COVID 19

Covid Hero: পিঠে স্যানিটাইজারের পাত্র, ঘর সামলে পাড়া জীবাণুমুক্ত করতে যাচ্ছেন গৃহবধূ

লোপামুদ্রার দাবি, অনেক ডেকেও তরুণ-তরণীদের সাহায্য পাননি। নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখে তাঁরা নিরাপদে থাকতে চাইছেন।

Advertisement

সুমন রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২১ ১০:২৯
Share:

পাড়া জীবাণুমুক্ত করতে চলেছেন লোপামুদ্রা। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির রান্না, পরিবারের কাজ সেরে বেশির ভাগ গৃহবধূ যে যে ধরনের কাজ করে বাকি দিনটা কাটান, খড়্গপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লোপামুদ্রা চট্টোপাধ্যায়ের দিনটা তার চেয়ে কিছুটা আলাদা ভাবে কাটছে আজকাল। আজকাল মানে, গত ২-৩ মাস। বাড়ির সব কাজ সেরে লোপামুদ্রা পিঠে তুলে নেন স্যানিটাইজার ভর্তি পাত্র। এর পরে টুপি, মাস্ক, দস্তানা পরে বেরিয়ে পড়েন কোভিড থেকে যাঁরা সেরে উঠেছেন, তাঁদের বাড়ি স্যানিটাইজ করতে। কোনও দিন সঙ্গে থাকেন আরও কয়েক জন গৃহবধূ। কোনও কোনও দিন একাই।

Advertisement

২০১৬ সাল থেকে ‘খড়্গপুর দিশা ফাউন্ডেশন’ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লোপামুদ্রা। প্রথম বছর তিনেক মফস‌্সলের আর পাঁচটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মতোই জীবন কেটেছে এই সংগঠনের কর্মীদের। ফি-সপ্তাহে দুঃস্থ শিশুদের খাওয়ানো, কখনও রক্তদান শিবির, আর মাঝে সাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু ২০২০-র গোড়ায় বাড়তি কিছু দায়িত্ব এসে পড়ল।

কোভিড। লকডাউন। রোজগার নেই অনেকের। ঠিক হল সংগঠনের কর্মীরা চাঁদা দিয়ে দুঃস্থ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করবেন। সেই শুরু। কোভিড-ত্রাণের কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন লোপামুদ্রা। চলতি বছর কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ এসে পড়ার পরেও চলছিল সেই কাজ। কিন্তু তার পরে ‘পিঠে’ তুলে নিতে হল অতিরিক্ত দায়িত্ব। স্যানিটাইজার ভর্তি পাত্র।

Advertisement

বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্যানিটাইজ করার কাজ শুরু করলেন কেন? লোপামুদ্রার দাবি, অনেক ডেকেও তরুণ-তরণীদের সাহায্য পাননি। ‘‘আমার সন্তানতুল্য ছেলেমেয়েরা, কোভিড পরিস্থিতিতে যাঁদের বেশি করে এগিয়ে আসার কথা, তাঁরাই আসছেন না। নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখে তাঁরা নিরাপদে থাকতে চাইছেন। সবাই যদি নিরাপত্তাটাই বেছে নেন, তা হলে অন্য মানুষের পাশে থাকবেন কারা?’’ অভিযোগ লোপামুদ্রার গলায়।

তবে এই কাজের জন্য তিনি কৃতজ্ঞ তাঁর সঙ্গী অন্য গৃহবধূদের কাছেও। অসীমা, শম্পা, মঞ্জুশ্রী, বন্দনারাও লোপামুদ্রার মতোই প্রথম থেকে এগিয়ে এসেছেন এই কাজে। গত বছরে দুঃস্থদের জন্য রান্না দিয়ে শুরু হয়েছিল যে কাজ, তার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে এই গৃহবধূদের বাড়ি বাড়ি স্যানিটাইজ করার লড়াই। ‘‘জয়া দাস সিংহ এ রকম একটা উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। আমরাও দেখলাম, এই কাজটা করার মতো কাউকে যখন পাচ্ছি না, তখন আমাদেরই যেতে হবে,’’ বলছেন লোপামুদ্রা।

‘‘রক্তদান শিবির হলেও এখন আর তরুণ-তরুণীদের পাই না। সব কিছু থেকেই যেন নিজেদের সরিয়ে রেখেছে তথাকথিত শিক্ষিত যুবসমাজ। কোভিড পরিস্থিতিতে এটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল,’’ কিছুটা হতাশা লোপামুদ্রার গলায়। তবে হতাশার মেয়াদ অল্পক্ষণই। তার মধ্যেই সেরে ফেলেন বাড়ির কাজ। তার পরে আবার পিঠে স্যানিটাইজারের পাত্র। টুপি-মাস্ক-দস্তানা। হাতে স্প্রে করার নল। কোমর বেঁধে গলির মুখে নেমে আসেন কয়েক জন গৃহবধূ। এ পাড়া ও পাড়ায় শুরু হয় জীবাণুনাশের কাজ। সব হতাশা নিজেদের ঘরে রেখে এসে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement