বিদ্যুতের খরচ অনেক কমে যাবে, কয়েকটি কার্যকরী উপায় আছে। প্রতীকী ছবি।
আলো-পাখার জন্যই যে কেবল বিদ্যুতের বিল বেশি আসে তা কিন্তু একেবারেই নয়। এমন বেশ কিছু যন্ত্র বাড়িতে থাকে যেগুলির জন্য সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। মাসের শেষে যে চড়া বিদ্যুতের বিল হাতে পান, তার জন্য দায়ী কিন্তু ওই যন্ত্রগুলিই। তাই বিদ্যুতের বিল কমাতে চাইলে, কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতেই হবে।
কোন কোন যন্ত্রের জন্য বিদ্যুতের বিল বেশি আসছে?
১) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র
সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়। নতুন প্রযুক্তির এসি বেশি বিদ্যুৎ–সাশ্রয়ী। যেমন ইনভার্টার এসি। বছরে অন্তত একবার বাতানুকূল যন্ত্রের ফ্লুইড লেভেল, কুল্যান্ট চার্জসহ যাবতীয় বিষয় পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি।
২) ওয়াটার হিটার
বাতানুকূল যন্ত্রের চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়। শীতকালে এটির ব্যবহার বাড়ে, বিদ্যুতের খরচও অনেক বেশি হয়। থার্মোস্ট্যাট যত বেশি হবে, বিদ্যুতের খরচ তত বেশি হবে। তাপমাত্রা মোটামুটি ৪৮ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
৩) ওয়াশিং মেশিন
ওয়াশিং মেশিন কী ধরনের কিনেছেন তার উপর নির্ভর করবে বিদ্যুৎ খরচ কেমন হবে। অনেক আধুনিক মেশিনে কাপড় শুকনোর ব্যবস্থাও থাকে। ড্রায়ারের জন্যই বিদ্যুতের খরচ বেশি হয়। যদি খরচ কমাতে হয়, তা হলে মেশিনে কাপড় না শুকিয়ে রোদে শুকোন। প্রতি বার কাচার পরে ভাল করে মেশিনটি পরিষ্কার করে নেবেন।
৪) ফ্রিজ
প্রত্যেক বাড়িতেই রেফ্রিজারেটর ২৪ ঘণ্টাই চলে। এই কারণেও বিদ্যুতের বিল ভালই আসে। যদি অনেক পুরনো মডেলের ফ্রিজ হয়, তা হলে বিদ্যুতের খরচ বাড়বে। খরচ কমাতে হলে নতুন মডেলের ফ্রিজ কেনাই ভাল। আর খেয়াল রাখবেন ডিপ ফ্রিজে যেন বরফ জমে না থাকে। নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কারও রাখতে হবে।
৫) ইলেকট্রিক অভেন
খাবার গরম করার অভেনে বিদ্যুতের খরচ বেশিই হয়। মাইক্রোঅয়েভ, ওটিজি বেশি ক্ষণ ধরে ও বারে বারে চললে বিদ্যুতের খরচ বাড়বেই। অনেকেই মাইক্রোঅয়েভ, ওটিজি-তে রান্না করেন অথবা কেক-পুডিং বানান। সে ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে এবং বিদ্যুতের খরচও বাড়ে।
৬) গিজ়ার
সময় হিসেব করে চালাতে হবে। একটানা বেশি ক্ষণ চালু রাখলেই বিদ্যুতের বিল চড়চড় করে বেড়ে যাবে।
৭) হেয়ার ড্রায়ার
বার বার হেয়ার ড্রায়ার চালু করলে বিদ্যুতের খরচ অনেকটাই বাড়বে। প্রতি দিন ৫ মিনিট করে ড্রায়ার চালালেও সপ্তাহে বিদ্যুতের খরচ হবে ১.০৫ কিলোওয়াট প্রতি ঘণ্টা, আর ১৫ মিনিট করে রোজ চালালে সপ্তাহের শেষে গিয়ে বিদ্যুতের খরচ হবে ৩.১৫ কিলোওয়াট প্রতি ঘণ্টা।
বিদ্যুতের খরচ কমানোর কয়েকটি টিপ্স
১) ঘরে এলইডি আলো লাগাতে পারেন। এই আলোয় বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।
২) এয়ার কন্ডিশনারের আউটলেট এমন জায়গায় রাখবেন যাতে তার উপরে রোদ সরাসরি না পড়ে। তবে এসির মেশিন ঢাকার চেষ্টা করবেন না। তা হলে মেশিনটাই খারাপ হয়ে যেতে পারে। বার বার এসি চালু ও বন্ধ করবেন না। তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে রাখাই সবচেয়ে ভাল।
৩)ফ্রিজ দেওয়াল ঘেঁষে রাখবেন না। দেওয়াল থেকে অন্তত ৩-৪ ইঞ্চি দূরত্বে ফ্রিজ রাখবেন। ফ্রিজে গরম খাবারও রাখবেন না। দেওয়াল থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে তবেই ফ্রিজ রাখবেন।
৪) কম্পিউটার বা টিভি স্ট্যান্ডবাই মোডে রেখে দেবেন না।
৫) টিভি বা এসি ব্যবহারের পর সুইচ বোর্ড থেকেও তা বন্ধ করতে ভুলবেন না।
৬) এসি ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রের জন্য প্লাগ ইন টাইমার লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে যতটা প্রয়োজন, ততটাই বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়। সাধারণ রেগুলেটরের বদলে ইলেকট্রনিক ও আধুনিক রেগুলেটর ব্যবহার করুন। এতে বিদ্যুতের খরচ কমে।
৭) পুরনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র তুলনামূলক ভাবে বিদ্যুতের খরচ বা়ড়ায়। তাই বেশি পুরনো (দশ বা বারো বছরের) বৈদ্যুতিক যন্ত্রের জায়গায় নতুন মেশিন ব্যবহার করাই ভাল।