খাবারে যেমন পরিমাণমতো নুন না হলে তার স্বাদ সম্পূর্ণ হয় না, তেমনই বাথটাবে বাথ সল্টস না থাকলে এর উপযোগিতা বোঝা সম্ভব নয়। মধ্যবিত্ত পরিবারে ‘বাথ সল্টস’-এর ব্যবহার মানে ধরে নেওয়া হয় বিলাসিতার ফিকির। ব্যাপারটা কিন্তু আদপেই তা নয়। রোজের সাদামাঠা জীবনেও বাথ সল্টস ব্যবহার করতে পারেন।
• প্রাথমিক উপযোগিতা: মূলত ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (এপসম সল্ট) বা সি সল্ট থেকে বাথ সল্টস তৈরি হয়। মাথাব্যথা, পেশি-জয়েন্টের ব্যথা, আড়ষ্টতা, রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা, শুষ্ক ত্বক... বিবিধ সমস্যার উপশমে সাহায্য করে বাথ সল্টস।
• ডিটক্স বাথ: সাধারণত এপসম সল্ট এই বাথে ব্যবহার করা হয়। মূল উদ্দেশ্য, শরীর থেকে টক্সিন বার করে স্ট্রেসমুক্ত করা। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ও ওজন কমাতে ডিটক্স বাথ সহায়ক। শরীরে ম্যাগনেসিয়াম ও সালফেটের আত্তীকরণেও এই বাথ উপযোগী। যাঁদের শরীরে এই দু’টি মিনারেলের ঘাটতি রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা গিয়েছে, বাথ সল্টস কাজে দিয়েছে।
এপসম সল্ট দিয়ে ডিটক্স বাথ তৈরির পদ্ধতি: একটি সাধারণ সাইজ়ের বাথটাবের মধ্যে গরম জলে দু’কাপ এপসম সল্ট ঢেলে দিন। কল খুলে সল্ট ঢালতে পারেন। এতে তা তাড়াতাড়ি জলে দ্রবীভূত হয়। অন্তত ১২ মিনিট বাথটাবে কাটান। কোষ্ঠর সমস্যার জন্য ২০ মিনিট।
এসেনশিয়াল অয়েল যেমন ল্যাভেন্ডার বা পিপারমেন্টও এর সঙ্গে যোগ করতে পারেন। তাতে অ্যারোমাথেরাপির মতো পরিবেশ তৈরি হবে। মুড ভাল করার জন্যও এটি উপযোগী।
• পেশির ব্যথা কমাতে: ডিটক্স বাথ এ ক্ষেত্রেও উপকারী। কাজে দেওয়ার জন্য অন্তত ১২ মিনিট বাথটাবে থাকতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি আরাম পাওয়ার জন্য দারুচিনি কাণ্ডের ডায়ালুটেড এসেনশিয়াল অয়েলের কয়েক ফোঁটা দিতে পারলে ভাল হয়।
• ইনফ্ল্যামেশন ও ত্বকের অন্য সমস্যায়: এগজ়িমা, সোরায়াসিস, কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস এর মতো রোগে ত্বকের বিবিধ সমস্যা দেখা যায়। সে সব ক্ষেত্রে বাথ সল্টসের উপকারিতা পাওয়া গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্তত ২০ মিনিট বাথটাবে থাকতে হবে। এর সঙ্গে চাইলে কোনও ধরনের ভেজিটেবল অয়েল মেশানো যেতে পারে। তাতে ত্বক ময়শ্চারাইজ়ড হয়। ডা. সন্দীপন ধরের কথায়, ‘‘ব্ল্যাক-সি ট্রিটমেন্ট থেকেই বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এই পদ্ধতি এসেছে।’’
• শুষ্ক ত্বক ও চুলকানির জন্য: এ ক্ষেত্রে বাথ সল্টের সঙ্গে মেশানো যেতে পারে অলিভ অয়েল। এ ছাড়াও ত্বকের পুষ্টির জন্য আমন্ড অয়েল, ওটমিল্ক, পাউডার মিল্ক মেশানো যেতে পারে। শুষ্কতার সমস্যাও কমে। ত্বক ময়শ্চারাইজ়ডও হয়। সপ্তাহে অন্তত তিন-চার বার এই বাথ নিতে হবে। অন্তত ১২ মিনিট মতো বাথটাবে থাকতে হবে।
• আর্থ্রাইটিসের ব্যথায়: ব্যায়ামের পরে বাথ নিতে পারেন। অন্তত ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখতে হবে। বাথ সল্টের সঙ্গে আদার এসেনশিয়াল অয়েল ও গরম জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে পারেন। পা ডুবিয়ে রাখতে না চাইলে জয়েন্টে ঘষে লাগানো যেতে পারে।
বাথ সল্ট শুধু বাথটাবেই নয়...
মধ্যবিত্ত বাড়িতে বাথটাব সচরাচর থাকে না। তা বলে স্পা বা সালঁর বাথটাবই ভরসা, এমনও নয়। বাথ স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার হোক এটি।
কী ভাবে তৈরি করবেন এই স্ক্রাব?
• একটি ঢাকা দেওয়া পাত্রে এক কাপ এপসম সল্ট, ১/৩ কাপ আমন্ড অয়েল, নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ও এক টেবিল চামচ ভিটামিন ই অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পছন্দের এসেনশিয়াল অয়েল দশ ফোঁটা মিশিয়ে নিন। এক্সফোলিয়েশনের জন্য স্ক্রাব উপকারী।
• বাথরুমের মেঝেতে বাথ সল্ট ছড়িয়ে দিতে পারেন। গরম জলে মিশে গেলে সুন্দর সুবাস ছড়িয়ে পড়বে। বাড়িতে অ্যারোমাথেরাপির ‘ফিল’ আনতে পারবেন।
• বাথটাব না থাকলে পা, হাত ও শরীরের বাকি অংশ আলাদা আলাদা ভাবে বাথ সল্ট মেশানো জলে ধুয়ে নেওয়া যায়।
প্রসাধনী দ্রব্য হিসেবে নয়, শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করতে এবং অঙ্গ সচল রাখতে বাথ সল্টসের জুড়ি নেই।