আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ও গবেষণা থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যানসারকে নিরাময় করতে পারে বলে দাবি চিকিৎসকদের। ছবি: শাটারস্টক।
ক্যানসারের নামেই আতঙ্কে ভুগতে থাকেন অধিকাংশ মানুষ৷ মৃত্যুভয়, খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা, শারীরিক কষ্ট সব মিলে এই চিন্তা খুব অমূলকও নয়। তবে চিকিৎসকদের মতে, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ও গবেষণা এই অসুখ সম্পর্কে ভয় ও ধারণা অনেকটা বদলাতে সক্ষম হয়েছে।
সত্যিই কি সব ক্যানসার সমান বিপজ্জনক? মানে, গর্ভাশয়ের ক্যানসারে যত সমস্যা, মুখের ক্যানসারেও কি ততটাই? ফুসফুসে ক্যানসার হলে যতটা চিন্তার প্রস্টেটে হলেও কি ঠিক ততটাই? যদিও এই রোগ কোন পর্যায়ে আছে, কী ভাবে আছে ইত্যাদি নানা কিছুর উপরও নির্ভর করে ভাল–মন্দ ৷ তবু রোগের আক্রমণস্থলের উপর নির্ভর করেও ভয়ের দাঁড়িপাল্লায় ওজন কিছু কম-বেশি করাই যায় বলে মতপ্রকাশ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সোমনাথ সরকার। জীবনের ঝুঁকি কম, সহজে ছড়ায় না, নিয়মিত চিকিৎসায় সেরেও যায়, এমনকি অসুখ সারার পর একেবারেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন রোগী— এমন ক্যানসারের অন্যতম থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের ক্যানসার।
৪০–৪৫ বছর বয়সের পর এ রোগ হয় সচরাচর। আজকাল অবশ্য ৩০–৩৫–এও হচ্ছে। কী ভাবে এ রোগের চিকিৎসা হয়, তা জানলে এই অসুখ নিয়ে ভয়ও কাটবে অনেকটাই। মূলত কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এই অসুখ নির্ণীত হয়। ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা জানালেন তেমনই কিছু নিদান।
আরও পড়ুন: বাড়ি ফিরেও অফিসের কাজ করেন? বিপদ ডাকছেন কিন্তু, বলছে গবেষণা
অপারেশনে রোগ সেরে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে৷ তারপর থাইরক্সিন জাতীয় ওষুধ খেয়ে যেতে হয়।
পরীক্ষা–নিরীক্ষা
থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের টেকনিসিয়াম স্ক্যান করে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়। সরু সূচ দিয়ে গ্ল্যান্ড থেকে রস টেনে নিয়ে তার পরীক্ষা করা হয়, যাকে বলে ‘এফএনএসি’৷ ক্যানসার থাকলে ধরা পড়ে এতেই। থাইরোগ্লোবুলিন নামে ক্যানসার মার্কার পরীক্ষা করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে ক্যালসিটোনিন, জেনেটিক মার্কার ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়।
আরও পড়ুন: কোমর ও পিঠে ব্যথা হয় মাঝে মাঝেই? এ সব নিয়মে জব্দ করুন সহজে
চিকিৎসা
এই রোগ সাধারণত দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে ধরা পড়ে। রোগ যে পর্যায়েই ধরা পড়ুক না কেন, অপারেশনে রোগ সেরে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে৷ তারপর থাইরক্সিন জাতীয় ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। স্ক্যান করে যদি দেখা যায় শরীরের অন্যত্র রোগ ছড়িয়েছে, রেডিও আয়োডিন থেরাপি বা রেডিও আয়োডিন অ্যাবলেশন করার জন্য হাসপাতালে ২–৩ দিনের জন্য ভর্তি করে বেশি মাত্রায় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন খাওয়ানো হয়৷ তার পরও ৭–১০ দিন রোগীর শরীর থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরিত হয়৷ এই সময়টা বাড়িতে একটু সাবধানে থাকতে হয়৷ বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের থেকে দূরে থাকতে হয়৷ আলাদা করে দিতে হয় বাথরুম৷ রেডিও আয়োডিন থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তেমন নেই৷ সামান্য কিছু ক্ষেত্রে ব্লাড কাউন্ট একটু কমে যেতে পারে৷ তবে সামান্য চিকিৎসাতেই তা ঠিক হয়ে যায়৷ পুরো চিকিৎসার পর রোগ ফিরে আসার সম্ভাবনা একেবারেই কম৷ তবে কারও ক্ষেত্রে তা এলেও আবার রেডিও আয়োডিন অ্যাবলেশন করিয়ে সারিয়ে তোলা হয়।