উৎসবও হোক পরিবেশবান্ধব। ছবি: সংগৃহীত।
দোলের প্রস্তুতি প্রায় সারা। শহরের আনাচকানাচে লেগেছে রঙের ছোঁয়া। প্রকৃতিও সেজে উঠেছে শিমূল, পলাশের রঙে। দোল বলুন বা হোলি, সে দিন শুধু নিজে রং মাখলেই তো হবে না! প্রিয়জনের গালে ফাগের রং লাগিয়ে দেওয়া মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এই উৎসবের আনন্দ। আবির, কাচের শিশিতে ভরা গাঢ় লাল, বেগনি, বাঁদুরে রং, তরল রঙে ভরা বেলুন, হরেক রকমের পিচকিরি ছাড়া দোল ভাবাই যায় না। তবে, কৃত্রিম রাসায়নিক দেওয়া রং কিন্তু ত্বক, চুলের পাশাপাশি পরিবেশেরও প্রচুর ক্ষতি করে। প্লাস্টিকের তৈরি জিনিস পচনশীল নয়। তাই সহজে মাটিতে মেশে না। প্লাস্টিকজাত জিনিস পুনর্ব্যবহারও করা যায় না। দোল মিটে গেলে সেই সব জিনিস পড়ে থাকে রাস্তায়, নর্দমায়। তার ক্ষুদ্র কণা মাটিতে, জলে মিশতে থাকে। সেখান থেকেই দূষণ ছড়ায়। নিজেদের তো বটেই, আমরা অজান্তেই বিপদের মুখে ঠেলে দিই প্রাণিকুলকে। রঙের উৎসব যেন বিষাদের না হয়, বসন্তের রঙের ছোঁয়া যেন সকলের মনে সারা বছর জুড়েই থাকে। তাই এই বছর দোল উৎসব পালন করুন, কিন্তু কারও ক্ষতি না করে।
কোন উপায়ে পরিবেশবান্ধব দোল উদ্যাপন করা সম্ভব?
১) ভেষজ রং:
ত্বক, চুলের কথা ভেবে ইদানীং অনেকেই দোলে ভেষজ রং মাখেন। যার বেশির ভাগটাই তৈরি হয় কাঁচা হলুদ, চন্দনের গুঁড়ো, হেনা, ফুলের পাপড়ির মতো প্রাকৃতিক জিনিস দিয়ে। রাসায়নিকের ছোঁয়াও থাকে না এই সব রঙে। তাই পরিবেশের কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
২) প্লাস্টিক বাদ:
পিচকিরি, বেলুন, বালতি, মগ— রং খেলার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার বেশির ভাগই প্লাস্টিক, রবার দিয়ে তৈরি। এগুলিও কিন্তু পরিবেশের জন্য নিরাপদ নয়। তাই ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারলেই ভাল হয়।
৩) পরিবেশবান্ধব থালা-বাটি:
বাড়িতে হোক বা পাড়ার ক্লাবে— রং খেলার পর খাওয়াদাওয়ার আয়োজন তো থাকবেই। এত মানুষের খাবার পাত সাজাতে থার্মোকল বা কাগজের থালা ব্যবহার না করে বাঁশ, ঘাস, গাছের ছাল দিয়ে তৈরি ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ থালা, বাটি, গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের পর যা সহজেই মাটিতে মিশে যেতে পারে।
৪) উপহারেও থাক সবুজের ছোঁয়া:
হোলির দিন বন্ধু, পরিজনকে উপহার দেওয়ার চল রয়েছে অনেক বাড়িতেই। সেখানেও থাকতে পারে নতুনত্বের ছোঁয়া। পরিবেশবান্ধব রং, খাবার, মিষ্টি, ঠান্ডাই, ফুলের নির্যাস দিয়ে তৈরি সুগন্ধি, ভেষজ সাবান দিয়ে সাজাতে পারেন উপহারের ট্রে।
৫) জলের অপচয়:
রং ছাড়া হোলি বা দোল উৎসব পালন করা যায় না। তবে, এই উৎসবে কিন্তু প্রচুর জলের অপচয় হয়। রং গুলতে বা খেলার পর রং তুলতে— দু’ক্ষেত্রেই জল প্রয়োজন। অকারণে জলের এই অপচয় রুখতে শুকনো রং দিয়েই দোল উৎসবে মেতে উঠতে পারেন।