water

গরমে জলের জায়গায় চা-কফি-ঠান্ডা পানীয়? কী বিপদ অপেক্ষা করছে জানেন?

জলের বদলে ঘন ঘন চা-কফি-ঠান্ডা পানীয়ের অভ্যাস জমতে জমতে এক সময় সমস্যা মহীরূহ হিসেবে দেখা দেয়। জানেন কেন?

Advertisement

সুজাতা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ১৭:৪৮
Share:

জলের বিকল্প হিসেবে চা-কফি-ঠান্ডা পানীয় খাওয়াই ডেকে আনছে বিপদ। ছবি: শাটারস্টক।

গরমে জল তেষ্টা বাড়ে, এ আর নতুন কথা কী! তবে অনেক সময়ই গলা ভেজাতে জলের তুলনায় চা–কফি বা নরম পানীয় খাওয়ারও চল রয়েছে৷ কিন্তু তীব্র গরমে জলের চাহিদা মেটাতে যে সব পানীয়কে আঁকড়ে ধরছেন তারাই অজান্তে কী পরিমাণ ক্ষতি করচে জানলে এ অভ্যাসে নিজেই দাঁড়ি টানবেন।

Advertisement

এ সব ভুলের পরিণতিতে অনেক সময়ই শরীরে দেখা যায় হালকা জলশূন্যতা৷ কিন্তু তা খুব একটা গুরুত্ব পায় না৷ অল্পস্বল্প সমস্যায় চোখে পড়ার মতো কোনও লক্ষণও থাকে না৷ কিন্তু দিনের পর দিন তীব্র গরমে জলের বদলে ঘন ঘন চা-কফি-ঠান্ডা পানীয়ের অভ্যাস জমতে জমতে এক সময় সমস্যা মহীরূহ হিসেবে দেখা দেয়।

হালকা জলশূণ্যতার লক্ষণ

Advertisement

জলশূন্যতার সমস্যা শরীরে দানা বাঁধতে বাঁধতে এক সময় দেখা যায়, চামড়া কুঁচকে, কিডনি খারাপ হয়ে যাচ্ছেতাই কাণ্ড শুরু হয়েছে শরীরে৷ রোগী নেতিয়ে পড়েন, প্রস্রাব খুব কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়৷ ঘুমের ঘোরের মধ্যে মৃত্যুও ঘটতে পারে।

আরও পড়ুন: ফ্যাটি লিভার, সিরোসিসকে ভয়? কেবল খাদ্যাভ্যাসে বদল যথেষ্ট নয়, মানতে হবে এ সবও

হালকা বা মাঝারি জলশূন্যতায় কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে জানেন? চিকিৎসকদের মতে, অসম্ভব ক্লান্তি, ঘুম–ঘুমভাব, মাথা টিপ টিপ, মাঝে মাঝে মাথা ঘোরা, গলা শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা হালকা থেকে গাঢ় হলুদ প্রস্রাব হওয়া, পেট পরিষ্কার না হওয়া, চামড়ায় রুক্ষ টান ধরা এমনকি শিশুদের ক্ষেত্রে হঠাৎ চোখে পড়ার মতো অস্থিরতা বা দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়া এই সমস্যার প্রচলিত কিছু লক্ষণ।

কেন হয়

জল কম খাওয়া হল প্রধান কারণ৷ তার সঙ্গে প্রচুর ঘাম বা লুজ মোশন হলে এমন সমস্যা বাড়ে৷ এর উপর যদি শরীর থেকে জল বার করে দেয় তেমন জিনিস বেশি করে খেতে শুরু করেন, যেমন কফি–ঠান্ডা পানীয়–মদ— বিপদ এতে বাড়ে৷ এদের বলে ‘ডাইইউরেটিক’৷ অর্থাৎ খেলে বার বার প্রস্রাব পায়৷ আর প্রস্রাব হচ্ছে বলে সবাই ধরে নেন সব ঠিক আছে৷ কিন্তু আসলে বিপদ বাড়ে৷ কাজেই এ সব খেতে চাইলে পরিমিত পরিমাণে খান সঙ্গে জলটাও খান শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত।

‘এই সমস্যা উস্কে দিতে মদ্যপানের ভূমিকা আর এক কাঠি উপরে,’ জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী৷ ‘শরীর থেকে জল টেনে নিতে সে একাই একশো৷ যেটুকু জল মদের সঙ্গে পেটে যায় বার বার বাথরুমে যেতে যেতে তার কয়েক গুণ বেরিয়ে যায়৷ তার উপর সকালের হ্যাংওভার কাটাতে কফি খাওয়ার চল বহু পুরনো৷ বিজ্ঞানীরা বলেন, হ্যাংওভারের মূলেও জলশূন্যতার কিছুটা হাত থাকে৷ তার উপর কফি পড়ায় সাময়িক চাঙ্গা ভাব এলেও জলের ঘাটতি আরও বাড়ে৷ তার পর জল খাওয়া না বাড়িয়ে ক্লান্তি ও ঘুমঘুম ভাব কাটাতে কফি–চা-ঠান্ডা পানীয়কে সঙ্গী করলে ভাল মতো জলশূন্যতা হতে পারে৷’

আরও পড়ুন: টিভি-মোবাইলের আসক্তি তো বটেই, এ সব অভ্যাসও কিন্তু আপনার দৃষ্টিশক্তি কমায়

তেষ্টার সময় জলেই থাক আস্থা।

কী কী করণীয়

প্রস্রাবের পরিমাণ ও রং যত ক্ষণ না স্বাভাবিক হচ্ছে জল খাওয়া চালিয়ে যান৷ অবশ্য যদি কিডনির অসুখ না থাকে৷ ফলের রস, স্যুপ, ডাবের জল, নুন–চিনির শরবত খান এক–আধবার৷ ডায়াবিটিস, হাইপ্রেশার, মেদবাহুল্য জাতীয় সমস্যা থাকলে, বুঝেশুনে ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাবেন৷ চা-কফির বদলে ঠান্ডা জল ও মাঝেমধ্যে এক–আধ কাপ চা খান৷ মদ্যপানের ইচ্ছে মাথাচাড়া দিলে তার আগে ও পরে অল্প অল্প করে জল খেতে থাকুন৷ হালকা খাবার খান৷ পেটের গোলমাল হলে কিন্তু বিপদ বাড়বে৷ রোদে একটু কম যান৷ বেশি ঘাম হলে সমস্যা বাড়বে৷ বিশ্রাম নিন৷ চেষ্টা করুন খুব গরমের ক’দিন ঠান্ডা ঘরে বসে ব্যায়াম করতে। সম্ভব না হলে ব্যায়াম ক’দিন বাদ থাকুক৷ কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে ভাববেন না৷ জল খেতে থাকুন৷ জলশূন্যতা সেরে গেলে এও কমবে নিজের নিয়মে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement