হার্ট অ্যাটাক হলে কী কী উপসর্গ হতে পারে তা নিয়েও অজ্ঞতা থাকে অনেকের৷ ছবি: শাটারস্টক।
টগবগে কমবয়সিদের হার্ট অ্যাটাক হয় না— এই ভুল ধারণার কবলে পড়ে কত যে প্রাণ যায় তার হিসাব নেই৷ কারণ অধিকাংশ মানুষ ভাবেন, হৃদরোগ হয় মেদবহুলদের আর নয়তো একটু বয়স বাড়লে হার্টের কার্যকারিতা নষ্ট হতে শুরু করলে ৷ কিন্তু ব্যায়ামট্যায়াম করে ছিপছিপে থাকার পরও যে সে যখন তখন হানা দিতে পারে, যে কোনও বয়সে, তা ভাবতে পারেন না অনেকেই৷
নিয়ম মানলে ও ফিট থাকার চেষ্টা করলেও রোগের আশঙ্কা কমলেও শূন্য কিন্তু কখনওই হয় না৷ তার উপর স্বাস্থ্যবানরা সচরাচর চেক আপ করান না৷ হার্ট অ্যাটাক হলে কী কী উপসর্গ হতে পারে তা নিয়েও অজ্ঞতা থাকে অনেকের৷ সবে মিলেই বিপদ বাড়ে৷
অনেকে ভাবেন, বুকে ব্যথা নেই মানে হার্ট অ্যাটাক হয়নি৷ তা কিন্তু নয়৷ বয়স্ক ও ডায়াবিটিসে আক্রান্তদের ব্যথা নাও হতে পারে৷ অনেক সময় হয়ও না৷ হার্ট অ্যাটাক হলে বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ ধরা বা অস্বস্তি যেমন থাকতে পারে, থাকতে পারে ঘাম, গা–বমি, অসম্ভব ক্লান্তি–দুর্বলতা, হাতে বা পিঠে ব্যথা, বদহজম, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি৷ কাজেই মধ্যবয়সে বা হৃদরোগের রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে এ সব হলে কষ্ট কমার অপেক্ষায় বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷
আরও পড়ুন: সকালের ভুল খাবারই ক্ষতি করছে রোজ, অসুখ রুখতে ব্রেকফাস্টে রাখুন এ সব
কম বয়সেও যদি খুব কষ্ট হয়, ডাক্তার দেখানো দরকার৷ কারণ হার্ট অ্যাটাক কেবল বেশি বয়সিদের হয়, এ ধারণাও ঠিক নয়৷ এ রকম ভুল ধারণা আছে আরও৷ সংশোধনে সাহায্য করলেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবব্রত রায়।
সুগার বশে থাকলে বিপদ নেই: সুগারের মাত্রা ঠিক থাকলে হার্ট অ্যাটাক হবে না এমন নয়৷ কারণ ডায়াবিটিস এমন একটি অসুখ যার প্রভাবে রক্তনালিতে প্রদাহ দেখা দেয়৷ হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে৷ রক্তে সুগার লেভেল ঠিক রাখার পাশাপাশি ওজন, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইডের লেভেলও নিক্তির মাপে না রাখতে পারলে বিপদের আশঙ্কা থেকে যায়৷
ডায়াবিটিসের প্রভাবে রক্তনালিতে প্রদাহ দেখা দেয়, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে৷
হার্ট অ্যাটাক মানে সব শেষ: বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে, ওষুধপত্র খেলে ও নিয়ম মেনে চললে হার্ট অ্যাটাকের পরেও দিব্য ভাল থাকা যায়৷ অনেকে আবার ভাবেন, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাশ সার্জারি করে নিলে দুর্ভাবনার দিন শেষ হয়৷ এ-ও ভুল ধারণা৷ কারণ সঠিক খাওয়াদাওয়া ও গ্রেডেড এক্সারসাইজ না করলে, নিয়ম না মানলে, ঠিক করে ওষুধ না খেলে সমস্যা আবার নতুন করে দেখা দিতে পারে৷ কাজেই হার্ট অ্যাটাক মানে যেমন সব শেষ নয়, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাশ অপারেশন করিয়ে নিলেই যাবতীয় নিয়মের হাত থেকে মুক্তি, তেমনও নয় ব্যাপারটা৷
আরও পড়ুন: অভ্যাস বদলেই রক্তে বাড়বে হিমোগ্লোবিন, সারবে অ্যানিমিয়া
মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কম: ইস্ট্রোজেন হরমোনের সুরক্ষা থাকায় মেনোপজের আগে আশঙ্কা কিছুটা কম থাকলেও, অনিয়মিত জীবনযাপন, ধূমপান, ভুলভাল খাওয়া, স্ট্রেস, গর্ভনিরোধক পিল ইত্যাদি কারণে ও কম বয়সে হাইপ্রেশার–ডায়াবিটিস জাতীয় অসুখ দেখা দেওয়ার ফলে মেয়েদেরও কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক হয়৷ মেনোপজের পর আশঙ্কা বাড়ে বলাই বাহুল্য৷ তখন আর নারী–পুরুষে প্রভেদ থাকে না৷
কাজেই ভুল ধারণা লালন না করে নিয়মিত শরীরচর্চা, উদ্বেগে লাগাম, খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম, প্রয়োজনীয় চেক আপে অবহেলা না করা, এ সব উপায়েই দূরে রাখুন রোগ।