কম বয়সে হার্টের অসুখ বাড়ছে। ছবি: আইস্টক।
বছর পঁচিশের সৌম্য। ঝকঝকে রেজাল্ট নিয়ে যোগ দিয়েছে নতুন গবেষণা সংস্থায়। এক মাসের মধ্যেই হঠাৎই ল্যাবে বুকে ব্যথা। হাসপাতালে নিয়ে গেলে বোঝা গেল হার্ট অ্যাটাক।
কলেজে পড়াচ্ছিলেন শ্রেয়শী। হঠাৎই তীব্র চাপ বুকে। কোনও রকমে কাছের নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হলে জানা গেল, মধ্য তিরিশের শ্রেয়শীর মাইল্ড অ্যাটাক হয়েছে।
‘‘অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা সম্প্রতি বেশ বেড়েছে। ইদানীং হার্টের সমস্যা নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই কমবয়সি। জিনগত কারণে বা জন্মগত ভাবে হার্টের অসুখ রয়েছে এমন মানুষ ছাড়া যাঁদের পরে কোনও কারণে হার্টের অসুখ ধরছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ২০-৪০-এর মধ্যের তরুণ-তরুণীরা।’’ মত, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ প্রকাশ হাজরার।
আরও পড়ুন: কেবল ধূমপান নয়, দূষণ থেকেও হয় সিওপিডি, সুস্থ থাকতে কী কী করবেন?
কিন্তু এমনটা হচ্ছে কেন?
কলকাতা শহরের অপর এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবব্রত রায়ের মতে, ফ্যাক্টর একটি নয়। বরং অনেকগুলো। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ, টেনশন, সঙ্গে ফাস্ট ফুডে পেট ভরানো। মাঝেমধ্যেই উঠে সিগারেটে টান। দিনের পর দিন এই অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হতে তাদের শরীরে ঢুকে পড়ছে অল্পস্বল্প ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, ওবেসিটি, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল-ট্রাইগ্লিসারাইডের অসুখ। বিশেষ করে, শারীরিক আকারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা কিছুটা ছোট হওয়ায় তাদের শিরা ধমনীর গঠনও সরু সরু। তাই হার্টে অ্যাটাকে মেয়েদের ভয় বেশি। তার উপর পেশাগত চাপ, টেনশন ছাড়াও যোগ হয়েছে আরও এক প্রবণতা। আজকাল অনেক মেয়েই জীবিকার প্রয়োজনে মা হতে অনেক দেরি করছেন। প্রায় ৩৫ ছাড়িয়ে যাচ্ছে বয়স। এতেও শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
অসুখ এড়াতে ছ’ মাস অন্তর পরীক্ষা করুন হার্টের।
তেমন কোনও লক্ষণ আছে কি?
চিকিৎসকদের মতে, হার্ট অ্যাটাকের সে ভাবে লক্ষণ কিছু হয় না। বুকে চাপ লাগা, ব্যথা এগুলো থাকে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে। অনেক সময় রোগা হলেও অল্প পরিশ্রম বা হাঁটাহাঁটিতে হাঁপ ধরে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে সে সব কিছুই হয় না। হঠাৎই তীব্র ব্যথা শুরু হয়। তবু রোগের ধরণ ও রোগীর অবস্থা বিচার করে অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, দুশ্চিন্তা, হজমের একটানা গোলমাল, শ্বাসে দুর্গন্ধ, কম ঘুম ইত্যাদিকে হার্টের দুর্বলতাও বোঝানোর লক্ষণ বলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: রোজ স্কিপিং রোপ দিয়ে ব্যায়াম করলে মেদ ঝরবে কয়েক গুণ
মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় হার্টের অসুখে বেশি ভোগেন।
রোগ তাড়ানোর দাওয়াই
প্রথমেই ছাড়তে হবে ধূমপান। প্রতি দিনের ডায়েটে যতটা সম্ভব বাড়ির বানানো কম তেল-ঝালের রান্না রাখতে হবে। কম ফ্যাট ও প্রোটিনের ভাগ বেশি রাখতে হবে পাতে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের জোগান বাড়াতে প্রচুর শাকসব্জিও রাখতে হবে খাবারের তালিকায়। নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম শরীরকে ফিট রাখে। একান্তই সময় না পেলে রোজ অন্তত এক ঘণ্টা হাঁটতেই হবে। কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টও ভাল থাকবে। ৩৫-এর আগেই পরিবার পরিকল্পনা করে ফেলা ও গর্ভনিরোধক ওষুধের ব্যবহারে হ্রাস টানা মেয়েদের হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাবে অনেকটাই।