Heat Strokes At Home

বদ্ধ ঘরেও ভয় হিট স্ট্রোকের, বিপদ এড়াতে চাই সচেতনতা

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রকও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে তৈরি নির্দেশিকায় জানিয়েছে, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬৪ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব না হওয়ার প্রধান কারণই হল ঠিক সময়ে শরীর ঠান্ডা না করা।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:২৯
Share:

গরমে মুখে জলের ঝাপটা দিচ্ছেন এক ট্যাক্সি চালক। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

প্রখর রোদে শুধু রাস্তায় ঘোরাঘুরি করলে নয়, বাড়িতে থেকেও হতে পারে হিট স্ট্রোক!
তাপপ্রবাহ চলাকালীন এই বিষয়টি নিয়েও সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই দেখা যায়, বাড়িতে থাকা অবস্থাতেও গরমে এমন সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। আর, তাতেও বহু সময়েই মৃত্যু এড়ানো যায় না। চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘তীব্র গরমে ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখা খুবই মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ থাকলে, তীব্র তাপের শিকার হতে পারে শরীর।’’ তবে, বাইরের রোদে থাকা অবস্থায় হিট স্ট্রোক হলে বা হওয়ার আগে যে উপসর্গ কিংবা লক্ষণ দেখা যায়, সেই একই রকমের সমস্যা ঘরে থেকে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও দেখা যায় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাই তাঁদের মতে, হিট স্ট্রোক নিয়ে সচেতনতা ও সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। কারণ দু’টির ক্ষেত্রেই প্রাথমিক চিকিৎসা একই।

Advertisement

সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রকও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে তৈরি নির্দেশিকায় জানিয়েছে, হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬৪ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব না হওয়ার প্রধান কারণই হল ঠিক সময়ে শরীর ঠান্ডা (কুলিং) না করা। ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, রাস্তায় থাকা অবস্থায় হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে যতটা দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, বাড়িতে সেটা কিছুটা সময় নিয়ে হয়। তবে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে, গরমের হাত থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে বসে থাকা নিরাপদ। বরং বাইরের তাপের কারণে ঘরের ভিতরেও গরম বাতাস তৈরি হয়, সেটিকে বাইরে বার করে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা জানাচ্ছেন, বাইরের তীব্র তাপ বাড়ির দেওয়াল বা ছাদের মাধ্যমে ভিতরে প্রবেশ করে। আর ঘরের সমস্ত দরজা-জানলা যদি বন্ধ থাকে, তা হলে ওই তাপ বেরোতে না পেরেই বিপদ তৈরি হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে পুরো ঘরটাই আস্ত ‘হিট চেম্বার’-এ পরিণত হয়। আর তাপ বাইরে বেরোতে না পেরে ওই ঘরে থাকা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। সেই সময়ে যদি শারীরিক অস্বস্তিকে অবহেলা করা হয়, তা হলেই ধীরে ধীরে ওই তীব্র তাপের প্রকোপে হিট স্ট্রোক হতে পারে।’’ প্রতিটি মানুষের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামের অংশে থাকা থার্মোস্ট্যাট। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির নির্দেশিকাতেও বলা হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবে মানবদেহের তাপমাত্রা ৯৭.৭-৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত থাকে। সেই তাপমাত্রা গরমে এবং ঠান্ডায় কতটা বাড়বে বা কমবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে হাইপোথ্যালামাস। কিন্তু তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পার করলেই বিপত্তির শুরু। আর, ঠিক সময়ে তা নিয়ন্ত্রণ না করলে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পেরিয়ে গেলে বড়সড় ঝুঁকি তৈরি হয়।

Advertisement

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঘামের কারণে লীন তাপ হারিয়ে দেহের ত্বক ও শরীর ঠান্ডা হয়। কিন্তু শুকনো গরমে শরীর থেকে জল বেরোতে শুরু করলেও ঘাম হয় না। তাতে শরীরে জলের ঘাটতি যেমন শুরু হয়, তেমনই লবণের ভারসাম্যে সমস্যা দেখা দেয়। তাতে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং হিট-শক প্রোটিন তৈরি হতে থাকে। নারায়ণের কথায়, ‘‘মস্তিষ্কের প্রোটিন নষ্ট হতে শুরু করলে, একটা সময়ের পরে তা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তার পরে খুব দ্রুত হৃৎপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস-সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বিকল হতে শুরু করে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, সকলের ঘরেই এসি থাকবে তেমনটা নয়। বদলে হাওয়া চলাচল করতে পারে, এমন ব্যবস্থা রেখে পাখা চালিয়ে থাকলেও অনেক উপকার হবে। আর বাড়িতে থেকেও গরমের কারণে মাথা ঘোরা, পেশিতে ব্যাথা, গা বমি ভাব, দুর্বল লাগতে শুরু করলে শীঘ্রই যেমন প্রচুর জল পান করতে হবে, তেমনই ভাল ভাবে স্নান করে পাখার তলায় বসতে হবে।

আর তাতেও শারীরিক অস্বস্তি না কমলে বা আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরুর প্রয়োজন বলেও জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সৌতিকের কথায়, ‘‘এমন অবস্থায় চ্যানেল করে ঠান্ডা স্যালাইন চালুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে নাকের গহ্বর বা পায়ুদ্বারের মাধ্যমে শরীরের আসল তাপমাত্রা (কোর-টেম্পারেচার)-তে নজর রাখতে হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement