শর্করার শক্তি, প্রোটিনের পুষ্টি, প্রয়োজনীয় খনিজের সরবরাহ... এ সবই পাওয়া যায় অমরন্থে। তাই এটি একটি সুপারফুডও বটে। এটি কিন্তু অতি প্রাচীন একটি শস্য। ইনকা, মায়া, অ্যাজ়টেক সভ্যতার সময় থেকেই প্রধান খাবার হিসেবে অমরন্থের চল। তবে এর উৎপাদন কম হওয়ায় তা ক্রমশ হারাতে বসেছিল খাদ্যতালিকা থেকে। এখন হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে এর উৎপাদন আবার ফিরিয়ে এনেছে অমরন্থকে।
কেন খাবেন?
অমরন্থ শতকরা ১০০ ভাগই গ্লুটেন-ফ্রি। তায় আবার এক কাপ অমরন্থে ৪৬ গ্রাম কার্ব, প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ১০-১৪ গ্রাম, যা কিনোয়ার চেয়েও বেশি। সিউডোসিরিয়ালে যদি এত পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, তা হলে এক খাবারে দুই কাজই হয়ে যায়। একই সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ়, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলে খনিজের উৎস হিসেবেও অমরন্থ খুব ভাল। খাদ্যগুণ বজায় রাখতে প্রত্যেক দিনই কিছু পরিমাণ অমরন্থ রাখতে পারেন খাদ্য তালিকায়।
রোগ প্রতিরোধে
• কিডনির অসুখে আক্রান্ত হলে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ অনেক সময়েই চিকিৎসকেরা কমিয়ে দেন। তাই সহজপাচ্য বলে অমরন্থ রাখতে পারেন রোজকার খাবারে। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনও যেমন পাবেন, কিডনির উপরে চাপ পড়বেও কম।
• হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিও অমরন্থ খেতে পারেন। কারণ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে এই শস্যের জুড়ি মেলা ভার।
• অন্য দিকে পেটের সমস্যা বা গ্যাসট্রাইটিস জাতীয় রোগ থাকলে চিকিৎসকেরা গ্লুটেন-ফ্রি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সে ক্ষেত্রেও অমরন্থ খুব ভাল কাজে দেয়। এতে ফাইবার পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে। ফলে কোষ্ঠ পরিষ্কার থাকে। একই সঙ্গে হজম সহজ করে, ব্লোটিং কমায়। রোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
• এক কাপ অমরন্থে যে পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ় থাকে, তা প্রত্যেক দিনের জন্য যথেষ্ট। ডাইজেস্টিভ এনজ়াইম উৎপাদনে ম্যাঙ্গানিজ় খুব দরকার। এর ফলে রক্তে শর্করার সমতা বজায় থাকে। তাই ডায়াবিটিক রোগীদের জন্যও এটি খুব উপকারী।
• প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম থাকায় হাড়ও মজবুত রাখে এই শস্যদানা। ফলে অস্টিয়োপোরোসিস বা অস্টিয়ো আর্থ্রাইটিসের রোগীদের জন্য অমরন্থ খুব ভাল।
• চাল বা গমের জায়গায় অন্যতম সিরিয়াল হিসেবেই এর ব্যবহার। তাই একে সিউডোসিরিয়ালও বলা হয়। যেহেতু এতে অনেকটা ফাইবার ও প্রোটিন থাকে, তাই ওজন কমাতে সিরিয়ালের পরিবর্তে অমরন্থ খেতে পারেন। এতে শরীরে শক্তিরও জোগান হবে, আবার পেশির গঠনও ভাল হবে। তাই ওবেসিটি কমাতেও এই সুপারফুড বন্ধুসম।
কী ভাবে খাবেন
• ফলের স্মুদি বানিয়ে তাতে ১-২ টেবিল চামচ অমরন্থ যোগ করতে পারেন। খেতে ভালই লাগবে।
• পাস্তা, চাউ মিনের উপরে ছড়িয়ে দিয়েও খেতে পারেন অমরন্থ সিড্স।
• সুপ বা স্টুয়ের উপরেও ছড়িয়ে নিতে পারেন।
• অমরন্থ শুকনো খোলায় নেড়েচেড়ে, মিক্সিতে গুঁড়িয়ে নিন। তা জল দিয়ে মেখে মণ্ড বানিয়ে রুটি তৈরি করেও খেতে পারেন।
• বাজারচলতি অনেক পাওয়ার বারে অমরন্থ থাকে। কিন্তু তা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ।
• অমরন্থ জল দিয়ে সিদ্ধ করে ভাতের মতো রান্না করে নিতে পারেন। তার জন্য এক কাপ অমরন্থ ও তিন কাপ জল নিয়ে ১৫-২০ মিনিট ফোটাতে হবে। তার পরে জল ছেঁকে নিন। ভাতের মতোই ডাল, তরকারি, মাছের ঝোল দিয়ে খেতে পারেন। কিন্তু এটি ভাতের মতো একেবারে নরম হয়ে যায় না।
একটু কচকচে থাকে, তবে ভিতরটা সিদ্ধই হয়।
• এ ছাড়া পোলাও, রিসতো বানানো যায় এটি দিয়ে। তার রেসিপি দেওয়া হল নীচে...
অমরন্থ ভেজিটেবল পোলাও
উপকরণ: অমরন্থ ১ কাপ, জল ৩ কাপ, ঘি ২ টেবিল চামচ, সাদা তেল ২ টেবিল চামচ, গাজর কুচি ১ টেবিল চামচ, বিনস কুচি ১ টেবিল চামচ, কড়াইশুঁটি ১ টেবিল চামচ, টম্যাটো ১টি, পেঁয়াজ ১টি, রসুন কুচি আধ চা চামচ, নুন স্বাদ মতো, মধু আধ চা চামচ।
প্রণালী: প্রথমে জলে অল্প নুন দিয়ে ফোটান। ফুটন্ত জলে অমরন্থ দিয়ে মিনিট পনেরো সিদ্ধ করে নিন। অন্য দিকে প্যানে সাদা তেল দিয়ে তার মধ্যে রসুন কুচি ও পেঁয়াজ কুচি দিন। ভাজা হলে টম্যাটো চটকে ক্বাথ দিন। এর পরে একে একে সব আনাজপাতি দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। মিনিট পাঁচেক পরে অল্প জল দিন। আনাজ ভাল সিদ্ধ হলে অমরন্থ দিন। এ বার স্বাদ মতো নুন ও মধু দিয়ে নাড়াচাড়া করে উপর থেকে ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
অনেকটা ডালিয়া ও কিনোয়ার মতো খেতে হয় অমরন্থ। তবে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। অমরন্থ রোজই খাওয়া যায়। যদিও দাম বেশি। পাইকারি বাজার থেকে কিনলে একটু কম দামে পাবেন। তবে সুস্থ থাকতে সুষম আহারে একটু খরচ হলে ক্ষতি কী!
তথ্য সহায়তা: ডায়াটিশিয়ান প্রিয়া আগরওয়াল ও কোয়েল পালচৌধুরী