয়ে যায়। অ্যান্টিড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যর্থ। এই সমস্যা দূর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় আমলকি। আমলকির ভিটামিন সি প্রদাহ ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি শুষ্ক স্ক্যাল্পকে আর্দ্র করে খুশকির সমস্যা সারিয়ে তোলে।
কাঁচা আমলকি বেটে নিয়ে চুলের গোড়ায় লাগালেই কেল্লাফতে। ফাইল ছবি।
• আমলকির তেল তৈরি করে রাখুন। বেশ কিছুদিন এই তেল ব্যবহার করা যায়। আমলকি পাতলা করে কেটে শুকিয়ে গুঁড়ো করে রেখে নারকেল তেলে মিশিয়ে রোদে দিয়ে নিয়ম করে মাথার স্ক্যাল্পে মাখুন। এ ছাড়াও কাঁচা আমলকি বেটে নিয়ে নারকেল তেলের সঙ্গে ঢিমে আঁচে ফুটিয়ে ছেঁকে রাখতে পারেন। এই তেল অনেকদিন ব্যবহার করা যাবে।
• মুখ উজ্জ্বল করা-সহ সারা শরীরে ত্বক ঝকঝকে রাখতে ভিটামিন সি ক্রিম দারুণ উপযোগী। হাজার হাজার টাকা দিয়ে নামী কোম্পানির ভিটামিন সি ক্রিমের পরিবর্তে আমলকি থেঁতো করে সেই রস মুখে গলায় হাতে মেখে নিন। কিছু ক্ষণ রেখে ধুয়ে নিলেই ত্বকের কালচে ভাব উধাও হয়ে যাবে। পর পর কয়েকদিন এই নিয়ম মানলে রোদে পোড়া সংবেদনশীল ত্বক ঝক ঝক করবে।
• আমলকিতে বেদানার থেকে ১৭ গুণ বেশি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট আছে। আমলকি মাখার পাশাপাশি খেতে হবে। ত্বক, চুল-সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্য হয়ে উঠবে গ্ল্যামারাস।
• আমলকি শুকিয়ে গুঁড়ো করে যে জল বা মুলতানি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে মুখে, গলায় হাতে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হবে।
• আমলকি ত্বকের প্রিয়তম বন্ধু। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি ব্রণ, মেচেতার দাগ মুছে ফেলার পাশাপাশি বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। দূষিত পরিবেশে ত্বক ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। নিয়মিত আমলকি ব্যবহারে নিষ্প্রাণ ত্বক, চুল, সবমিলিয়ে গোটা চেহারা সজীব হয়ে ওঠে সুতরাং সঙ্গী করুন আমলকিকে।