Holi

Safe Holi: উৎসবের রং চোখে নয়, মনেই লাগুক, বলছেন শহরের চিকিৎসকেরা

চক্ষুরোগ চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত জানাচ্ছেন, হাসপাতালগুলিতে দোল ও তার পরের কয়েক দিন চোখের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর ভিড় বেশি দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২২ ০৬:৩১
Share:

ফাইল চিত্র।

করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় শিথিল হয়েছে সরকারি নিয়ন্ত্রণ-বিধি। দোল উপলক্ষে রাতের কার্ফু তোলার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দু’বছর পরে বেপরোয়া রং খেলায় মেতে উঠতে পারেন মানুষ। এমনই আশঙ্কা চিকিৎসকদের বড় অংশের। তাই সতর্ক করে তাঁরা বলছেন, ‘‘দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হলে চোখের মতো মূল্যবান ইন্দ্রিয়ের বিপদ অবধারিত। ত্বকেরও ক্ষতি হতে পারে।’’

Advertisement

চক্ষুরোগ চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত জানাচ্ছেন, হাসপাতালগুলিতে দোল ও তার পরের কয়েক দিন চোখের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীর ভিড় বেশি দেখা যায়। এ শহরে হাজার দশেকেরও বেশি মানুষ দোলের দিন চোখে অন্ধকার দেখেন। এর বড় কারণ, রং এবং আবিরে ধাতব পদার্থের ব্যবহার। ভেষজ পাউডার দেওয়া বা চিরাচরিত অভ্র-মিশ্রিত আবির, দুটোই চোখ জ্বালা করায় আর অঝোরে জল বইয়ে দেয়।

আবির মূলত ক্ষারধর্মী। এর প্রভাবে চোখের সংবেদনশীল অংশ ঝলসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই কর্নিয়াল বার্নের অন্যতম কারণ আবির। চোখের ভিতরের এপিথেলিয়াল টিসুকে পুড়িয়ে দিতে পারে শুকনো আবির। কুমকুম ব্যবহার করা হয়, এমন আবিরে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত অভ্র বা কাচের গুঁড়োয় কর্নিয়া ছড়ে যায়। এমনকি ফুটোও হয়ে যেতে পারে।

Advertisement

জ্যোতির্ময়বাবুর কথায়, ‘‘দোলের পরে চোখের বিভিন্ন অংশের কেমিক্যাল বার্নের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। বেলুন সব চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। বেলুন ছুড়ে মারায় চোখ ফেটে কর্নিয়া বদলের ঘটনাও ঘটেছে! চোখ বাঁচাতে চশমা পরে রং খেলা ভাল। লেন্স লাগিয়ে রং খেলা উচিত নয়। উৎসবের রং চোখে নয়, মনেই লাগুক।’’ চক্ষুরোগ চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এর সঙ্গে বাড়তে থাকে কেমিক্যাল কনজাংটিভাইটিস।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, লাল রঙে থাকা পারদের যৌগ ঢুকলে চোখ ফুলে জল পড়ে, ব্যথা হয়। সবুজ রঙে থাকা কপার সালফেটে চোখ লাল হয়ে কড়কড় করে। অ্যালার্জির ফলে চোখ খুলে রাখা কঠিন হয়ে যায়। উজ্জ্বল হলুদ রঙে থাকা সিসা স্নায়ুর ক্ষতি করে। নীল রঙে আছে ‘প্রুসিয়ান ব্লু’, এটি অক্ষিপল্লব-সহ সমস্ত চোখে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। রুপোলি ও সোনালি রঙের উপাদান ক্যানসারের কারণ হতে পারে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, চোখে রং বা আবির ঢুকলে কখনওই রুমাল দিয়ে তা রগড়ানো উচিত নয়। আঁজলা করে জল নিয়ে তাতে চোখ ডুবিয়ে পিটপিট করলে অনেক ক্ষেত্রে রং বেরিয়ে যায়। দরকার পড়লে ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

চর্মরোগ চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ীর প্রশ্ন, ভেষজ আবিরের নামে বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশাসন কঠোর হয় না কেন? কোনটা ভেষজ আর কোনটা নয়, দেখছেই বা কে? তাঁর পরামর্শ, ‘‘নিজেদেরই সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, গায়ে যেন বেশি ক্ষণ রং লেগে না থাকে। দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে। রং না-উঠলে কেরোসিন বা অন্য কিছু দিয়ে ঘষাঘষি করার দরকার নেই। র‌্যাশ বেরোলে ক’দিন রোদে বেরোনো যাবে না।’’

কৌশিকবাবুর মতে, সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, কার সঙ্গে রং খেলছি। তিনি ক্ষতিকর রং ব্যবহার করছেন না, নিশ্চিত হয়ে তবেই খেলা উচিত। আর শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের বক্তব্য, ‘‘ছোটদের বাছবিচার করার বোধ থাকে না। ফলে সতর্ক হতে হবে ওদের অভিভাবকদেরই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement