belly fat

বেল্ট দিয়ে ওজন কমাতে চাইছেন? ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারে কিন্তু

আসল সত্যিটা জানলে এই ফাঁকিবাজি করে মেদ ঝরানোর আগে দু’বার ভাবতে হবে।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৩৭
Share:

এই বেল্ট ব্যবহারে একেবারেই সম্মতি দেন না চিকিৎসকরা।

নতুন পোশাক পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলেন পেটের মেদে বাধ সাজছে পোশাকের সৌন্দর্য। প্রায়ই মনে হয়, ডায়েট না মানতে পারার গ্লানি ও শরীরচর্চার সময় না বেরনোর জন্যই চেহারা বাড়ছে আড়ে-বহরে। আর তাকে বাগে আনতেই কম পরিশ্রমের উপায় খুঁজতে বসেন অনেকেই।

Advertisement

ঝঞ্ঝাটবিহীন উপায়ে মেদ ঝরাতে অনলাইনে বেল্ট অর্ডারের পথ ধরার প্রবণতা তাই বাড়ে। বিশেষ করে পুজোর আগেই বিনা শ্রমে ঝরিয়ে ফেলা যাবে বাড়তি মেদ— এই আশাতেই মাস কয়েকের জন্য মেদ ঝরানোর বেল্ট বেছে নেন অনেকে। কিন্তু সত্যিই কি কাজ হয় এতে?

চিকিৎসকদের মতে, আসল সত্যিটা জানলে এই ফাঁকিবাজি করে মেদ ঝরানোর আগে দু’বার ভাবতে হবে। আসলে মুখরোচক খাবার খেয়ে বেশির ভাগ মানুষই ছোট থেকেই পেটে মেদ ভরে বসে থাকেন। এমনিতেই জিনগত ভাবে আমাদের অনেকেরই ভুঁড়ির প্রবণতা বেশি। চেহারা খারাপ লাগা ছাড়াও পেটে মেদ জমার কারণে অনেক অসুখবিসুখের শঙ্কা বেড়ে যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ভুল কিছু ধারণাই বাড়ায় বিপদ, সতর্ক হোন এ সব ক্ষেত্রে

তবে শঙ্কা নিয়ে কথা বলতে গেলে বেল্টের কর্মপদ্ধতি জানাটা আগে জরুরি। চওড়া বেল্ট পেটে টাইট করে আটকে নিয়ে বেশি তাপমাত্রার সাহায্যে ঘর্ম গ্রন্থি বা সোয়েট গ্ল্যান্ডের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে ওই অংশে প্রচুর ঘাম হয়। আর এই কারণে কিছুটা হালকা লাগে। সামান্য ছিপছিপে যে লাগে না তাও নয়। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এতটাই বেশি যা শরীরের পক্ষে মোটেই ভাল নয়।

পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহের মতে, ‘‘বেশির ভাগ বাজারচলতি বেল্টে শরীরের মাঝের অংশের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয় একশ পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। এর ফলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বকের র‌্যাশ তো বটেই, এ ছাড়া এগজিমা বা সোরিয়াসিসের প্রবণতা থাকলে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ওজন কমছে বলে মনে হলেও আসলে ঘাম ঝরার জন্যই একটু ঝরঝরে লাগে মাত্র। আসলে অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে অনেকটা জল বেরিয়ে যায় বলে ওজন কিছুটা কমলেও তা কিন্তু খুব সাময়িক।’’

পেটের মেদকে বাগে আনতেই কম পরিশ্রমের উপায় খুঁজতে বসেন অনেকেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘চটজলদি মেদ কমানোর হাতিয়ার বেল্টের আরও অনেক ক্ষতিকর দিক আছে। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের পাশাপাশি রক্তচাপ থাকলে তা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেকের হার্টে চাপ পড়ে বুক ধড়ফড় করতে পারে। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি পেটে এই বেল্ট বেঁধে রাখলে পরবর্তীকালে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। আসলে স্পার্মের জন্যে লাগাতার গরম মোটেও ভাল নয়। এর ফলে একদিকে স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়, অন্য দিকে টেস্টিকুলার টেম্পারেচর বেড়ে যায় বলে স্পার্ম উৎপাদন বরাবরের জন্যে ব্যহত হতে পারে। এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার প্রস্টেট ও টেস্টিক্যুলার ক্যানসারও ডেকে আনতে পারে।’’

আরও পড়ুন: সকালের ভুল খাবারই ক্ষতি করছে রোজ, অসুখ রুখতে ব্রেকফাস্টে রাখুন এ সব

আর এক ভুল ধারণা হল এই বেল্ট ব্যবহারের পরে পরেই কনকনে ঠান্ডা জলে স্নান করলে নাকি রাতারাতি ওজন কমে যায়। জাপানের ‘সেন্ট মারিয়ানা ইউনিবার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত সমীক্ষা অমুযায়ী, এই কাণ্ডটি করে প্রতি বছরই অজস্র অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে মারাত্মক জ্বরের শিকার হয়।

ওজন কমাতে বেল্টের ব্যবহার দেশে দেশে এতটাই জনপ্রিয় যে প্রতি বছর এই ধরনের বেল্ট দিয়ে মেদ কমানোর চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। ২০১০ সালে রাশিয়ায় আয়োজিত এমনই এক চ্যাম্পিয়নশিপে এক খেলোয়াড়ের মৃত্যুও হয়। তার পর থেকেই বেল্টের ব্যবহারে রাশ টানছে বিশ্বের উন্নততম দেশগুলি।

চিকিৎসকরাও তাই এই বেল্ট ব্যবহারে একেবারেই সম্মতি দেন না, উল্টে স্বাভাবিক খাবার খেয়ে ও নিয়ম করে শরীরচর্চা করেই মেদ ঝরানোর পক্ষপাতি তাঁরা। ফাঁকিবাজিতে কোনও মহৎ কার্য হয় না যে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement