কেবল শরীরচর্চা নয়, খেয়াল রাখুন তার সময়ের দিকেও। ছবি: শাটারস্টক।
মেদ ঝরানোর জন্য ব্যায়াম তো করেন, কিন্তু কোন সময়ে এই ব্যাযাম করছেন তার উপরেও যে শরীরের লাভ-ক্ষতি নির্ভর করে, তা জানেন কি? বেশির ভাগ মানুষই ঘুম থেকে ওঠার পর সকালের সময়টুকুকেই ব্যায়ামের উপযুক্ত বলে মনে করেন। সকালে উঠেই শারীরিক কসরত সেরে ফেলতে পারলে সারা দিনের জন্য অনেকটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। দিনভর তরতাজা লাগে। খিদে বশে থাকে। ঘুম হয়। ৩–৪ সপ্তাহ কোনও মতে চালিয়ে গেলে তার পর সেটা রুটিনের মতোও হয়ে যায়। কিন্তু যদি সকালে দেরিতে ওঠার অভ্যাস হয়? সাত–তাড়াতাড়ি উঠলে ক্লান্ত লাগে, তখন ব্যাযাম হবে কখন? কিংবা যদি মর্নিং ডিউটিতে পৌঁছে যেতে হয় কর্মস্থলে, তা হলে কি ব্যায়ামের ঘরে কাঁটা?
মোটেও তেমনটা নয়। বরং সে ক্ষেত্রে বেলার দিকে করুন শারীরিক কসরত। ‘জার্নাল অব ফিজিওলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র থেকে জানা গিয়েছে, বেলা ১–৪টের মধ্যে ব্যায়াম করলে ভাল ভাবে ব্যায়াম করা যায়৷ এই সময় শরীর গরম থাকে, পেশী নমনীয় থাকে, হার্টরেট–রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় বলেই এমনটা হয় বলে গবেষণায় প্রকাশ। এই সময় ব্যাযাম করলে ক্যালোরি খরচ বেশি হয়৷ বিশেষত, ওজন নিয়ে ব্যায়াম করলে বেশি টেস্টোস্টেরোন তৈরি হয়— পেশীর বৃদ্ধি ও শক্তি বাড়ানোর জন্য যার বিশেষ প্রয়োজন৷ কর্টিসোলের পরিমান কম থাকে বলেও ভাল কাজ হয়৷
কিন্তু অনেকেরই দুপুর বা বিকেলেও সময় মেলে না। তা হলে সন্ধে ৭–১০টার মধ্যে? যদি রাতে ঘুম না আসে? বিজ্ঞানীদের মতে, যদি ব্যায়াম করার পর পরই স্নান করে-খেয়েদেয়ে শুয়ে না পড়েন, বিপদ তত নেই। তাও সমস্যা হলে রাতের দিকে হালকা ব্যায়াম করুন। একটু হাঁটাহাটি, যোগা।
আরও পড়ুন: এক চিমটে হলুদই দূর করবে এত সমস্যা! আগে জানতেন?
কী ভাবে এগোবেন তার হদিশ রইল।
যে সময় সবচেয়ে তরতাজা থাকেন ও হাতে সময় থাকে, তখন করাই ভাল। সম্ভব হলে বিভিন্ন সময় ব্যায়াম করে দেখুন, কখন করলে বেশি ফ্রেশ লাগে, ঘুম ভাল হয়৷ ব্যায়ামের উদ্দেশ্য মাথায় রাখুন৷ ওজন কমাতে চাইলে সকালে খালি পেটে করা ভাল। পেশী গঠন করতে চাইলে দুপুরে বা বিকেলে। রাতে শরীরচর্চা করলে ব্যায়াম করতে হবে হালকা ধাঁচের। বাড়িতে ব্যায়াম করলে নিজের সুবিধা মতো করতে পারবেন। তবে তাতে যদি উদ্যমের অভাব হয়, বাড়ি বা অফিসের কাছাকাছি ভাল জিমে যান। সকালে ব্যায়াম করলে, আগের রাতে ব্যায়ামের পোশাকে ঘুমোতে যান বা পোশাক গুছিয়ে রাখুন৷ জিমে গিয়ে পোশাক পাল্টানোর অভ্যাস থাকলে ব্যাগ গুছিয়ে হাতের সামনে রাখুন। সকালে জিম করলে রাতে ঘুমের সময়টা এগিয়ে আনতে হবে।
আরও পড়ুন: মাত্র পাঁচ মিনিট সময়? সেটুকু এ ভাবে কাজে লাগিয়ে কমান মেদ, সরান অসুখ
ব্যায়ামের সময়ের সঙ্গে হিসেব করে খাওয়াদাওয়া এগিয়ে বা পিছিয়ে দিন। কখন কী খাবেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতে ব্যায়ামের আগে কার্বেহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে ব্যায়ামের পর প্রোটিন খাওয়ার কথা, তবে হালকা ব্যায়াম করলে অত ভাবনা–চিন্তা না করলেও চলে। খাবার মোটের উপর লো ক্যালোরি আর সুষম হলেই চলে যায়। ভাত, পাউরুটি, পাস্তা, আলু ইত্যাদি স্টার্চ, টার্কি, কুমড়োর বীজ ইত্যাদি খেলে ঘুম ভাল হয় বলে জানা গিয়েছে৷ তার উপর রাত ১০টা নাগাদ ঘুম নিয়ে আসার হরমোন মেলাটোনিনের ক্ষরণ সবচেয়ে বাড়ে। এ সব মাথায় রেখে খাওয়া ও ঘুমের রুটিন ঠিক রাখুন। কারণ ঘুম না হলে ভাল ভাবে ব্যায়াম করা ও তার সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।