উপকূলের কাছাকাছি এলাকায় থাকলে কী কী সতর্কতা মেনে চলবেন? প্রতীকী ছবি।
বুধবার রাতেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ‘ডেনা’। প্রতি ঘণ্টা গতি বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে উপকূলবর্তী এলাকার দিকে। আবহবিদেদের অনুমান, অতি শক্তিশালী হয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার বা ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। গত কয়েক দিন থেকেই পুরী, দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর ইত্যাদি উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পর্যটকদের হোটেল খালি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যদি এই সময়ে পুরী, দিঘা বা উপকূলবর্তী কোনও এলাকায় ঘুরতে গিয়ে আটকে পড়েন, তা হলে আতঙ্ক না করে কী কী সাবধানতা নেবেন জেনে রাখুন।
নিরাপদ জায়গায় থাকুন
ঘূর্ণিঝড় যেখানে আছড়ে পড়ে, তার চার পাশেই সাধারণত তাণ্ডবলীলা বেশি দেখা যায়। একেবারে সমুদ্রের ধারের কোনও হোটেলে থাকলে জরুরি জিনিসপত্র নিয়ে সেখান থেকে নিরাপদ জায়গায় সরে যান। সরকারি ‘সাইক্লোন সেন্টার’ বা সমুদ্র থেকে দূরে কোনও হোটেলে বা গেস্টহাউসে আশ্রয় নিন।
জরুরি জিনিস গুছিয়ে রাখুন
টাকা-পয়সা, জরুরি নথি, আধার, রেশন-প্যান কার্ডের মতো জরুরি জিনিস আগেই গুছিয়ে রাখুন। মোটা প্লাস্টিকের ব্যাগে সমস্ত জিনিস রাখবেন। সঙ্গে রাখতে হবে অন্তত দু-দিনের জন্য শুকনো খাবার, যেমন চিঁড়ে, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট। শিশু থাকলে তার জন্য পরিস্রুত জল ও খাবারের ব্যবস্থা আগেই করে রাখুন।
প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও রাখতে হবে হাতের কাছে। প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্সে অবশ্যই রাখতে হবে ব্যান্ডেজ, ছুরি, কাঁচি, অ্যান্টিসেপটিক মলম, ব্যথানাশক স্প্রে, পুড়ে যাওয়ার ওষুধ, অ্যান্টাসিড, প্যারাসিটামল, সর্দিকাশি, জ্বরের ওষুধ। ছোট, বড়, গোল... নানা আকারের ব্যান্ডএড রাখুন। তুলো, স্টেরাইল গজ, ব্যান্ডেজ, লিউকোপ্লাস্ট বা মেডিক্যাল টেপও রাখুন। জরুরি হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ারও। হার্টের সমস্যা থাকলে সরবিট্রেট জাতীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতেই হবে। যদি ডায়াবিটিস থাকে তা হলে তার ওষুধ, প্রয়োজনীয় ইনসুলিন সঙ্গে নিন। অবশ্যই সঙ্গে রাখুন চকোলেট। আচমকা রক্তে শর্করা কমে গেলে চকোলেট খেয়ে নিতে হবে। অ্যালার্জির ধাত থাকলে তার জন্য ওষুধ ও রক্তচাপের ওষুধ অবশ্যই রাখতে হবে।
সমুদ্রের ধারেকাছে যাবেন না
ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে উত্তাল সমুদ্র দেখতে কেমন লাগে তা দেখার ও ছবি-ভিডিয়ো করার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। কেউ কেউ অ্যাডভেঞ্চারের জন্যও বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতেও সমুদ্রের কাছে যাওয়ার বা সমুদ্রে স্নান করতে নামার সাহস দেখান। এতে বিপদ আরও বাড়তে পারে। ঝড়ের সময়ে সমুদ্রের কাছে গিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা বা সমুদ্রস্নানের দুঃসাহস দেখালে অঘটন ঘটতে দেরি হবে না।
ঘূর্ণিঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতে সুরক্ষার জন্য বাড়িতে থাকতে হলেও, দরজা-জানলা বন্ধ করে নিজেদের মতো খাওয়াদাওয়া আড্ডা নিয়ে সময় কাটাতে পারেন, তাতে কোনও বাধা থাকছে না। বাইরে বেরিয়ে অ্যাডভেঞ্চারের চেষ্টা ‘নৈব নৈব চ’।
বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র সামলে রাখুন
এসি, টিভি, রেফ্রিজ়ারেটর, মাইক্রোঅয়েভ অভেন, গিজার, কম্পিউটারের প্লাগ খুলে রাখুন। যতটা সম্ভব বিদ্যুৎ সংযোগের পরিষেবা কম ব্যবহার করুন। সাধারণত উপকূলের কাছাকাছি এলাকাগুলিতে যে হেতু ঝড়ের দাপট বেশি হয়, তাই বিদ্যুৎ সংযোগ খুব তাড়াতাড়ি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নেটওয়ার্কের সমস্যাও দেখা দেয়। তাই মোবাইল, ল্যাপটপ বা ইমার্জেন্সি লাইট আগে থেকেই চার্জ দিয়ে রাখবেন। ঝড়ের সময়ে মোবাইল ব্যবহার করবেন না। এমনকি বজ্রপাতের ছবি তোলা থেকেও বিরত থাকুন।
ঝড় থামলেও বাইরে বেরোবেন না
ঝড়ের দাপট থেমে গেলেও কৌতূহলে বাইরে বেরোবেন না। ঘূ্র্ণিঝড়ে রাস্তাঘাটে গাছ উপড়ে পড়ে থাকে বা তার ছিঁড়ে রাস্তায় ছড়িয়ে থাকে। তাই বিপদ হতে পারে। কম সময়ে প্রচুর বৃষ্টিতে জলও জমে যায়। আর এই জমা জলেই লুকিয়ে থাকে বিপদ। ঝড়ে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যদি জলে পড়ে, সেই জলে পা দিলেই তড়িদাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।