ছবি : সংগৃহীত।
বোহেমিয়ান এর বাংলা অর্থ হল যাযাবর। সোজা কথায় যাঁদের ‘কূল নাই, কিনার নাই’। পথই ‘ঘর’। সফরই জীবন। তবে সেই ঠাঁই-ছা়ড়া জীবনেরও নিজস্ব ‘স্টাইল’ আছে। গৃহী মানুষেরা সেই জীবন আপন করে নিতে না পারুক, সেই জীবনের ‘স্টাইল’কেই রোম্যান্টিসাইজ করেন। নানা সংস্কৃতির মিলিজুলি পোশাক, কাঁধে ঝোলা, ছেঁড়া-ফাটা-তাপ্পি দেওয়া কাপড়চোপড়, রংচটা জুতো, বেল্ট—যাযাবর যাপনের যাবতীয় অঙ্গকে আপন করে নেন তাঁরা। গৃহীদের কাছে যে স্টাইলের নাম ‘বোহো’।
ছবি: সংগৃহীত।
অন্দরসাজে বোহো
বোহো স্টাইল বহুদিন হল আর শুধু পোশাক-আশাকে সীমাবদ্ধ নেই। বোহো সংস্কৃতি মাত করেছে অন্দরসজ্জার দুনিয়াকেও। অনেকেই এখন গৃহসজ্জায় বোহেমিয়ান কেতাদুরস্ততা আনছেন। কুরুশে বোনা পর্দা, পুঁতির ঝালর, টুপি, ঝুড়ি, রঙিন কার্পেট, আদিবাসী শিল্পকর্ম এমনকি, ফেলে দেওয়া গাছের ডালেও সাজছে তথাকথিত ধনী সমাজের বসার ঘর। নিজের বসার ঘরে আপনিও যদি বোহেমিয়ান বাতাবরণ চান তবে বেতের ল্যাম্পশেড, দেওয়ালের দড়ি বা রঙিন সুতোর শিল্পের পাশাপাশি নজর দিন অতিথিদের বসার জায়গাতে।
ছবি: সংগৃহীত।
বসার জায়গার বোহো সাজ
বসার ঘরের মূল আসবাব বলতে অতিথিদের বসার জায়গাটিই। সেটা দামি সোফা হতে পারে, বেতের মোড়া বা বেতের সোফা সেট হতে পারে, টুল কিংবা কাঠের চেয়ারও হতে পারে। কিন্তু বসার ঘরকে বোহেমিয়ান সাজে সাজাতে হলে প্রথমে নজর দিতে হবে বসার জায়গাতেই।
১। দড়িতে হাতে করে পাকিয়ে গিঁট বেঁধে বেঁধে এক ধরনের দড়ির জাল দেওয়া কাপড় বুনত যাযাবর জাতি। তা দিয়ে কখনও টেবিল ক্লথ বানানো হত। কখনও তোয়ালে, কখনও আবার শীতে গা-গরম রাখার কম্বলও। হাতে বোনা ওই দড়ির বুনন পদ্ধতির নাম ম্যাক্রামে। সোফার উপরে অমন একটা ম্যাক্রামের জাল বুননের কাপড় সুন্দর ভাবে ফেলে রাখলেই বসার ঘরে নিমেষে ভোল বদলাবে।
ছবি: সংগৃহীত।
২। শান্তিনিকেতনে রং-বেরঙের সিল্কের কাপড় জুড়ে তার উপর কাঁথার কাজ করে উড়নি তৈরি করা হয়। সেই উড়নি বিক্রি হয় খোয়াইয়ের হাটে, পৌষ মেলায়, ভুবনডাঙার মাঠের উল্টো দিকের গুমটি দোকানঘরগুলোতেও। কাঁথাকাজের সেই উড়নিকেও বসার জায়গা সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন। আবার এক রঙা কাপড়ে কাঁথা স্টিচে নানারকম নকশা করা চাদর, কুশনের ঢাকা দিয়েও সাজাতে পারেন।
৩। বাউল গায়কেরা অনেক সময় বিভিন্ন রকমের কাপড় জুড়ে বানানো পোশাক পরেন। কলমকারি থেকে শুরু করে আজরখ, সাধারণ ব্লক প্রিন্টের কাপড় এমনকি, শার্ট-প্যান্টের ছিটের কাপড়ও জোড়া দিয়ে তৈরি হয় সেই কাপড়। জোড়াতালি দেওয়া সেই ধরনের কাপড় দিয়েও সাজানো যেতে পারে বসার জায়গা।
ছবি: সংগৃহীত।
৪। বাঁধনি, টাই অ্যান্ড ডাই, লেহরিয়া প্রিন্ট— ভারতে ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের রঙিন নাকশার কমতি নেই। সুতোর কাজের মধ্যে রয়েছে কচ্ছের স্টিচ, কাশ্মীরি সুতোর কাজ, রাজস্থানের কাচ আর রঙিন সুতোর কাজ, লখনউয়ের চিকনকারিও। ওই সমস্ত ধরনের রঙিন এবং বা সুতোর নকশা করা কাপড় দিয়েও সাজাতে পারেন।
৫। উত্তর-পূর্ব ভারতে রাজ্য গুলিতে প্রচলিত লাল-সাদা-কালো সুতোর বুননে নানারকম জ্যামিতিক নকশার উলের চাদরও হতে পারে এই শীতে বসার ঘরের সজ্জার অঙ্গ।