যে সব রোগে ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা নেয়, তার মধ্যে অন্যতম ডায়াবিটিস। যাঁদের সুগারের মাত্রা মোটে বর্ডার লাইন পার করেছে, তাঁরা খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরচর্চার মাধ্যমেই তা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলতে পারবেন। আপনার শরীরে শর্করার মাত্রা দেখে চিকিৎসক বলে দেবেন, কোন পদ্ধতিতে তা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তার আগে জানতে হবে কেন ডায়াবেটিক রোগীদের এক্সারসাইজ় করতে বলা হয়। শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে ইনসুলিন ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে শরীরে গ্লুকোজ়ের মাত্রা বাড়তে থাকে। ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যায়াম জরুরি। সুগারের রোগীদের মধ্যে মুড সুইংয়ের প্রবণতা থাকে। এই জন্যও ব্যায়াম উপকারী। এক্সারসাইজ়ের ফলে যে হরমোনাল পরিবর্তন হয়, তাতে শরীর-মন তরতাজা থাকে।
ব্যায়ামের মধ্যে কার্ডিয়ো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, সাঁতার— যেটা পছন্দ বেছে নিন। দিনে ২০-৩০ মিনিট হাঁটবেন। প্রথমে ঘড়ি ধরে এক মিনিট জোরে হাঁটুন। তার পর এক মিনিট নিজের স্বাভাবিক গতির হাঁটায় ফিরে যান। এই ভাবে মিনিট কুড়ি করলেই যথেষ্ট। বয়স্ক ব্যক্তিরা টানা ২০ মিনিট জগিং না করে, একটু হেঁটে ফের জগিং শুরু করুন। কেউ অ্যারোবিক্স, জ়ুম্বাও করতে পারেন।
তবে ফিটনেস এক্সপার্ট সৌমেন দাস এটাও স্পষ্ট করে দিলেন, ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে শুধু হাঁটা বা জগিং যথেষ্ট নয়, ‘‘রোজ অনেক হেঁটে নিলাম আর ভাবলাম আমি সুগার লেভেল কন্ট্রোল করে ফেলব, এমন হয় না। স্ট্রেংদেনিং এবং টোনিং খুব জরুরি। এই হাঁটাহাঁটির ফলে আমাদের মাসল আলগা হয়ে যায়। আর এমনিতেও ডায়াবেটিক রোগীদের মাসল লুজ় হতে শুরু করে। তার জন্য পেশির জোর বাড়াতে হবে এবং টোনিংও জরুরি।’’
কেমন ভাবে স্ট্রেংদেনিং এবং টোনিং এক্সারসাইজ় করতে হবে, সেটাও বুঝিয়ে দিলেন তিনি। গোটা শরীরের ব্যায়াম এক দিনে সম্ভব নয়। এক দিন শোল্ডার, ট্রাইসেপ, সাইড-ইনার থাইয়ের ব্যায়াম করা যেতে পারে। অন্য দিন চেস্ট, বাইসেপ, আপার থাই, হ্যামস্ট্রিং— এগুলোর ব্যায়াম করা যায়। এই ওয়ার্কআউট শুরু করার আগে একটু ওয়ার্মআপ, স্ট্রেচিং করে নেওয়া জরুরি।
কাঁধের ব্যায়ামের জন্য সিঙ্গল হ্যান্ড, ডাবল হ্যান্ড শোল্ডার প্রেস করা যায়। ট্রাইসেপ প্রেসও করতে হবে।
থাইয়ের মাসলের জন্য স্কোয়াটে খুব ভাল উপকার পাওয়া যাবে। প্রথমে ২০টা করে তিন সেট। তার পর কাউন্টিং বাড়াতে হবে। সিঙ্গল লেগ ডেডলিফট করুন। ২০ কাউন্টে তিন সেট। এটি ধীরে ধীরে করবেন।
চেস্টের জন্য ছেলেরা ডন দিতে পারেন। মেয়েদের হ্যান্ড বাটারফ্লাই মুভমেন্টে কাজ হবে।
পেটের অংশের জন্য ক্রাঞ্চ এবং প্লাঙ্ক যথেষ্ট।
মনে রাখবেন, সব ব্যায়াম সকলের জন্য নয়। ‘‘যে কোনও বয়সে এখন ডায়াবিটিস হয়। বয়স দেখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বিচার করে, অন্যান্য রোগ আছে কি না, জেনে নিয়ে এক্সারসাইজ় রুটিন ঠিক করা হয়। জিমে না গিয়ে বাড়িতেই সবটা করা সম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ জরুরি,’’ মন্তব্য সৌমেন দাসের।
কেন ডায়াবিটিস হয়েছে, সেই কারণটাও নির্ণয় করতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীরা কখনওই খালি পেটে ব্যায়াম করবেন না। হালকা খাবার খেয়ে, তার এক ঘণ্টা পরে শারীরচর্চা করুন। সকালে হাঁটতে যাওয়ার আগে হালকা কিছু খেয়ে যাবেন। এক দিকে ওষুধ, ইনসুলিন চলছে আবার হাঁটাহাটিও করছেন, সে ক্ষেত্রে সুগার লেভেল নেমে গিয়ে আচমকা বিপদও ঘটতে পারে। তাই সে দিকে নজর রাখতে হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।