কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপের শুরু থেকেই তুঙ্গে রামধনু বিতর্ক। ছবি: টুইটার
কখনও পোশাকে রামধনু থাকায় সাংবাদিককে আটকে দেওয়া হচ্ছে বিমানবন্দরে কখনও টুপিতে ওই রং থাকায় সমর্থকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না স্টেডিয়ামে। কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপের শুরু থেকেই তুঙ্গে রামধনু বিতর্ক। শুধু সাধারণ সমর্থকরাই নন, একই ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হচ্ছেন বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রাও। হাতে রামধনু বন্ধনী পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৭টি দেশের অধিনায়কদের। একই কারণে বদল আনতে হয়েছে লুকাকু, অ্যাজারদের বেলজিয়ামের অ্যাওয়ে জার্সিতেও। কিন্তু রামধনুতে কিসের এত আপত্তি কাতার প্রশাসনের?
রেনবো পতাকা বা রামধনু পতাকা আসলে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষের আত্মাভিমান ও গর্বের প্রতীক। সে জন্য একে ‘প্রাইড’ পতাকাও বলা হয়। সমকামী নারী ও পুরুষ, উভকামী ও রূপান্তরকামী তথা এলজিবিটিকিউ সমাজের মানুষরা এই পতাকার তলেই বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। ১৯৭৮ সালে গিলবার্ট বেকার এই পতাকার নকশা তৈরি করেন। সেই থেকেই এই পতাকার তলে একত্রিত হচ্ছেন বহু মানুষ। এই ছটি রং যথাক্রমে বেগুনি (প্রাণের প্রতীক), নীল (শান্তির প্রতীক), সবুজ (প্রকৃতির প্রতীক), হলুদ (সূর্যালোকের প্রতীক), কমলা (নিরাময়ের প্রতীক), লাল (জীবনের প্রতীক)। মূল ছয়রঙা পতাকার সঙ্গে আরও বিভিন্ন ধরনের রং যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু পতাকার মূলগত আবেদনটি একই রয়ে গিয়েছে— সব ধরনের লিঙ্গপরিচয়ের মানুষের সমানাধিকার।
কাতারে সমকামিতা নিষিদ্ধ। সমলিঙ্গের কোনও সম্পর্ককেই স্বীকৃতি দেয় না পশ্চিম এশিয়ার এই দেশ। তাই যে বিষয়টি সমকামী মানুষদের আন্দোলনের প্রতীক, সেটিও নিষিদ্ধ করতে উদ্যত কাতার। বিষয়টি নিয়ে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রথম থেকেই প্রতিবাদে সোচ্চার। তাঁদের সমানাধিকারের দাবিকে সম্মান জানাতে ইউরোপের সাতটি দেশের অধিনায়করা মাঠে ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরে নামার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাতার প্রশাসনের চাপে ফিফা নিষিদ্ধ করে দেয় সেই বাহুবন্ধনী। জানায়, ওই বন্ধনী পরে নামলে হলুদ কার্ড দেখানো হবে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে।
ফিফার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ‘ফুটবল সাপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন’। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অধিকার, মহিলাদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার বা অন্য কোনও সর্বজনগ্রাহ্য মানবাধিকারকে যারা মূল্য দেয় না, তেমন দেশকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দিয়ে ঠিক করেনি ফিফা। ফিফার ‘ডিরেক্টর অফ মিডিয়া রিলেশনস’ ব্রায়ান সোয়ানসন স্বীকার করে নেন এই সমালোচনার কথা। তবে আশ্বাস দেন, কাতার প্রশাসনের তরফ থেকে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষদের কোনও হেনস্থা করা হবে না। কিন্তু সেই আশ্বাস যে খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি, একের পর এক ঘটনাই তার প্রমাণ বলে মনে করছেন অনেকেই।