কোন বাসন সুরক্ষিত? ছবি—শাটারস্টক
স্বাস্থ্য ও পুষ্টির কথা মাথায় রাখলে, ঘরে রান্না করে খাওয়ার কোনও বিকল্প নেই, কিন্তু রান্না–খাওয়ার কাজে কোন ধরনের বাসন ব্যবহার করছেন, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভুল বাসনে, ভুলভাবে রান্না করলে বাসন থেকে কিছু উপাদান এসে মিশে খাবারকে বিষাক্ত করে দিতে পারে। দেখা দিতে পারে বিভিন্ন অসুখ। কাজেই আসুন, দেখে নেওয়া যাক, আমরা সচরাচর যে সব পাত্রে রান্না করি বা খাই, তা কতটা নিরাপদ।
অ্যালুমিনিয়াম
অক্সিডাইজ করা থাকে বলে এতে রান্না করা যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে গরম খাবার রাখলে বা এতে জড়িয়ে রান্না করলে কিন্তু সে খাবার দূষিত হতে পারে। খাবারে লেবু, টমেটো বা ভিনিগারের মতো টক কিছু মেশানো থাকলে তো বিশেষ করে। কম বয়সে অ্যালঝাইমার্স ও পার্কিনসন্স ডিজিজ দেখা দেওয়ার মূলে এই ধাতুটির ভূমিকা রয়েছে। ‘খাবার প্যাক করার কাজে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের বদলে পার্চমেন্ট কাগজ ব্যবহার করুন। আর রান্নায় ফয়েলের মতো সুবিধা পেতে কাচের পাত্রে তেল ব্রাশ করে নিন।’ জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ বিজয়া আগরওয়াল।
নন–স্টিক প্যান
১৯৪৬ সালে টেফলন কোটিংয়ের হাত ধরে সে প্রথম আসে বাজারে। তারপর একে একে সিলভারস্টোন, টেফাল, অ্যানোলন, সার্কুলন, সেফালন ও আরও অনেকে আসতে থাকে। মূলত অ্যালুমিনিয়মের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে এদের জুড়ে এ সব বাসন বানানো হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে এই সব উপাদানের সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, পড়াশোনার দক্ষতা কমে যাওয়া ও ওজন বাড়ার একটা যোগ আছে। কাজেই রান্নায় একটু বেশি তেল লাগলেও নিয়মিত নন–স্টিক প্যান ব্যবহার না করে নিরাপদ স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে রান্না করুন। লোহার পাত্রে করতে পারলে তা স্বাস্থ্যের জন্য আরও ভাল।
তামা
এজেন্সি ফর টক্সিক সাবস্ট্যান্স ও ডিজিজ রেজিস্ট্রি (এটিএসডিআর)–এর প্রায়োরিটি টক্সিন তালিকার বেশ উঁচুতেই রয়েছে তামার নাম। অর্থাৎ শরীরে এর পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে, ঝামেলা আছে। উল্টো দিকে আবার সুস্বাস্থ্যের জন্য এর প্রয়োজন আছে। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স–এর ডায়াটারি রেফারেন্স ইনটেক্স–এর মতে পূর্ণবয়ষ্ক মানুষের দিনে ৯০০ মাইক্রোগ্রামের মতো তামা দরকার। আর তার পরিমাণ ১০,০০০ মাইক্রোগ্রাম বা ১০ মিলিগ্রামের চেয়ে বেড়ে না গেলে কোনও ক্ষতি নেই। কাজেই এই সব বাসনপত্রে রান্না করলে কী খেলে ক্ষতি নেই।
প্লাস্টিক
প্লাস্টিক পাত্রে জল ও খাবার রাখলে এমনিতেই বিপিএ নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক তাতে মিশে যায়। আর গরম করলে তো কথাই নেই। টমেটো–ভিনিগার–লেবু রস বা নুন–তেল–ঘি–মাখনস্ খাবার প্লাস্টিক পাত্রে রাখলে বন্ধ্যাত্ব, হৃদ্রোগ, ব্রেনের কিছু অসুখ ও ক্যান্সারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। ওজন বাড়ার আশঙ্কাও থাকে।
মেলামাইন
প্লাস্টিকের চেয়ে অনেক ভাল। তবে এতে খাবার গরম করা বা রান্না না করাই ভাল, যতই তা মাইক্রোওভেন প্রুভ্ড বলা হোক না কেন।
সিরামিক
যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়। আগুন–গরম খাবার যেমন খাওয়া যায়, এতে রান্না করলেও ক্ষতি নেই। মাইক্রোওভেন, ডিশ ওয়াশার বা ব্রয়লারের তাপেও সে ঠিকঠাক থাকে। দেখতেও সুন্দর। তবে মেলামাইনের তুলনায় দাম একটু বেশি।
বোন চায়না ও পোর্সেলিন
ডিনার সেট হিসেবে অনবদ্য। মাইক্রোওভেনে খাবার গরম করতেও ব্যবহার করতে পারেন। পোর্সেলিন দেখতে ভাল, টেকসই, নিরাপদ। মাইক্রোওভেন, সাধারণ ওভেন বা ডিশ ওয়াশারে ব্যবহার করতে পারেন আরামসে। তবে অনেক পোর্সেলিনের বাসনে সৌন্দর্যের খাতিরে বিভিন্ন ধাতু দিয়ে একটু ডিজাইন করা থাকে। সেক্ষেত্রে কিন্তু তা আর মাইক্রোওভেনে ব্যবহার করা যাবে না।
মাটি বা পাথরের বাসন
আগেকার দিনে মাটির হাড়িতে ভাত রান্না করার চল ছিল। জল রাখা হত মাটির কলসি বা কুঁজোতে। পাথরের বাসনে খেতেন কেউ কেউ। ঠাকুরের নৈবেদ্য দেওয়া হত পাথরের বাসনেই। আজকাল অনেকে শখ করে এ সব ব্যবহার করেন। ক্ষতি কিছু নেই। তবে বাসনের রূপ–গুণ অক্ষুণ্ণ রাখতে চাইলে তাকে মাইক্রোওভেন থেকে দূরে রাখবেন।
আরও পড়ুন : হোয়াটসঅ্যাপে ভয়! ‘দল’ বদলে দলে দলে সিগন্যাল আর টেলিগ্রামে
আরও পড়ুন : হাঁটাহাঁটির অভ্যাসকে মজাদার বানাবেন কী ভাবে?
কাটিং বোর্ড
ছুড়ি দিয়ে সবজি কাটতে হলে চাই কাটিং বোর্ড। পরিষ্কার রাখার সুবিধার জন্য আমরা সচরাচর প্লাস্টিকের বোর্ড ব্যবহার করি। ‘ভাল করে পরিষ্কার না করলে কিছু দিন পরই এর খাঁজে খাঁজে ই–কোলি, সালমোনেলা জাতীয় জটিল জীবাণুর বাড়–বৃদ্ধি হয়। তা সবজিতে মেশে। রান্নার তাপে তারা সব সময় মরে না। ফলে খাবারের মাধ্যমে অন্ত্রে বাসা বাঁধলে জটিল পেটের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই কাঠের বা রবারের কাটিং বোর্ড ব্যবহার করা ভাল, যেখানে এ সব জীবাণু জন্মাতে পারে না।’ জানালেন পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা মিশ্র