ঘরেই থাকুক এক টুকরো প্রকৃতি। কী ভাবে সাজাবেন অন্দরমহল? ছবি:ফ্রিপিক।
জানলা খুললেই অন্য আবাসনের দেওয়াল। অনেকখানি আকাশ দেখতে হলে লিফ্টে চড়ে উঠতে হয় বহুতলের ছাদে। সবুজ চোখে পড়ে কদাচিৎ। শহর থেকে শহরতলি, ছবিটা কমবেশি একই রকম।
নিজের বাড়ি, খোলা উঠোন, একফালি বাগান, পুকুর— এখন অতীতের স্বপ্নকল্প। দেশলাই বাক্সের মতো বহুতল আবাসনের ছোট্ট ফ্ল্যাটেই বন্দি জীবন। সেই জীবনে একটু খোলা আকাশ কিন্তু আনা যায় অন্দরসজ্জায় খানিক মাথা ঘামালে। ছোট্ট ঘর, একফালি বারান্দাও সাজিয়ে তোলা যায় প্রাণের স্পর্শে। কী ভাবে প্রাকৃতিক ছোঁয়া রাখবেন অন্দরসজ্জায়?
১. সবুজ থাক ভিতর ও বাহিরে
খোলা উঠোন, বাগান যদি না-পাওয়া সম্ভব হয়, তা হলে বৈঠকখানা বা বাড়ির বসার জায়গাটি সাজানো যায় সবুজ এবং ফুলেল ছোঁয়ায়। বারান্দার রেলিং থেকে থাম জড়িয়ে গাছ যাতে ডালপালা মেলতে পারে, তেমনটাও ভাবতে পারেন। সুদশ্য সেরামিক, টেরাকোটার টবে অন্দরে রাখার উপযোগী গাছ বেছে নিন। রাখা যায় অর্কিডও। বারান্দার জন্য অবশ্য ফুল থেকে সব্জি, অনেক গাছই বেছে নেওয়া যায়। ঘরে, বারান্দায় গাছ থাকলে শুধুই তারা সজ্জার অঙ্গ হয় না, বরং নিয়মিত গাছেদের পরিচর্যায় প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগও তৈরি হয়। সবুজের যত্ন মনেও প্রভাব ফেলে।
২. টেরারিয়াম
কাচের পাত্রে তৈরি করা যায় নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র। টেরারিয়াম শুধু গৃহশোভা বাড়ায় না, এ এক জীবন্ত উদ্ভিদ অ্যাকোয়ারিয়াম। টেরারিয়ামে মস, ফার্ন দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। তারা বেড়েও ওঠে। সজীব প্রকৃতির ছোঁয়াটুকু এ ভাবে বৈঠকখানা বা শোয়ার ঘরে রাখতে পারেন।
৩. কাচের জানলায় দৃশ্যমান হোক বহির্জগৎ
আলো-হাওয়া ঘরে এলেও প্রকৃতির সান্নিধ্য খানিক মেলে। অন্দরসজ্জা শিল্পী সৌম্যা লাখামার্জু বলছেন, বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বড় বড় কাচের জানলা রাখতে পারেন। প্রকৃতির আলোয় ঘর আলোকিত হবে এতে। পাশাপাশি কাচ দিয়ে বাইরেও দেখা যাবে। পাশাপাশি ঘরে রকমারি গাছ লাগালেও সবুজের সান্নিধ্য মিলবে। সৌম্যার পরামর্শ, ফ্ল্যাট যদি খুব ছোট হয়, তা হলে উল্লম্ব বাগান তৈরি করতে পারেন। এই ধরনের বাগান দেওয়াল যত উঁচু, সে ভাবেই তৈরি করা যায়। লোহার কাঠামো বানিয়ে তাতে টব ঝুলিয়ে দেওয়া যায়। এতে যেমন সৌন্দর্য বাড়ে, তেমনই বাগানের শখপূরণও হয়।
৪. ফেয়ারি গার্ডেনে সেজে উঠুক ঘর-বার
ছোট্ট ঘর, ফার্ন, মস দিয়ে বাগান। ছবি: ফ্রিপিক।
ছোট গামলায় মাছ রাখলে, পদ্মের চাষ করলেও প্রকৃতির সঙ্গে জুড়ে থাকা যায়, বলছেন অন্দরসজ্জা শিল্পী প্রযক্তা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, আগে বাড়িতে উঠোন, পুকুর থাকত। এখন সেই সুযোগ নেই। তবে ছাদে অথবা বারান্দায় গামলায় বা ছোট সুন্দর চৌবাচ্চা করে তাতে মাছ রাখা যায়। কেউ কেউ বাড়ির ভিতরেই পদ্ম ফোটানোর ব্যবস্থা করেন। অ্যাকোয়ারিয়ামও রাখা যায়। একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ ফেয়ারি গার্ডেনের। টবের মধ্যে মিনিয়েচার, অর্থাৎ বাড়ি, মানুষের ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করে তা সাজিয়ে তোলা যায়।
৫. অন্দরসজ্জায় থাক প্রকৃতির ছোঁয়া
অন্দরসজ্জায় প্লাস্টিকের জিনিস বাদ দিয়ে পরিবেশবান্ধব জিনিসও কাজে লাগাতে পারেন। জুট থেকে কাঠ দিয়ে তৈরি করা ঘর সাজানোর জিনিসও ব্যবহার করতে পারেন। ঝিনুকের জিনিসপত্রও রাখা যেতে পারে। ব্যবহার করতে পারেন টেরাকোটার লণ্ঠন কিংবা বাসনকোসন।