Heart Disease

Heart Block: আকস্মিক বিপদ ডেকে আনতে পারে হার্ট ব্লক

শারীরিক অবস্থা, বয়স নির্বিশেষে নানা কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক, যার অন্যতম কারণ হার্ট ব্লক। সচেতন হবেন কী ভাবে?

Advertisement

সায়নী ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২২ ০৯:০০
Share:

নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পরিমিত আহার, যোগাভ্যাস ও কোনও মাদকাসক্তি ছাড়াই পঞ্চাশের কোঠায় হার্ট অ্যাটাক প্রাণ নিয়ে নিল সঙ্গীতশিল্পী কেকে-র। মঞ্চে পারফর্ম করতে করতেই অসুস্থ বোধ করেছিলেন তিনি। অতিরিক্ত ঘাম, বুকে ও শরীরের অন্যত্র ব্যথার উপসর্গ ছিল। তা গ্যাসের ব্যথা ভেবে হজমের ওষুধ খেয়েছিলেন। পরে অবস্থার অবনতি হতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। জানা গিয়েছে, তাঁর আর্টারিতে ব্লকেজ ছিল আগে থেকেই।

Advertisement

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে কেকে-র মৃত্যু তুলে দিয়েছে অনেকগুলি প্রশ্ন। তার মধ্যে প্রধান হল, নিয়মানুবর্তী জীবনযাপন সত্ত্বেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কতখানি থেকে যায়? দ্বিতীয়ত, লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র কী করণীয়, যাতে অ্যাটাক সত্ত্বেও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব রোগীকে? হার্টের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আগের তুলনায় কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। আগে ছেলেমেয়েরা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসত বয়স্ক বাবা-মাকে। আর এখন দেখা যায় বিপরীত ছবিটা। কমবয়সিদের মধ্যে হার্ট ব্লকেজ ও তার থেকে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ছে কেন? জীবনযাত্রার উপরে কতটা নির্ভর করে হার্টের সমস্যা?

হার্টের সমস্যার সূচনা

Advertisement

কার্ডিয়োলজিস্ট ডা. কৌশিক চাকী জানালেন, একজন শিশুর জন্মের সময় থেকেই তার হৃদ্‌যন্ত্রে কোলেস্টেরল জমা হতে শুরু করে, স্বাভাবিক নিয়মেই। এ বার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাপনের ধরন অনুযায়ী সেই মাত্রা কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেটাই আসল। আর্টারির মুখ সরু হয়ে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই তার মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হবে। ‘‘এমনিতেই ইউরোপীয়দের তুলনায় দক্ষিণ-এশীয়দের হার্টের অসুখ, ডায়াবিটিসের প্রবণতা তিন-চার গুণ বেশি হয়। জেনেটিক গঠনের কারণে তো বটেই, পাশাপাশি ফুড হ্যাবিটও অন্যতম কারণ। আর এখনকার দিনে বেশির ভাগ হার্টের সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত, সেডেন্টারি লাইফস্টাইল,’’ বললেন ডা. চাকী।

হার্ট ব্লকেজ কত ধরনের?

জন্মগত ভাবে কারও হার্টে ব্লক (কনজেনিটাল হার্ট ব্লক) থাকতে পারে। এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ব্লকেজ ডেভেলপ করতে পারে। হার্ট ব্লক প্রধানত দু’ভাবে হয়। প্রথমত, হার্টের ধমনীতে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত বা স্তব্ধ হয়ে যায়, যাকে হার্ট অ্যাটাক বা করোনারি থ্রম্বোসিস বলা হয়। দ্বিতীয়ত, হার্টের জন্মগত গতি নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে তাকে বলা হয় অ্যারিদমিয়া। এর ফলে হার্টবিট হয় অতি দ্রুত হয়ে যায়, অথবা খুব স্লথ। এই দু’ধরনের অবস্থাতেই দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে প্রাণহানি ঘটতে পারে।

স্লথ হার্ট বিটের মধ্যে ফার্স্ট, সেকেন্ড ও থার্ড ডিগ্রি— সাধারণ ভাবে এই তিনটি ধরনের ব্লকেজ লক্ষ করা যায়। প্রথম ক্ষেত্রে স্কিপড হার্টবিট জাতীয় সামান্য লক্ষণ দেখা দেয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রের ব্লকেজে ভেন্ট্রিকল পর্যন্ত সিগন্যাল পৌঁছতে পারে না। তৃতীয় ধরনের ব্লকের ক্ষেত্রে হার্টের আপার বা লোয়ার চেম্বারে সিগন্যাল পৌঁছয় না। প্রথম ক্ষেত্রে না হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধরনের ব্লকের জন্য পেসমেকারের সাহায্য আবশ্যিক।

লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হতে হবে

ডা. চাকীর কথায়, বুকে চাপ ধরলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্যাসের ব্যথা ভেবে হজমের ওষুধ খেয়ে নেন অনেকে। আর তাতেই রোগী প্রাণসংশয়ের দিকে চলে যেতে পারে। যে লক্ষণগুলি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হতে হবে, তা হল—

” অ্যানজাইনা, অর্থাৎ বুকে ব্যথা বা চাপ ধরা।

* বুকের ব্যথা চোয়ালে, হাতে, পেটে বা অন্যত্র ছড়িয়ে যাওয়া।

* অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।

* শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া ও মাথা ঘোরা।

* কোনও সাধারণ কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়া বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে গিয়ে হাঁফ ধরা।

লক্ষণগুলি প্রকট হলেই রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ‘‘হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা বাড়িতে সম্ভব নয়। গোল্ডেন আওয়ারের প্রতিটা মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়কার চিকিৎসায় রোগীকে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর এখানেই দেরি করে ফেলেন অনেকে,’’ সাবধান করলেন ডা. চাকী।

জরুরি স্ক্রিনিং

হার্ট ব্লকেজ ধরা পড়লে সে ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সময় থাকতে। অনেকের ধমনীতে ব্লকেজ হয় ধীরে ধীরে। আবার কারও ক্ষেত্রে হঠাৎ ক্লট বার্স্ট করে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, যা প্রাণঘাতী। ইমোশনাল স্ট্রেসও হার্টের গতি আচমকা এমন বাড়িয়ে দিতে পারে যে, হার্ট আর পাম্প করতে পারে না। সে ক্ষেত্রেও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট মৃত্যু ডেকে আনে।

লাইফস্টাইলে পরিবর্তন, ওজন কমানো, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও একটা বয়সের পরে নিয়মিত মনিটরিং প্রয়োজন। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে কারও কমবয়সে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়ে থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি। ইকোকার্ডিয়োগ্রাম, লিপিড প্রোফাইল জাতীয় রুটিন চেক-আপ তো রয়েছেই, পাশাপাশি সুগার, প্রেশার, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ইত্যাদি নজরে রাখতে হবে। ‘‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা রয়েছে, এমন লক্ষণযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম স্কোর স্ক্রিনিং কিংবা সিটি অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফির মতো টেস্ট করাতে হবে। কার্ডিয়োলজিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ চালু করা যেতে পারে,’’ বললেন ডা. চাকী।

হার্ট ও ফিটনেস

জিম করতে করতে বা খেলার মাঠে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে প্রাণসংশয় হয়েছে, এমন উদাহরণ প্রায়ই চোখে পড়ে সংবাদ-শিরোনামে। এমন খবরে প্রথমেই প্রশ্ন আসে, কোনও কমবয়সি ফিট ব্যক্তির কী করে এমনটা হল। ডা. চাকী জানালেন, স্পোর্টসপার্সন বা ফিট ব্যক্তিরও হার্টে ব্লক থাকতে পারে। হার্টের মাংসপেশির সমস্যা, হৃদ্‌স্পন্দনের সমস্যা বা জেনেটিক কারণে অকস্মাৎ হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুও হতে পারে। হার্ট ভাল রাখার জন্য আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে যা করণীয়, ততটাই করা যেতে পারে। ধূমপানের অভ্যেস ত্যাগ করা আবশ্যিক।

জরুরি সচেতনতাও। সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে মাসাজ ও অন্যান্য প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করে দিলে প্রাণনাশ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement