Throat Pain

উপেক্ষা নয় গলাব্যথাকে

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যাগুলি অ্যাডিনয়েড বা টনসিলাইটিস থেকেও হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে ‘টনসিলেকটমি’ ও ‘অ্যাডিনয়েডেকটমির’ মতো অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।

Advertisement

ঐশী চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ ০৯:৫৯
Share:

টনসিল ও অ্যাডিনয়েডের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে অস্ত্রোপচার। প্রতীকী ছবি।

ঠান্ডা লেগে অনেকেই গলা ব্যথায় অল্পবিস্তর ভোগেন। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মূলত বাচ্চারা অত্যধিক নাক ডাকছে। নাক বন্ধ হয়ে আসা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া বা লালা পড়ার প্রবণতাও থাকে। যদিও, অনেক অভিভাবকই ভেবে বসেন, সন্তানের ওজন বেশি বা ফুসফুসে হাঁপানির সমস্যা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যাগুলি অ্যাডিনয়েড বা টনসিলাইটিস থেকেও হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে ‘টনসিলেকটমি’ ও ‘অ্যাডিনয়েডেকটমির’ মতো অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।

Advertisement

যখন অস্ত্রোপচার

ঠান্ডা লেগে টনসিল গ্রন্থিটি (গ্ল্যান্ড) ফুলে গেলে বা গলায় ব্যথা হলে সাধারণত গার্গল করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। অনেক সময়ে টনসিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তখন গলাব্যথা, ঢোঁক গিলতে অসুবিধে ঘন-ঘন দেখা দেয়। গার্গল করে বা প্যারাসিটামল খেয়েও ব্যথা কমে না। চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে স্বস্তি মিললেও ফের যন্ত্রণা দেখা দেয়।

Advertisement

ইএনটি সার্জন দীপঙ্কর দত্ত জানাচ্ছেন, যদি কারও বছরে তিন-চার বার টনসিল সংক্রমণের সমস্যা দেখা দেয় ও তার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দরকার পড়ে, যদি দেখা যায় এরকম সংক্রমণ গত দু’বছর ধরে বারবার হচ্ছে, তখন জরুরি ভিত্তিতে ইএনটি সার্জনের পরামর্শ নিন। এ ক্ষেত্রে টনসিলেকটমি অপারেশন দরকার পড়তে পারে। ঠান্ডা লাগা থেকে সাময়িক সমস্যা, এমন ধারণা নিয়ে অনেকেই টনসিলেকটমির কথা ভাবেন না। কিন্তু সমস্যা বাড়লে ‘সেপটিক ক্রনিক টনসিলাইটিসের’ মতো গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে। এটি থেকে পরে ‘রিউম্যাটিক ফিভার’ হতে পারে। দীপঙ্কর জানাচ্ছেন, রিউম্যাটিক ফিভারের ফলে হৃদ্‌যন্ত্র ও কিডনিতে গুরুতর প্রভাব পড়ে। তবে চিকিৎসকেরা এক ধরনের রক্ত-পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই সমস্যাটি ধরতে পারেন।

শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে দেখা যায়, টনসিল গ্রন্থিটি অত্যধিক বড় হয়ে যায়। একই সঙ্গে, নাক ও গলার সংযোগস্থলে থাকা অ্যাডিনয়েড গ্রন্থিটিও বড় হয়ে যায়। এই অবস্থাটির মারাত্মক প্রভাব পড়ে শিশুদের উপরে। ব্যথার জন্য খাবার গিলতে সমস্যা হয়। ফলে, খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়। পাশাপাশি, বারবার দম বন্ধ বোধ করে তারা। এ ছাড়াও ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র মতো রোগ বা অত্যধিক নাক ডাকা, নাক বন্ধ হয়ে আসা, মুখ হাঁ করে ঘুমোনোর সমস্যা দেখা দেয়। ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলার প্রবণতাও দেখা যায়। ফলে, শিশুর মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সামগ্রিক ভাবে তার বেড়ে ওঠায় সমস্যা তৈরি করে। দেখা যায়, এই বাচ্চারা স্কুলে প্রচণ্ড দুরন্তপনা করছে বা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ছটফট করছে।

সচরাচর, অ্যাডিনয়েডের সমস্যা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় না। কারণ আট থেকে দশ বছরের মধ্যে গ্রন্থিটি ছোট হয়ে যায়। তবে যদি অত্যধিক নাক ডাকা বা শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় কষ্ট বড় বয়সেও থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কারণ, সমস্যা যাই হোক, বিশেষজ্ঞের পরামর্শে টনসিল ও অ্যাডিনয়েডটি অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়াটাই শ্রেয়।

পাশাপাশি, টনসিলেকটমির ফলে পরবর্তীতে বেশি ঠান্ডা লাগবে বা গলায় স্বর পাল্টে যাবে, এমনধারণাও কিন্তু ভুল।

নির্ণয়ে নজর

  • চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় খুবই জরুরি। বাড়তি নজর দিতে হয় শিশুদের দিকে। বহু ক্ষেত্রে, শ্বাসকষ্ট দেখে অভিভাবকেরা সন্তানদের ইনহেলার ব্যবহার করান। এতে লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি।
  • রোগ নির্ণয়ে যদি দেখা যায় যে অ্যাডিনয়েড গ্রন্থিটি খুব বড় হয়নি অর্থাৎ ‘গ্রেড’ ১ বা ২-এ রয়েছে, তবে অস্ত্রোপচার জরুরি নয়। ন্যাসাল ড্রপ, অ্যালার্জির ওষুধ বা ইনহেলারের ব্যবহারে সুফল মেলে। তবে গ্রন্থিটি যদি খুব বড় হয়ে যায়, তবে তা নাকের ছিদ্রে বাধা সৃষ্টি করে। ঠিক সময় নির্ণয় ও চিকিৎসা না করালে কানের উপরেও প্রভাব পড়ে। কানে ব্যথা, ‘গ্লু ইয়ার’ অর্থাৎ কানের পর্দার পিছনে সর্দি বসার সমস্যা ও সর্বোপরি শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়।

অস্ত্রোপচারের পরে

অস্ত্রোপচারের পরে প্রথম সাত থেকে দশ দিন কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন, জানাচ্ছেন ইএনটি সার্জন অর্জুন দাশগুপ্ত,

  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
  • খুব ঠান্ডা বা গরম খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। তবে টনসিলেকটমি বা অ্যাডিনয়েডেকটমির পরে আইসক্রিম খেলে আরাম লাগে। কিন্তু এতে খুদেটির খাওয়ার ইচ্ছেটাই চলে না যায়, তা দেখতে হবে।
  • প্রথম পাঁচ-সাত দিন বাইরের জগতের সঙ্গে মেলামেশা কম করা দরকার। তাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে।
  • অস্ত্রোপচারের জায়গা থেকে সামান্য রক্তপাত হলেও সাবধান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement