সংসারের খরচ কমাতে কিছু কৌশল মেনে চলুন। ছবি: আইস্টক।
মাগ্গিগন্ডার বাজারে নিজের খরচ, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, দোকান-বাজার, যাতায়াত… খরচ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যাবতীয় সংসার খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা মধ্যবিত্তের কাছে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। বছর শেষের ইনক্রিমেন্টের অঙ্কেও সব সময় পাল্লা দেওয়া যায় না প্রয়োজনীয় চাহিদাটুকুর সঙ্গে।
এর মধ্যে ইএমআই তো রয়েছেই। তাই সংসার খরচের খাতায় কাটছাঁট করার কৌশল না জানলে মাসের শেষে টানাটানিতে পড়তে হতে পারে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রেখেই সাজাতে হবে খরচের খাত। দেশের মতো সংসারও যদি একটি নির্দিষ্ট বাজেট মেনে চলে, তা হলে আখেরে লাভ হয় নিজেদেরই।
সংসার খরচ একটু বুদ্ধি করে করতে পারলেই অনেকটা টাকার সাশ্রয় হয়। দিনের হিসেবে তা অল্প বলে মনে হলেও, মাসের হিসেবে ওই অল্পস্বল্প বাঁচানো টাকাই অনেক কাজে আসে। খেয়াল রাখুন কিছু বিশেষ দিকে।
আরও পড়ুন: মধু-লেবুর জল নয়, মেদ গায়েব করতে ভরসা রাখুন এই পানীয়তে!
খরচে লাগাম পরাতে গেলে প্রথমেই ইএমআই, অন্যান্য ঋণ, বিল ইত্যাদির টাকা জমা করার দিনগুলো খেয়াল রাখুন। যেমন ইলেকট্রিক ও ফোন বিল এগুলো মাসের গোড়ায় মিটিয়ে দিন। ইলেকট্রিক ও ফোন বিল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মুদির দোকান বা বাজারের বড় ব্যয়ও মাসের প্রথমেই করে রাখুন। কী কী কিনবেন তার তালিকা করে তার পাশেই সম্ভাব্য দাম লিখে ফেলুন। হিসেব করে দেখুন, মোট কত টাকা খরচ হবে। তালিকায় সামান্য বিলাসিতা থাকলে থাকুক। কিন্তু সেই বিলাসিতার জিনিসগুলোয় যেন তালিকা ভরে না ওঠে। কোনও অপ্রয়োজনীয় জিনিস চোখে পড়লে তখনই বাদ দিন। মুদির বাজারের বেলাতেও একই নিয়ম মেনে চলুন। এ ছাড়া বিশেষ কিছু দিনে নানা বড় বড় শপিং মল-এ মুদিখানার বিভাগে ছাড় দেওয়া হয়। সেই দিন বেছেও সেরে নিতে পারেন কেনাকাটা। খুব শপিং করার অভ্যাস থাকলে তাতে রাশ টানুন। আসলে শপিং একটি নেশার মতো। এই সময় ফিল গুড হরমোন ক্ষরণ বেড়ে যায় বলেও বিজ্ঞানীদের দাবি। তাই অবসর যাপনের অন্যতম সঙ্গী শপিং। কিন্তু এর হাত ধরেই অহেতুক অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হয়ে যায়, খরচও হয় বেশি। তাই চেষ্টা করুন সেলের সময় শপিং করতে বা দরকারি জিনিসটুকুই কিনতে। অনলাইন শপিং অ্যাপে প্রায়ই সেল বা ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়। কাজে লাগাতে পারেন সে সবও। গ্যাসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। তাই খরচ কমাতে আভেন, ইনডাকশন ব্যবহার করতে পারেন। রান্নার সময় কমিয়েও কিছুটা টাকা সাশ্রয় হয়। তাই প্রেশার কুকারের ব্যবহার বাড়ান। ঢাকা-চাপা দিয়ে রান্না করলে খরচে রাশ টানা যায়। অনেক রান্নাই ঢাকা দিয়ে বা গ্যাস কমিয়ে করলে সময় বাঁচে ও গ্যাসও কম পোড়ে। সেই সব কৌশল অবলম্বন করুন। বিদ্যুতের খরচ কমাতে শীতকালে রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ফ্রিজ বন্ধ রাখতেই পারেন। ঘরে সাধারণ বাল্বে্র পরিবর্তে এল ই ডি আলো লাগালে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। বিদ্যুতের জায়গায় অনেকে সৌরশক্তি ব্যবহার করেন। এটি লাগাতে প্রাথমিক ভাবে বেশ খরচ হয়। তবে বাকি জীবনের জন্য অনেকটা সাশ্রয়ও পাওয়া যায়। রান্নায় সোলার কুকার, ঘরে সোলার লাইট ব্যবহার করা যায়।
আরও পড়ুন: বায়ুদূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সুস্থ থাকতে ভরসা রাখুন এ সব ব্যায়ামে, ঝরবে মেদও!
লক্ষ্মীর ভাঁড়ের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনুন। সারা দিনে যেটুকু খুচরো বাঁচছে বা ফেরত পাচ্ছেন নানা ক্ষেত্র থেকে, সেগুলো এসে ভাঁড়ে ফেলে দিন। প্রয়োজনের সময়ে কাজে আসবে। প্রয়োজন না হলে সংসারের জন্য বাড়তি কিছু কিনবেন না। এতেই সংসারের বাজেট ধরে রাখতে পারবেন। ধারবাকি বা নয়, কিছু কেনার পরিকল্পনা করে নিন আগেই। কয়েক মাস ধরে টাকা জমিয়ে তা দিয়ে সেই জিনিসটি কিনুন। ছোট ছোট হারে বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে দরকারের সময় কিছুটা টাকা হাতে পাবেন। বাজেটের হিসেব রাখার নানা অ্যাপ রয়েছে। সে সব ডাউনলোড করে নিতে পারেন। মাসের শেষে দেখে নিন কোন খাতে বাজেট বেড়েছে। ফলে সেখানে রাশ টানতে পারবেন পরের মাসে। মূল কথা, সাধ্যের মধ্যেই বেঁধে রাখুন সাধ। যতটা আয়, সেই বুঝেই ব্যয় সাজান। আয় বড় হওয়ার সঙ্গে স্বপ্নগুলোও বড় করুন।