এ বার দোলে রং খেলা কতটা নিরাপদ? দোলে আর যা-ই হোক, নিয়ম মানার বিশেষ বালাই থাকে না। ছোটদের ক্ষেত্রে তো নয়ই। এ দিকে অতিমারি নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে। সংক্রমণের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে নিয়ত। বুধবার কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশিকা অনুযায়ী, চাইলে পরিস্থিতি বুঝে স্থানীয় প্রশাসন দোল খেলায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারে। ভ্যাকসিন এসে গেলেও এবং তা নিলেই যে নিশ্চিন্তে সকলের সঙ্গে দোল খেলা যাবে, এমন ভাবনারও কোনও অবকাশ নেই। দোল খেললে সংক্রমণের ভয় কতখানি? ছোটদের ক্ষেত্রেও কতটা সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি? জল থেকেই বা সংক্রমণের ভয় রয়েছে কতটা?
আনন্দ ঘরে, বাইরে নয়
সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণের আশঙ্কা যেহেতু আবার মাথাচাড়া দিয়েছে, তাই এ বছর বাড়ির বাইরে দোল খেলতে না যাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বাইরে গেলে বড়জোর বড়দের পায়ে একটু আবির ছোঁয়ানো যেতে পারে, তা-ও মাস্ক পরে, কারণ এতে দুই ব্যক্তিকে কাছাকাছি আসতে হচ্ছে। পা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। আবির ছোঁয়ানো হয়ে যাওয়ার পরে পা ধুয়ে ফেলাই বাঞ্ছনীয়। মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মতে, পরিবারের যাঁদের সঙ্গে আমরা সময় কাটাই অর্থাৎ মাস্কহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়ানোর পরিধির বাইরে রং খেলতে না যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। ‘‘মাস্ক পরে, হাত স্যানিটাইজ় করে কেউ দোল খেলে না। কোভিডের সুরক্ষাবিধি মেনে দোল খেলা সম্ভব নয়। এ দিকে সুরক্ষিত না হয়ে এই মুহূর্তে বাইরে যাওয়া একেবারেই উচিত নয়। সংক্রমণের হার আগের চেয়ে বেড়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিন নিয়ে সব কিছু করা চলবে, এমন ধারণাও ভুল,’’ বললেন ডা. তালুকদার।
ভ্যাকসিন নিলেই নিশ্চিন্ত নয়
কেন ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিও নিশ্চিন্তে ভিড়ে মিশতে পারবেন না, সে সম্পর্কেও সচেতন করলেন ডা. তালুকদার। কারও ভ্যাকসিন নেওয়া রয়েছে মানেই যে সেই ব্যক্তি আক্রান্ত হবেন না, সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা নেই। ‘‘ভ্যাকসিন মানে একটা বর্ম, যাতে ভাইরাস শরীরে ঢুকলেও সে বিস্তার না করতে পারে। কিন্তু কেউ হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময়ে সামনে থাকলে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করবে। অন্তত গলা পর্যন্ত যাবেই। তবে ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে সেখান থেকে শরীরের মধ্যে ঢুকে ছড়াতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির হালকা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তার দ্বারা অন্য কেউ সংক্রমিত হতে পারে অর্থাৎ ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তিও করোনার বাহক হতে পারে,’’ বললেন তিনি। সামাজিক সচেতনতা এ ক্ষেত্রে জরুরি।
ছোটদের ছুটোছুটিতে মানা
করোনা জলবাহিত রোগ না হলেও কোনও আক্রান্তের সর্দি-কাশির ড্রপলেটে যদি রং গোলা জল দূষিত হয়, তা হলে বাকিদের ক্ষেত্রে তা আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার একই পিচকারি বা পুল অনেকে মিলে শেয়ার করলেও সেই সম্ভাবনা থাকে। আবির বা রং খেলা মানেই তা মুখে বা মাথায় মাখানো। এ দিকে কোভিডের সতর্কবিধিতে সবচেয়ে আগে মুখ ও মাথা ঢেকে চলার কথাই বলা হচ্ছে। ছোটদের মাস্ক পরে বাইরে খেলতে পাঠালেও অভিভাবকেরা কিছুক্ষণ পরে হয়তো দেখলেন, মাস্ক খুলে তারা হুড়োহুড়ি করছে। শিশুদের খেলা থেকে আটকে রাখা যতটা কঠিন, ততটাই জরুরি এ সময়ে, পরামর্শ শিশুবিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষের। ‘‘খেলার সময়ে বাচ্চাদের মুখে বা পেটে জল যাবেই। তা ছাড়া রং বা আবির খেলার সময়ে বাচ্চারা একে অন্যকে স্পর্শও করবে। শুধু কোভিডের আশঙ্কাই নয়, সে ক্ষেত্রে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগের সম্ভাবনাও থেকে যায়। কোনও শিশু উপসর্গহীন হতে পারে। সে অন্যকে সংক্রমিতও করতে পারে। তাই ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয় একেবারেই,’’ বললেন তিনি।
মৃত্যুহার এখনও শূন্য হয়ে যায়নি। আক্রান্তের হারও বাড়ছে। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে এ বছর দোল খেলার ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল। স্পর্শের এই উৎসবকে যদি আগামী বছরের জন্য তুলে রাখা যায়, লাভ বই ক্ষতি তো নেই!
(প্রেসে যাওয়ার আগে পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী)