প্রতীকী ছবি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দিনে সব থেকে বেশি উচ্চারণ করা শব্দগুলির মধ্যে একটা হল বেসিক হাইজিন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে সবসময়— এই একটা বাক্য সারা বিশ্বের মানুষকে এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, এটা বললে ভুল হবে না। শুধু নিজেকে নয়, পরিষ্কার রাখতে হবে বাসস্থানও। অনেক বাড়িতেই এখনও পরিচারিকারা আসতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে ঘর ঝকঝকে রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব কিন্তু আপনার। ফিনাইল হোক কিংবা স্যানিটাইজার, সবসময় ঘর পরিষ্কার রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে অনেকেরই কাছে। কত সহজে ঘর পরিষ্কার রাখা যেতে পারে? কী কী টিপস মেনে চললে চোখের শান্তি, মনের আরাম হয়ে উঠবে আপনার ঘর?
পুরনো দিনের বাড়ি হোক কিংবা ঝকঝকে আধুনিক ফ্ল্যাট। লিভিং রুম, বেড রুম, কিচেন, ওয়াশ রুম সবকিছু পরিষ্কার এবং জীবাণু মুক্ত রাখতে পারবেন কী ভাবে? রোজ ঘর মুছলেই কি কেল্লাফতে?
বর্তমানে বেশ কিছু নতুন বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাটে পাউডার টয়লেট রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্টিরিয়ার ডিজাইনাররা। সে ক্ষেত্রে ঘরে ঢুকেই ড্রয়িং রুমের পাশে সেই শৌচাগারে (পাউডার টয়লেট) গিয়ে সাবান এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখলে ঘর অপরিষ্কার হওয়ার এবং জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা কম। ঠিক যেমন বাইরে থেকে কেউ এলে পুরনো দিনে কলতলায় হাত পা ধুয়ে ঘরে প্রবেশের নিয়ম ছিল, এটাও ঠিক তেমন, এমনটাই জানালেন ইন্টিরিয়ার ডিজাইনার সুদীপ ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: বাইরে সংক্রমণের ভয়, ছাদে হাঁটলে কতটা কাজ হবে?
আরও পড়ুন: ত্বকে স্টিমের জাদুস্পর্শ
এই প্রসঙ্গে তিনি যে টিপসগুলি মেনে চলতে বলেন-
১. যদি কেউ আবাসন বা ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হন, তা হলে সেখানে ঢোকার আগে বাড়ির নীচে নির্দিষ্ট জোন তৈরি করা যেতে পারে আলোচনার মাধ্যমে। স্যানিটাইজিং টানেল ব্যবহার করতে পারলে ভাল, কিন্তু সব জায়গায় এটা করা সম্ভব নয়।
২. যে সব ক্ষেত্রে টানেল তৈরি সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে বাড়ি বা ফ্ল্যাটে প্রবেশের সময় জল, সাবান, ফিনাইল রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন হয়ে ঘরে প্রবেশ করলে যে কোনও রকম জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই কমবে।
৩. বাড়ির ক্ষেত্রেও প্রবেশের সময় এমন ব্যবস্থা রাখা সম্ভব। বারান্দা থাকলে সে ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অংশে প্রবেশ দ্বারের পাশেই একই ভাবে স্যানিটাইজিং জোনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। জুতো ঘরের ভিতর রাখা যাবে না। একান্ত রাখতে হলে প্লাস্টিকের জুতো পরতে হবে। সেই জুতো স্যানিটাইজ করে প্রবেশ করতে হবে।
এখনকার বেশির ভাগ আসবাবপত্রে ভিনিয়ারের ক্ষেত্রে একটা কোটিং বা আস্তরণ থাকে।
এগুলি স্যানিটাইজার স্প্রে করে সহজেই পরিষ্কার রাখতে পারেন। প্রতীকী ছবি।
৪ . নকশাদার আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে পরিষ্কারের সময় জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। ল্যামিনেশন বা সানমাইকার ক্ষেত্রে বাজার চলতি স্প্রে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেই হবে।
৫. এখনকার বেশির ভাগ আসবাবপত্রে ভিনিয়ারের ক্ষেত্রে একটা কোটিং বা আস্তরণ থাকে। এগুলি স্যানিটাইজার স্প্রে করে সহজেই পরিষ্কার রাখতে পারেন। তবে কোটিং না থাকলে পরিষ্কারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৬. কাচের জিনিসের ক্ষেত্রেও প্রথাগত পদ্ধতি মেনেই পরিষ্কার করতে হবে। একইসঙ্গে স্যানিটাইজার স্প্রে করে পরিষ্কার করতে পারলে ভাল।
৭. বাড়িতে অতিথি এলে বসার জায়গা স্যানিটাইজ করার জন্য বাজার চলতি ছোট ছোট স্প্রে ব্যবহার করা যায়। বাইরের কেউ বাড়িতে এসে নির্দিষ্ট জায়গায় বসলে, বসার আগে এবং চলে গেলে সে ক্ষেত্রে ওই বসার জায়গায় স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি এবং পরবর্তীতে ঘর পরিষ্কার রাখা প্রসঙ্গে ইন্টিরিয়ার ডিজাইনার সৌরভ দত্ত বলেন, “ইউভি স্যানিটাইজার মেশিন যদি নাও থাকে, ফ্ল্যাট বা আবাসনের ক্ষেত্রে ঘরে প্রবেশের মুখে কোনও ছোট আলমারি রাখা যেতে পারে। যেখানে ব্যাগ, ল্যাপটপ বা অন্য ডিভাইস অন্তত, দু’তিন ঘণ্টা নিরাপদ ভাবে রেখে দিয়ে ঘরে প্রবেশ করুন। তার পর সেটি স্যানিটাইজ করতে পারেন।”
এ ছাড়াও বাড়ি পরিষ্কার রাখা প্রসঙ্গে তিনি কিছু টিপস দিয়েছেন। সেগুলি হল
১. লিভিং রুমে সোফা কভার (ওয়াশেবল হতে হবে) স্যানিটাইজ করতে হবে প্রয়োজন মতো। ফ্যাব্রিক মেটেরিয়ালের সোফা হলে সেটিও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
২. বড় সোফার বদলে একাধিক ছোট সোফা, চেয়ার ব্যবহার করা সুবিধাজনক। স্যানিটাইজিং স্প্রে দিয়ে পরিষ্কার করতেও সুবিধা হবে।
৩. বাড়িতেই যাঁদের অফিস, তাঁরা ঢাকা দেওয়া ফাইল ক্যাবিনেট ব্যবহার করুন। বাজারে অটোমেটিক স্প্রে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. বাইরে থাকে আনা বাজার রান্না ঘরের সিঙ্কে পরিষ্কার করতে হয়। সে ক্ষেত্রে সিঙ্কের মধ্যে থেকে জল যেন রান্নার সংস্পর্শে না আসে।
এই প্রসঙ্গে সুদীপ ভট্টাচার্যের মত,
১. বাড়ির খাবার জায়গা এবং হাত মুখ ধোওয়ার জায়গা বা বেসিনের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। বেসিন বারবার পরিষ্কার করতে হবে। ওই বিশেষ জায়গাটি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
২. কার্পেট এবং ফলস সিলিং এই মুহূর্তে একেবারেই ব্যবহার করা যাবে না। কারণ ড্রপলেট আটকে থাকার আশঙ্কা থাকবে।
৩. বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার সাহায্য নিলে সেক্ষেত্রে সেই সংস্থা স্যানিটাইজেশনের জন্য কোন সলিউশন ব্যবহার করছে, তা খোঁজ নিতে হবে।
ঘর পরিষ্কার রাখার চটজলদি টিপস দিলেন ইন্টিরিয়র ডিজাইনার উর্বশী বসু। তাঁর মতে—
১. বাড়িতে সবথেকে শান্তির জায়গা হচ্ছে শোওয়ার ঘর। বেড রুমের ক্ষেত্রে বেড কভার ও বেড শিট নিয়মিত ধুয়ে পাল্টাতে হবে।
২. বাড়িতে অতিরিক্ত কোনও জিনিস রেখে বোঝাই করার থেকে তা বর্জন করলে ঘর অনেক বেশি পরিষ্কার রাখা যাবে। প্লাস্টিক সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করতে হবে।
৩. রাস্তার ধারে বাড়ি হলে সে ক্ষেত্রে ধুলো-বালি বেশি থাকে। তিন থেকে চার দিন অন্তর ঘরের পর্দা বদল করতে পারলে ভাল। ১৫ দিনে অন্তত এক বার বদল করতেই হবে।
৪. বর্ষাকালে পর্দা ছাড়াও সোফা সেট কিংবা চেয়ারের কভার নিয়ম করে ধুয়ে বদল করতে হবে।
৫. ঘুম থেকে উঠেই রোজ নিয়ম করে যদি আসবাবের উপরের অংশটুকু বা বারান্দা কিংবা জানলার গ্রিল স্যানিটাইজার স্প্রে দিয়ে বা এমনিও মুছে নেওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে ধুলো জমার সম্ভাবনা কমে যাবে।
৬. রান্নাঘরের ক্ষেত্রে রান্না শুরুর আগে এবং পরে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। যাতে কোনওরকম ধুলো বা ড্রপলেট জমতে না পারে, তার দিকে নজর রাখতে হবে।
৭. শৌচাগারের ক্ষেত্রে ক্রোম ফিনিশড হলে অ্যাসিড জাতীয় জিনিস দিয়ে পরিষ্কারের সময় সতর্ক থাকতে হবে।
৮. রান্নাঘরের সিঙ্ক, বেসিন, কিংবা শৌচাগারের কলের ক্ষেত্রে একটা পাতলা কাপড় দিয়ে কলিন্স, স্যানিটাইজিং স্প্রে দিয়ে রোজ পরিষ্কার করতে হবে।
যে কোনও সবুজের ছোঁয়া মন ভাল রাখে। বাড়িতে যত অল্প জায়গা থাক, চেষ্টা করতে হবে টবে বা কাচের বোতলে গাছ পালা রাখতে। ঘর জীবাণুমুক্ত রাখতে, পরিচ্ছন্ন রাখতে বেশ কিছু গাছ অন্দর সজ্জায় ব্যবহার করা যেতেই পারে।
তাই ছায়া সুনিবিড় না হোক। পরিচ্ছন্ন শান্তির নীড় পেতেই পারেন আপনি।