সাধের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতী। করিনা কপূর খান এবং সইফ আলি খানের সেই বাড়িতে এক নজর। ছবি : ইনস্টাগ্রাম।
সইফ আলি খানের উপর দুষ্কৃতীর হামলার তদন্তে নেমে মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ জানতে পেরেছে, অভিনেতার বাড়িতে দুষ্কৃতী প্রবেশ করেছিল পাশের একটি বহুতলের দেওয়াল বেয়ে। মুম্বইয়ের বান্দ্রা পশ্চিমের সেন্ট টেরেসা রোডের উপর ‘সৎগুরু শরণ’ নামের একটি বহুতলের বাসিন্দা সইফরা। তার লাগোয়া অনেকগুলি বহুতল রয়েছে। কিন্তু কড়া নিরাপত্তাবলয় পেরিয়ে পটৌদীর নবাব সইফের সেই বাড়িতে কী ভাবে দুষ্কৃতী প্রবেশ করল, তা এখনও অজানা। মুম্বই পুলিশ এখনও সেই সূত্র খুঁজতেই ব্যস্ত। পরিবার ব্যস্ত দুষ্কৃতীর ছুরিতে জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সইফকে নিয়ে। কিন্তু কেমন সেই বাড়ি যেখানে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল?
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বছর চারেক আগে সইফ এবং করিনা কপূর খান সংসার পাতেন ‘সৎগুরু শরণ’ নামের বহুতলটিতে। ১২ তলা ভবনের চারটি তলা নিয়ে তাঁরা তৈরি করেছেন ‘পটৌদী হাউস’। সেই নাম এবং পটৌদীর নবাবদের প্রতীক আঁটা একটি পিতলের প্লেট শোভা পায় চারতলা বাড়িতে ঢোকার মুখে বড় কাঠের মজবুত দরজার মাঝ বরাবর। এর বাইরে সদা মজুত থাকেন নিরাপত্তারক্ষীরা এবং আছে আধুনিক নজরদারির প্রযুক্তিও।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সে সব তো হল বাইরের কথা, অন্দরটি কেমন?
এই বাড়িতে সবে বছর চারের সংসার, তবে বান্দ্রার ওই পাড়ায় সইফ-করিনা নতুন বাসিন্দা নন। এর আগে কয়েক পা দূরেই ফরচুন টাওয়ারে তাঁরা থেকেছেন প্রায় ১১টি বছর। ২০১৬ সালে ওই বাড়িতেই জন্ম হয় তৈমুরের। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সইফ-করিনার দ্বিতীয় সন্তান জাহাঙ্গীর হওয়ার পরে পরিবার বড় হয়। তখনই সইফ-করিনা সপরিবার চলে আসেন ‘বড়’ বাড়িতে।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
‘সৎগুরু শরণে’ সইফ-করিনার চারতলা বাড়ির প্রতিটি তলের আয়তন ৩০০০ বর্গফুট। তাতে আছে তিনটি করে শোয়ার ঘর, একটি বড় বসার ঘর, একটি রান্নাঘর এবং বারান্দা, স্নানঘর তো রয়েছেই। তার সঙ্গে রয়েছে সইফদের নিজস্ব গ্রন্থাগার, নিজস্ব সুইমিং পুল, তৈমুর এবং জাহাঙ্গীরের আলাদা ঘর, এমনকি, আলাদা খেলার ঘরও। এ ছাড়া, বিলাস সামগ্রীতে মোড়া সইফের বসার ঘরটিও দেখার মতো। বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করে আনা শিল্পকর্ম এবং ছবি দিয়ে সাজানো ঘরটি।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বসার ঘর
গোটা বাড়িটিরই নকশা করেছেন দর্শিনী শাহ। তিনি খ্যাতনামী অন্দরসাজশিল্পী। শুধু সইফের নতুন বাড়ি নয়, তাঁর পূর্বপুরুষদের প্রাসাদ ‘পটৌদী প্যালেস’ও সাজিয়েছেন তিনিই। তাই বান্দ্রার ‘পটৌদী হাউস’-এও রয়েছে প্রাসাদের বিলাসের ছাপ। চকমিলানো সাদা- কালো মার্বেলের মেঝে। ব্রিটিশ স্থাপত্যের কারুকাজ। কাঠের আসবাব এবং অন্দরসজ্জাতেও ব্রিটিশ সংস্কৃতির ছোঁয়া। ঝাড়বাতি থেকে শুরু করে বাতিদান, দেওয়ালে নামী শিল্পীর হাতের আঁকা— সবেতে ভিক্টোরিয়ান আমলের ছাপ।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
খোলা ছাদ ও বারান্দা
নজরকাড়া সেই বসার ঘরের একটি দরজা খুলছে খোলামেলা ছাদে। ছাদের পাঁচিলের উপর খানিকটা বেতের নকশার ব্যারিকেড। তার উপরে অনেকটা খোলা জায়গা। বাইরে থেকে কেউ চাইলে এই পথে প্রবেশ করতে পারে। তবে এমন খোলামেলা ছাদ বা বারান্দা একটি নয়, বান্দ্রার পটৌদী হাউসের প্রায় প্রতি তলেই রয়েছে। প্রতিটি বারান্দাই নানা রকম আসবাবে সাজানো। কোথাও সেরামিকের টব, তো কোথাও ছোট্ট চেয়ার-টেবিলের সেট। কোথাও সোফাসেটে বসার ব্যবস্থা। রাখির দিন ওই সব বারান্দাতেই বসে পটৌদী পরিবারের ভাইবোনেদের আসর। করিনার বন্ধুরা পার্টিও করেন সেখানেই।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
শোয়ার ঘর
তেমন এক খোলা বারান্দার দরজা ঠেলেই ঢুকে পড়া যায় সইফ-করিনার শোয়ার ঘরে। সেই ঘরের সাজসজ্জাও কিছু কম নয়। শৌখিন ল্যাম্পশেড থেকে শুরু করে ছোট-বড় আসবাব, ফুলদানি এবং সইফিনার ছবি দিয়ে সাজানো দেওয়াল।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
তৈমুর-জাহাঙ্গীরের খেলার ঘর
তৈমুর এবং জাহাঙ্গীরের খেলার ঘরটির মেঝে কাঠের। দেওয়ালে হালকা রং। সেখানে গান শোনা, সিনেমা দেখার ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে খেলাধুলোর বড় জায়গাও।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
করিনার সাজঘর
করিনার সাজগোজের ঘরটিও দেখার মতো। সেখানে পোশাক, ব্যাগ, জুতো আর অলঙ্কারই রয়েছে কয়েক কোটি টাকার ।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
স্মৃতির সরণি
দু’টি ফ্ল্যাটের মাঝের করিডরগুলিও সাজিয়েছেন করিনা। সবুজ গাছপালায় মোড়া সেই করিডরের দু’পাশে খোলা জানলা। আর সবুজ গাছগাছালির ঘনঘটা। সাজানো রয়েছে বসার জায়গা এবং সইফ-করিনার ভ্রমণের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি দিয়ে।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
সুইমিং পুল
খোলা ছাদে রয়েছে সুইমিং পুল। ১২ তলার ছাদের উপরে সেই সুইমিং পুল থেকে দৃশ্যমান বান্দ্রার বিস্তৃত প্রাকৃতিক দৃশ্য।
ছবি: সংগৃহীত।
মোট কথা সইফ-করিনার সংসার পাতা আছে একটি গল্প-বলা বাড়িতে। ২০১৩ সালেই ৪৮ কোটি টাকা দিয়ে ওই বাড়ি কিনেছিলেন সইফ। সাজানো সেই বাড়ির নানা স্তরের ঘেরাটোপ পেরিয়ে সেখানেই হয়েছে দুষ্কৃতী হামলা। গুরুতর জখম সইফ। বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার পরে আর এক ভাবে চর্চায় উঠে এল তারকা-দম্পতির সেই বাড়ি।