যদি জীবনযাপনের কিছু দিক রপ্ত করতে পারেন, গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমে অনেকটাই। ছবি: শাটারস্টক।
পিপিআই বা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর অর্থাৎ ওমিপ্রাজোল গোত্রের ওষুধ বাজারে আসামাত্রই একচেটিয়া বাজার শুরু হল তাদেরই৷ কারণ, পেটের অ্যাসিড দমিয়ে রাখতে এরা অনন্য৷ সকালে উঠে একটি খেয়ে নিলেই ব্যস! যত অনিয়মই হোক না কেন, তার পর সারা দিন আর কষ্ট নেই৷ এই ওষুধ অ্যাসিড বেরনোর পথ আটকে দেয় বলে রিফ্লাক্স ও আলসারের চিকিৎসায় এর ব্যবহারও রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে স্ট্রেস কম থাকা, কায়িক শ্রম করা ও ওজন কম থাকার কারণে গ্রামের মানুষের অম্বল শহুরে মানুষদের তুলনায় কম হয়৷ শহুরে মানুষও যদি জীবনযাপনের কিছু দিক রপ্ত করতে পারেন, ওষুধের প্রয়োজন তাঁরও অনেক কমে যেতে পারে৷
কিন্তু তা আর হয় কই! গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় আমরা খুঁজি চটজলদি সমাধান৷ তারই ফলে এই জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার শুরু হয়েছে৷ এর মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদেরই। শরীরে এর প্রভাবে নানা ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা চিকিৎসকদেরও। আপনিও এই সব অপব্যবহারে অভ্যস্ত কি?
আরও পড়ুন: নিয়ম মানলেও ঝরছে না মেদ? শুধু এই খাবারে রাশ টানলেই কেল্লা ফতে!
অপব্যবহার
ব্যথার ওষুধে অম্বল হলেও ভরা পেটে দু’-চার দিন খেলে কোনও সমস্যা হয় না৷ কিন্তু ব্যথার ওষুধের সঙ্গে পিপিআই খাওয়া স্বভাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছে সবার৷ গ্যাস-অম্বলের প্রবণতা না থাকলে এই পিপিআই অপ্রয়োজনীয়। হঠাৎ অম্বলে সবচেয়ে ভাল ওষুধ লিকুইড অ্যান্টাসিড৷ কিন্তু মানুষ পিপিআই খান৷ সে যতক্ষ ণে কাজ শুরু করে তত ক্ষণে জল–টল খেলে অ্যাসিড এমনিই সেরে যেত। অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে এই ওষুধ খেতে লাগে না৷ তবু চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই আমরা কিনে থাকি ও বাড়তি সতর্কতায় খেয়েও ফেলি। কখনও কখনও চিকিৎসকরাও রোগীকে মানসিক আরাম দিতে এই ওষুধ দিয়ে রাখেন প্রেশক্রিপশনে। হাসপাতালে ভর্তি হলেই পিপিআই লাগে এমন নয়৷ কিন্তু কখনও দেওয়া হয় তাও৷
গ্যাস–বদহজমের সঙ্গে অম্বল না থাকলে এর দরকার নেই৷ তাও এই ওষুধটি খাওয়ার চল হয়ে গিয়েছে৷ আলসার বা রিফ্লাক্স কমাতে ৬–৮ সপ্তাহ পিপিআই খাওয়ার নিয়ম৷ কিন্তু শুরু করার পর অনেকেই বছরের পর বছর খেয়ে যান৷ কখনও খান জীবনভর৷ জীবনযাপনের অনিয়ম, মদ্যপান, স্ট্রেস ইত্যাদি কারণে অনেকের অম্বল লেগে থাকে৷ আর তাঁরা মূল সমস্যার সমাধান না করে পিপিআই খেয়ে যান৷ এবং এর কুফল শুরু হয়৷
আরও পড়ুন: বসে বসে মাথার কাজেই রোগ ঢুকছে শরীরে, ব্যারাম আটকাতে মানতেই হবে এ সব
পিপিআই–এর কুফল
অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, ভিটামিন বি১২–র ঘাটতি হয় অনেকের৷ কম বয়সে ডিমেনসিয়া বা চিন্তাভাবনার অসঙ্গতির খবরও পাওয়া যাচ্ছে আজকাল৷ প্রকোপ বাড়ে অস্টিওপোরোসিস, ব্যথা–বেদনা ও হাড়গোড় ভাঙার৷ নিয়মিত খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে ক্ষতিকর জীবাণুর বাড়বাড়ন্ত হয়৷ ডায়ারিয়া হয় কথায় কথায়৷ শয্যাশায়ী বয়স্ক মানুষের নিউমোনিয়ার আশঙ্কা বাড়ে৷