কিছু স্বভাব বদলেই ঠেকিয়ে দেওয়া যায় করোনা। ছবি: শাটারস্টক।
নাক-মুখ ঢেকে রখলেই নাকি বিপদ তাড়ানো যাবে! এই ধারণা থেকেই করোনা-আতঙ্কে মাস্ক পরা বা কেনার হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছে। ওষুধের দোকানে মাস্ক ক্রমেই বাড়ন্ত। এন৯৫ মাস্ক পরতেই হবে, এমন ভাবছেন অনেকেই। কিন্তু চিকিৎসকরা কী বলছেন? আদৌ কি করোনা রুখতে খুব দামি এই মাস্কই প্রয়োজন?
বক্ষ ও সংক্রামক অসুখ বিশেষজ্ঞ সুমিত সেনগুপ্তের মতে, রোগীকে নাড়াঘাঁটা না করলে বা তার সঙ্গে দিনের পর দিন না থাকলে এই এন ৯৫ মাস্কের কোনও প্রয়োজনই নেই। চিকিৎসক-নার্সরা এই ধরনের মাস্ক পরে রোগীর কাছে যান কারণ তাঁরা রোগীকে নাড়াঘাঁটা করেন। তাঁদের রোগীর এক মিটারের মধ্যে গিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ থাকতে হয়। সাধারণ মানুষের বেলায় কিন্তু সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্কই যথেষ্ট।
কেন যথেষ্ট? বিশেষ এন৯৫ মাস্কে সমস্যাই বা কোথায়? ব্যাখ্যা করলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। মাস্ক বাছাই ও তার ব্যবহার নিয়েও সচেতন করলেন। তাঁর মতে, এই এন৯৫ মাস্ক বায়ুনিরুদ্ধ হয়। এটি একেবারেই বেশি ক্ষণ পরে থাকা যায় না। রোগীর এক মিটারের মধ্যে চিকিৎসকদের আসতে হয় ও নাড়াঘাঁটা করতে হয়। সাধারণ মানুষ এই মাস্ক বেশি ক্ষণের জন্য পরে ঘুরে বেড়ানোর সময় মুখের অঞ্চলে ঘাম হবে, নাক চুলকাবে, কানের কাছে টান পরবে, চশমা থাকলে তা শ্বাসের বদ্ধ হাওয়ায় ঝাপসা হবে। মাস্ক এক জায়গায় থাকবে না। নেমে বা উঠে যাবে, কখনও পাশেও সরে যেতে পারে। এতে বার বার মাস্ক ঠিক করতে গিয়ে অনেকেই হাত দিয়ে ফেলেন মাস্কে। মাস্কের গায়ে বার বার হাত দিলে মাস্কে লেগে থাকা জীবাণু হাতে লেগে যায়। এ বার ওই হাত যেখানে লাগবে, সেখান থেকে ছড়াতে পারে সংক্রমণ। ফলে মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তার ঘরেই ফাঁকি থেকে যায়।
আরও পড়ুন: মদ্যপান করলে বা সারা শরীরে অ্যালকোহল ছড়ালেই কি করোনা-হানা ঠেকানো যাবে?
ব্যবহার করুন সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক। বাঁ পাশে সার্জিক্যাল মাস্ক, ডান পাশে এন ৯৫ মাস্ক।
এ দিকে বার বার মাস্কে হাত দেওয়ার ভুল করেও এই মাস্ক পরে সকলেই ভাবেন, তিনি সুরক্ষিত। ফলে কোথাও একটা রিল্যাক্সেশন আসে। অন্যের হাঁচি-কাশিতে তিনি আর ততটা সচেতন থাকেন না। ধরেই নেন, প্রয়োজনীয সুরক্ষাবলয় ভেদ করে রোগ ঢুকতে পারবে না শরীরে। এই ধরনের মাস্ক যেহেতু বেশি ক্ষণ পরে থাকা যায় না, তাই কিছু ক্ষণ অন্তর তা খুলে ফেলতে হবে। রোদ উঠলে গরমের ভাবও বাড়বে। ফলে কাজের কাজ তেমন হবে না।
তা হলে কি মাস্ক বাদ?
মাস্ক পরতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ভিড়ভাট্টা বা কোনও বড় জমায়েতে বেরলে সার্জিক্যাল মাস্ক পরুন। তার চেয়েও জরুরি কাফ এটিকেট মেনে চলুন।
কাফ এটিকেট আবার কী?
কোভিড-১৯-এর ভাইরাস যখন তখন বাতাসে ভেসে বেড়ায় না। এটি বায়ুবাহিত অসুখ নয়। হাঁচি-কাশির সময় আক্রান্ত রোগীর নাক-মুখ থেকে নির্গত ড্রপলেটসের মধ্যেই এর জীবাণু আবদ্ধ থাকে। তাই হাঁচি-কাশির সময় মেনে চলতে হবে বিশেষ নিয়ম।
বাহু ঢেকে হাঁচুন বা কাশুন।
হাঁচি কাশির সময় তালু নয়, বাহু ঢেকে হাঁচুন বা কাশুন। কারণ তালু ঢেকে হাঁচলে বা কাশলে ড্রপলেটস হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যায়। বাহু ঢেকে হাঁচলে বা কাশলে সে ভয় থাকে না। এ ছাড়া অন্যান্য কাজেও হাতের তালু ব্যবহার করা হয়। তালু ঢেকে হাঁচলে কাশলে জীবাণু অন্যত্র ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
আরও পড়ুন: করোনা থেকে বাঁচতে এই ভাবে হাত ধুয়ে নিন, মেনে চলুন এ সব সতর্কতা
আর কী করব?
চিকিৎসকদের মতে, বেসিক কাফ এটিকেট মেনে চলা ও বার বার ইথাইল অ্যালকোহল বেসড হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে হাত কচলে ধোওয়াই যথেষ্ট। বাইরে থেকে বাড়ি ফিরে, খাওয়ার আগে ও খাওয়ার পরে হাত ধুয়ে নিন ভাল করে। নেহাত বাইরে বেরতে হলে, রোগীর সঙ্গে বাস করলে বা চিকিৎসকের কাছে গেলে একটা সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক পরে থাকুন। এটুকু করলেই অসুখ এড়ানো অনেকটাই সম্ভব হবে।
অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।