নিয়ম মানলে অস্ত্রোপচারে জুড়তে পারে বাদ যাওয়া অঙ্গ।
দুর্ঘটনায় যে কোনও আঙুল, হাত বা পা কেটে বাদ গেলে তা জোড়ার কৃতিত্ব যতটা চিকিৎসকের, ততটাই কৃতিত্ব রোগীর আত্মীয় বা রোগীর। কতটা দ্রুত সেই কাটা অঙ্গের সংরক্ষণ করা হচ্ছে ও কী ভাবে হাসপাতালে আনা হচ্ছে, তার উপরও নির্ভর করে অঙ্গ আদৌ জুড়বে কি না।
সরস্বতী প্রেসের কর্মী শঙ্কর সাহার দু’টি হাতই বাদ গিয়েছিল কব্জি থেকে। সম্প্রতি এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ারের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ ও অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের চিকিৎসকরা মিলে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই হাতের পাঞ্জা জুড়ে দেন। কাটা আঙুল জোড়ার নজির আগে থাকলেও এমন দু’টি হাত জোড়ার নজির ওড়িশার পর কলকাতায় এই প্রথম।
তবে চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ মানুষের সবসময় জানা থাকে না, ঠিক কী ভাবে কাটা অঙ্গ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত। ফলে ভুল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের জন্য অনেক সময়ই আর জোড়া লাগানো যায় না অঙ্গ। এ সব ক্ষেত্রে তাই কিছু বিশেষ সাবধানতা মেনে চলতে হয়।
এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান গৌতম গুহ-র কথায়, ‘‘কেটে যাওয়া অঙ্গ জোড়া লাগানোর সময় অনেকগুলো দিক মাথায় রাখতে হয়। কী ভাবে কাটছে, শার্প কাট না কি থেঁতলে গিয়েছে এগুলোর উপরেও সাফল্য নির্ভর করে। থেঁতলে গেলে জোড়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই পুরো পদ্ধতিটিই একটি চেষ্টা। তাই সফল হবেই এমন বলা যায় না। তবে নিয়ম মানলে আর থেঁতলে না গেলে সাফল্য আসে। জোড়ার সময় ধমনীর সঙ্গে ধমনী, শিরার সঙ্গে শিরা তো বটেই, সঙ্গে স্নায়ুর কথাও মাথায় রাখতে হয়। এর সঙ্গে খেয়াল রাখতে হয় সেই অঙ্গের ব্যবহারিক দিক ও শক্তি পাওয়ার বিষয়টিও।’’
সাধারণত শরীরের পেরিফেরাল টিস্যু ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এই সময়কে বলে ইসকিমিয়া টাইম। কিন্তু কাটা অঙ্গ খুব ঠাণ্ডা জায়গায় রাখলে রক্ত সঞ্চালন ছাড়াই পেরিফেরাল টিস্যুর ইসকিমিয়া টাইম বাড়িয়ে তোলা যায়। তাই রোগীর পরিজন বা রোগীরও মাথা ঠান্ডা রেখে কেটে যাওয়া অঙ্গ কী ভাবে আনতে হবে তার পাঠ জেনে রাখা উচিত। এমন বিপদে কোন কোন দিকে খেয়াল রাখতে হবে?
ফার্স্ট এড: প্রথমেই কেটে যাওয়া অঙ্গে যতই ধুলোবালি বা কাদা লেগে থাকুক তা জল দিয়ে ধুতে পারেন, তবে খুব ঘষাঘষি করবেন না, এতে টিস্যু ও স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জায়গাটাকে আর্দ্র রাখতে স্যালাইনে ভেজানো তুলো বা গজ দিয়ে মুড়ে ফেলুন। হাতের কাছে স্যালাইন-জল না পেলে পরিষ্কার তুলো বা গজ বা সুতির কাপড়ের টুকরো ব্যবহার করুন। রক্তপাত বন্ধ করতে স্থানীয় কোনও ওষুধের দোকান থেকে টাইট করে ব্যান্ডেজ করিয়ে নিতে পারলে ভাল হয়।
পরিষ্কার পাত্র বা প্লাস্টিক: কেটে যাওয়া অঙ্গের টিস্যু যাতে নষ্ট না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই কেটে যাওয়া অঙ্গ ফার্স্ট এডের পর খুব পরিষ্কার কোনও পাত্র বা প্লাস্টিকে রাখতে হবে।
বরফ ও ঠান্ডা জল: পেরিফিয়াল টিস্যুর ইসকিমিয়া টাইম বাড়াতে প্লাস্টিক প্যাকেটে বা পাত্রে কাটা আঙুলের অংশকে বরফ ও ঠান্ডা জল দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। একটি প্লাস্টিকে বরফ রেখে তার উপর ঠান্ডা জল দিন। এ বার অন্য আর একটি প্লাস্টিক বা কোনও একটি পাত্র নিয়ে তাতে কাটা অঙ্গটি রেখে মুখবন্ধ করুন পাত্রের বা প্লাস্টিকটি মুড়িয়ে নিন । খেয়াল রাখতে হবে, অঙ্গ রাখা প্লাস্টিক বা পাত্রটি বরফের সংস্পর্শে থাকবে, কিন্তু অঙ্গটি যেন সরাসরি বরফ না ছোঁয়। নইলে টিস্যু পচে যেতে পারে। যেখানে অঙ্গটি রাখছেন, তার তাপমাত্রা যেন ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে। তবে হাতের কাছে বরফ না পেলে আইসক্রিমও বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
সময়: কতক্ষণে পৌঁছতে পারছেন চিকিৎসকের কাছে তার উপরও নির্ভর করবে কেটে যাওয়া অঙ্গ জুড়বে কি না। দুর্ঘটনার সময় থেকে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ‘গোল্ডেন টাইম’। এর মধ্যেই কাটা অংশ পৌঁছতে হবে এমন কোনও হাসপাতালে যেখানে এই ধরনের অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো রয়েছে।