ঘর সাজানোর অন্যতম উপাদান এই ক্যাকটাস।
যতই কাঁটা থাকুক না কেন, ক্যাকটাসের প্রতি আকর্ষণ কিন্তু সকলেরই। আর ক্যাকটাসে রোজ জল দেওয়ার ঝক্কিও খুব একটা থাকে না। অল্প জলেই সে তুষ্ট। ফলে বাড়ির ভিতরে বা বাইরে ক্যাকটাস রাখাই যায়। শুষ্ক (এরিড) অঞ্চলে, বিশেষত মরুভূমিতে সাকিউলেন্টস জন্মায়। এদের পাতা ও ডালের গঠন চ্যাপ্টা ও মাংসল হয়, যাতে জল অনেকক্ষণ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে। এই ধরনের গাছের মধ্যেই পড়ে ক্যাকটাস। দেখে নেওয়া যাক কত ধরনের ক্যাকটাস বাজারে পাওয়া যেতে পারে...
ক্যাকটাসের রকমফের
বানি ইয়ারস ক্যাকটাস: খরগোশের কানের মতো দেখতে হয় বলেই এর নাম দেওয়া হয়েছে বানি ইয়ারস। এই ক্যাকটাস দুই থেকে তিন ফুট লম্বা হয়। পর্যাপ্ত আলো পেলে সাদা ফুল ও বেগুনি ফলও ধরে এই গাছে।
চিনা ক্যাকটাস: এই ধরনের ক্যাকটাসেও গোলাপি ফুল ধরে। কিছু চিনা ক্যাকটাস ছায়ায় ভাল বাড়ে আবার কিছু ক্যাকটাসের রোদ দরকার হয়।
সাগুয়ারো ক্যাকটাস: প্রায় চল্লিশ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত এই ক্যাকটাস বাড়তে পারে। তবে খুব ধীর গতিতেই এই ধরনের ক্যাকটাস বাড়ে। তাই বাড়ির ভিতরেও এদের রাখা যায়।
ওল্ড লেডি ক্যাকটাস: এই ক্যাকটাস বালিতেই ভাল হয়। ২৫০ প্রজাতির ওল্ড লেডি ক্যাকটাস পাওয়া যায়। বসন্তে গোলাপি ও বেগুনি ফুল ফোটে এই ক্যাকটাসে।
ইস্টার ক্যাকটাস: এই ক্যাকটাসে ফুল ফোটে শীতের শেষে ও বসন্তের শুরুতে। সাদা, কমলা ও ল্যাভেন্ডার রঙের এই ফুল ক্যাকটাসের মাথা আলো করে থাকে।
ব্যারেল ক্যাকটাস: এর গোল আকারের জন্য এ রকম নাম। একাধিক রিব দিয়ে এর গায়ে ভাগ থাকে। সেই রিবের উপরে থাকে কাঁটা। মে-জুন মাস নাগাদ লাল, হলুদ ফুল ফোটে।
ক্র্যাব ক্যাকটাস: এই ক্যাকটাস বাড়ার জন্য অন্যান্য ক্যাকটাসের তুলনায় শীতল আবহাওয়া প্রয়োজন। এর ফুলও ফোটে শীতেই। এই ধরনের ক্যাকটাস সচরাচর বাজারে পেয়ে যাবেন।
এ ছাড়াও একাধিক প্রজাতির ক্যাকটাস আছে। নার্সারি ও অনলাইনেও পেয়ে যাবেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মাটি তৈরি করবেন কী ভাবে
অন্যান্য গাছ যে মাটিতে হয়, সে রকম মাটিতে কিন্তু ক্যাকটাস হবে না। ঝুরঝুরে বালি মাটিতেই ক্যাকটাস বাড়ে ভাল। ক্যাকটাসের মাটি তৈরি করতে লাগবে ১০ শতাংশ বালি, ৪০ শতাংশ মাটি আর ৫০ শতাংশ পারলাইট। এর মধ্যে খানিকটা রক ডাস্ট মিশিয়ে নিন। এ বার এই মাটি টবে ঢেলে অল্প জল দিয়ে তৈরি করুন ক্যাকটাসের মাটি। টবের উপরের দিকের মাটিতে ছোট ছোট পাথর, নুড়ি বা অ্যাকোয়ারিয়াম স্টোন রাখতে পারেন।
মাটিতে অ্যাসিডিটি বাড়াতে
পাঁচ গ্যালন জলে এক টেবিল চামচ ভিনিগার মিশিয়ে অল্প অল্প করে রোজ ক্যাকটাসের টবে দিতে পারেন। ক্যাকটাসের জন্য ভাল জলনিকাশির প্রয়োজন। তাই ক্যাকটাসের টবের নীচে একাধিক ছিদ্র করে দিতে হবে, যাতে গাছের গোড়ায় জল জমে না যায়। ক্যাকটাসের টবের নীচের ছিদ্র দিয়ে যদি ক্যাকটাসের শিকড় বেরিয়ে আসে, তা হলে সেই টব পালটে ফেলুন। এমনিতেও তিন বছর অন্তর অন্তর ক্যাকটাসের টব বদলে দেওয়াই ভাল।
যত্ন নেবেন কী ভাবে
ক্যাকটাসের শিকড় পোক্ত হতে কম করেও চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। এই সময়ে ক্যাকটাসের যত্ন প্রয়োজন। খেয়াল রাখতে হবে, ক্যাকটাসের শিকড় যেন পচে না যায়। রোজ এই গাছে জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সপ্তাহে এক থেকে দু’দিন জল দিলেই যথেষ্ট।
খেয়াল রাখুন ক্যাকটাসের টবের মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে কি না। এ ক্ষেত্রে কেক চেক করার পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। একটা লম্বা কাঠি নিয়ে টবের মাটিতে ঢুকিয়ে আবার বার করে নিন। কাঠির শেষ প্রান্তে যদি মাটি লেগে থাকে, তা হলে বুঝবেন গোড়ায় জল আছে। সে ক্ষেত্রে আর জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু কাঠির আগা যদি শুকনো হয়, ঝুরঝুরে মাটি লেগে থাকে, তা হলে বুঝবেন আরও জল প্রয়োজন। ক্যাকটাসে জল দরকার হলেই দিন।
আলোও খুব জরুরি। তাই বারান্দায় বা ছাদে যেখানে আলো বা রোদ পাবে, এমন জায়গায় ক্যাকটাস রাখুন। তবে খেয়ালও রাখতে হবে। কারণ কিছু ক্যাকটাস রোদে পুড়ে মরচে রঙা হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোদ থেকে সরিয়ে ছায়ায় রাখতে পারেন।
ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে ক্যাকটাস রাখলেও মাঝেমধ্যে অর্থাৎ সপ্তাহে দু’-তিন বার রোদে দিন।
পোকামাকড়মুক্ত রাখতে বাড়িতে এক টেবিল চামচ ভিনিগার, বেকিং সোডা ও জল মিশিয়ে ক্যাকটাসে স্প্রে করতে পারেন। মাসে এক বার স্প্রে করলেই যথেষ্ট।
গোড়াতেই বিভিন্ন প্রজাতির একাধিক ক্যাকটাস না কেনা ভাল। বরং সাধারণ ক্যাকটাস এনে তার যত্ন নিন। ক্রমশ তা আয়ত্তে এলে অন্যান্য প্রজাতির ক্যাকটাসও কিনে আনতে পারেন স্বচ্ছন্দে।