পেসমেকার বসানোর পর কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
আচমকা চোখে অন্ধকার বা কয়েক মিনিটের জন্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার সমস্যা হলে অনেকেই গ্যাস বা অ্যাসিডিটিকে দোষারোপ করেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর পিছনে থাকে হৃদযন্ত্রের সমস্যা। আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে হৃদযন্ত্রে ব্লক থাকা। বলছেন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট প্রকাশকুমার হাজরা। তবে পেসমেকার বসিয়ে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
ইলেকট্রিক্যাল ইমপালসের গোলযোগ, হৃদযন্ত্রের ভালভের ত্রুটি থাকলে বা হৃদস্পন্দনের হার অতিরিক্ত কমবেশি হলে, আচমকা ব্ল্যাক আউটের আশঙ্কা থাকে। হার্টের পেশি খুব পুরু হয়ে গেলেও এমন হতে পারে। ইসিজি, স্ক্যান, অ্যাঞ্জিওগ্রাম বা বিশেষ যন্ত্র শরীরের মধ্যে বসিয়ে দিলে টানা কয়েক বছর ধরে হৃদস্পন্দন রেকর্ড করে রাখতে পারে। প্রকাশকুমার হাজরা জানালেন, ‘‘এই সব পরীক্ষা করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রোগীর পেসমেকার প্রয়োজন কিনা। পেসমেকার প্রতিস্থাপন করার পর দু’-একদিনের মধ্যেই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারেন এবং সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই মোটামুটি ভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারেন।’’
পেসমেকারের ব্যাটারি সাধারণত ৫ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কাজ করে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যাটারি বদলাতে হয়। তবে মনে রাখতে হবে, পেসমেকার বসানোর পর নিয়মিত চেক আপ করানো উচিত। কোনও রকম অসুবিধে বা কষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অনেক রোগী বা তাঁদের বাড়ির সদস্যরা সংশয়ে থাকেন, ডুয়াল চেম্বার নাকি সিঙ্গল চেম্বার— কোন ধরনের পেসমেকার লাগানো উচিত, তা নিয়ে। এই প্রসঙ্গে প্রকাশকুমার হাজরার মত, ‘‘সিঙ্গল চেম্বারে হৃদযন্ত্রের একটা চেম্বার ইলেকট্রিক ইম্পালস পায়। ডুয়াল চেম্বারে দুটো চেম্বারই পায়। অনেক সময় এই দুটোর সঙ্গে রেট রেসপনসিভ পেসমেকার জুড়ে দিয়ে রোগীকে বেশি ভাল রাখা যায়। রেট রেসপনসিভ পেসমেকার শরীরের প্রয়োজন বুঝে কমবেশি শক্তির জোগান দেয়।’’ চিকিৎসকের মতে, যে সব বয়স্ক মানুষ বাড়িতে একা থাকেন তাঁদের এক ধরনের শক্তি দরকার। একজন কমবয়সী মানুষ যিনি নিয়মিত অফিস করেন, খুব দৌড়ঝাঁপ করেন— তাঁর বেশি শক্তি দরকার। প্রয়োজন অনুযায়ী রেট রেসপনসিভ পেসমেকার বসাতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পেসমেকার বসানো হয় হৃদযন্ত্রের ব্লকের জন্যে। আর অধিকাংশ ব্লকের কারণ বয়স। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হৃদযন্ত্রের নিজস্ব ইলেক্ট্রিসিটি কমজোর হয়। কারও আগে কারও পরে।
ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট দিলীপ কুমার জানালেন, হৃদরোগ হওয়ার পরেও ব্লক হতে পারে। আবার হৃদযন্ত্রে কোনও সংক্রমণ হলে কিংবা ক্রনিক কিডনির অসুখে রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে হৃদযন্ত্র ব্লক হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও এই ঝুঁকি তৈরি হয়।
দিলীপ কুমারের মতে, বয়স বাড়লে হৃদযন্ত্রে যে ব্লকেজ হয়, তা বহু ক্ষেত্রেই খুব ধীরে ধীরে হয়। ফলে শরীর কিছুটা মানিয়ে নেয়। তাই উপসর্গ খুব একটা তীব্র হয় না। অল্প শ্বাসকষ্ট থাকে। চলাফেরা করলে বাড়ে। ক্লান্তি, দুর্বলতার সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঝিমঝিম করে মাঝেমাঝে। রোগ বাড়লে, রোগী কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখে অন্ধকার দেখতে পারেন। আচমকা মাথা ঘুরে যেতে পারে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
রক্তে পটাসিয়াম বৃদ্ধির কারণে যদি ব্লকেজ হয়, সে ক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে অবস্থা সামলে দেওয়া যায়। কোনও ওষুধ থেকে এই সমস্যা হলে, তা বন্ধ করলে সমস্যা মিটে যায়, বললেন প্রকাশকুমার। তবে অন্যদের ক্ষেত্রে পেসমেকার বসানো ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।
পেসমেকার বসানোর পর কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। যেমন, শরীরের যে দিকে পেসমেকার বসানো আছে, সে দিকে মোবাইল ফোন না রাখা। এ ছাড়া সঠিক সময়ে খাওয়া, উত্তেজনা কমানো, ওজন বাড়তে না দেওয়ার জন্য নিয়ম করে হাঁটা ও প্রাণায়াম করা। এইসব নিয়ম মেনে চলতে হবে। না হলে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।