এ বছরটা আলাদা হলেও আসন্ন আগমনির প্রস্তুতিতে সাজো-সাজো রব শুরু। পুজোর কেনাকাটা ও প্ল্যানিংও যে থেমে নেই, তার আঁচ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ পাওয়া যাচ্ছে। উৎসবের মরসুমে সাজগোজের ক্ষেত্রে এ বার প্রাথমিক গুরুত্ব কিন্তু সুরক্ষাবিধি। মাস্কের আবরণে সাজ ঢাকা পড়ে যাওয়ার চিন্তা, একঢাল চুল এলো না রাখতে পারার দুঃখ ম্যানেজ করতে হবে বুদ্ধি করে।
মুখ মনের আয়না
মাস্ক এ বার আবরণ নয়, আভরণ রূপেই ঢুকে পড়েছে সাজের অঙ্গে। মেকআপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদারের কথায়, এ বছর মিনিমালিস্টিক মেকআপ শুধু ফ্যাশনে ‘ইন’ নয়, জরুরিও। ‘‘সময়ের দাবি মেনে সাজগোজ যথাসম্ভব ন্যাচারাল রাখা দরকার এ বছর। মেকআপ ন্যাচারাল না রাখলে তা বারবার টাচ-আপ করার দরকার পড়ে, যা এই পরিস্থিতিতে আনসেফ। তাই মিনিমাম সাজে প্রেজ়েন্টেবল হয়ে উঠতে হবে,’’ বললেন অনিরুদ্ধ। দিলেন কিছু মেকআপ টিপসও—
• মাস্ক পরিহিত মুখে আই-মেকআপকে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। ব্রাইট, ইলাবরেট আই মেকআপই এ বার সাজে প্রধান।
• মাস্ক পরলে ঘাম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই মেকআপের বেস লাইট হওয়া দরকার। ভারী ফাউন্ডেশন এড়িয়ে চলুন। জেল বেসড মেকআপ করতে পারেন, হয়ে গেলে সেটিং স্প্রে দিয়ে নিন, স্টে করবে অনেকক্ষণ।
• সিঙ্গল টোনড আইশ্যাডো, কাজল আর মাসকারাই যথেষ্ট আই মেকআপের জন্য। আইব্রো লাইন এঁকে সামান্য কাজল স্মাজ করে মাসকারা লাগিয়ে নিন। মাস্কের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে আইশ্যাডো পরুন।
• লিপকালার নুড বা সেমি-নুড রাখাই ভাল। তা ম্যাট না হলে আবার মাস্কের ভিতরের অংশে স্মাজ হয়ে যেতে পারে। নিজস্ব লিপস্টিক ক্যারি করুন। মাস্ক খুলতে হলে এক শেড লাগিয়ে নিন।
• লিনেনের মাল্টি-লেয়ার ডিজ়াইনার মাস্ক পরলে, তার সঙ্গে মিলিয়ে টিপ বা বিন্দি পরে সম্পূর্ণ করুন আপনার এথনিক লুক।
এলোকেশে এল বাধা
চুলের স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের টাই-আপের পরামর্শ দিচ্ছেন হেয়ারস্টাইলিস্টরা। স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে পারেন কিছু সহজ নিয়ম—
• ছোট চুল খুলে রাখতে পারেন কিন্তু তা যেন বারবার কপালে এসে না পড়ে। ফ্রন্ট রো ব্রেড করে স্টাইলিং করুন। হাইলাইটসেও নজর কাড়তে পারে আপনার ছোট চুল।
• চুলের দৈর্ঘ্য বেশি হলে এথনিক সাজের সঙ্গে একটা টাইট, নিট বানই যথেষ্ট। সাইড বা মিডল পার্টিং করে চুল উপরে টেনে বাঁধতে পারেন। চাইলে খোঁপায় ফুল দিতে পারেন, কিন্তু মেটালের হেয়ার অ্যাকসেসরি এড়িয়ে চলুন।
• রোদ, ধুলোময়লা ও ভিড় এড়াতে চুল ঢেকে রাখতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে কালারফুল টার্ক, স্টোল বা ব্যান্ডানা ব্যবহার করতে পারেন। সুরক্ষাও রইল, আবার লেয়ার করেও পরা যাবে পোশাকের সঙ্গে।
অ্যাকসেসরির আধিক্য নয়
ধাতব গয়নার মাধ্যমে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকায় এ বারের সাজে অ্যাকসেসরির ব্যবহারও ন্যূনতম হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে একটা বড় নেকপিস কিংবা আঙুলে স্টেটমেন্ট রিংই যথেষ্ট। মাস্কের আড়ালে কানের দুল ঢাকা পড়ে গেলে হুপস ট্রাই করতে পারেন। তবে মোটের উপরে খুব বেশি অ্যাকসেসরাইজ় করার পক্ষপাতী নন অনিরুদ্ধ চাকলাদার। ‘‘পোশাক এমন ভাবে বাছুন, যাতে তার সঙ্গে অতিরিক্ত অ্যাকসেসরি পরার প্রয়োজন না হয়। বরং মাস্ককে অ্যাকসেসরি হিসেবে ট্রিট করতে হবে এখন। পোশাকের সঙ্গে কনট্রাস্ট কিংবা ম্যাচ করে কালারফুল মাস্ক ব্যবহার করুন। তবে মাস্ককে বিউটিফাই করলেও আমার কাছে মাস্ক ইজ় আ সাইন অব রেস্ট্রিকশন। তাই এই সময়টাকে সম্মান করে সাজগোজ, গয়নাগাঁটি সবেতেই মিনিমালিস্টিক অ্যাপ্রোচ রাখাই ভাল,’’ বললেন তিনি।
উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য সম্মেলন। তাই এই আনন্দে সাজ ও সুরক্ষা দুই-ই যাতে প্রাধান্য পায়, সে দায়িত্ব আমাদেরই।
মডেল: অনুষা বিশ্বনাথন, মুনমুন রায়, অনন্যা দাস, ছবি: অমিত দাস, মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত, পোশাক: মেঘা গর্গ, কোমল সুদ, মাস্ক: অভিষেক দত্ত, অন্বেষা ভট্টাচার্য: লী অ্যান্ড লু, গয়না: অরাম, ফুড পার্টনার: রং দে বসন্তী ধাবা