নিজস্ব চিত্র
অসময়ে অনেকে এসে পাশে দাঁড়ান না ঠিকই। তবু সমাজের কিছু নিয়ম আছে। তাই ভাবনাও থাকে। ফলে আত্মীয়-বন্ধু এসে কখনও বা সাহায্য করে যান। কিন্তু সামাজিক নিয়মের বাইরেও যে কিছু মানুষ আছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াবে কে?
এ শহরের একদল তরুণ সে কাজেই নেমেছেন। কলকাতার বিভিন্ন যৌনপল্লির কর্মীদের সাহায্য করতে উদ্যোগী ওঁরা। উত্তরের সোনাগাছি থেকে দক্ষিণের কালীঘাট, বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করছে তরুণদের এই দল। করোনা পরিস্থিতিতে সে সব অঞ্চলে রোজগার একেবারেই বন্ধ। ফলে দু’বেলার খাবার জোগানো বড়ই কঠিন। তাই ঘরে ঘরে গিয়ে চাল-ডাল-তেল-নুন-আলু পৌঁছে দিচ্ছেন এই তরুণ-তরুণীরা।
নিজেরা কেউ বা চলচ্চিত্র জগতে পরিচালনা, সম্পাদনার কাজ করেন। কেউ প্রযোজনায় মন দিয়েছেন। অতিমারির জন্য এখন সে সব কাজ প্রায় বন্ধ। এই সময়টা ঘরে বসে নষ্ট করতে চান না ওঁদের কেউই। জানেন, বহু মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। ফলে লকডাউন শুরু হতেই সমাজসেবায় নামেন। কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নন ওঁরা। তবু পাঁচজনে মিলে কাজ করছেন বলে নিজেদের ‘গৌরী ফাউন্ডেশন’ নামে পরিচয় দেন। সে নামেই চলছে যৌনপল্লির ঘরে ঘরে গিয়ে কখনও রান্না করা ভাত-ডাল পৌঁছনো, তো কখনও শুকনো খাবারের জোগান দেওয়ার দায়িত্ব পালন।
সকলেই পরিচিত জনেদের সাহায্য করতে চান। অথবা এমন কারও জন্য খাবার পাঠান, যাঁকে রাস্তায় চলতে ফিরতে দেখতে পান। কিন্তু যৌনকর্মীদের দিকে ঘুরে তাকান না বেশির ভাগে। ফলে ওঁরা খেতে পাচ্ছেন কি পাচ্ছেন না, তা জানার চেষ্টাও হয় না। সে কারণেই শহরের নানা প্রান্তে থাকা যৌনকর্মীদের সাহায্য করার কথা ভেবেছেন ওঁরা। এমনই জানালেন দলের সদস্য সাহেব হালদার।
কত দিন চলবে এই কাজ? থামার কথা ভাবে না তরুণদল। পথে নেমে বুঝেছেন, আরও অনেক কিছু করার আছে। পাশেও পেয়ে যাচ্ছেন নতুন নতুন মানুষজনকে। ফলে আশা, এখনই থেমে যেতে হবে না। আরও বহু মানুষের কাজে লাগবেন ওঁরা। দলের মূল উদ্যোক্তা অঙ্কিত দাস বলেন, ‘‘আমরা হয়তো গোটা মাসের রেশন এখনও দিতে পারছি না এই মহিলাদের। তবু চেষ্টা করছি যথাসম্ভব সাহায্য করার। জানাতে চাইছি, পাশে আছি।’’
খাবারের পাশাপাশি, মাস্ক-স্যানিটাইজারও বিভিন্ন যৌনপল্লিতে পৌঁছে দিচ্ছেন অঙ্কিত, সাহেবরা। সঙ্গে আছেন বন্ধু সৌমজিৎ আদক, নিকিতা ধামিজা, শগুফতা রহমানও। সকলে মিলে খোঁজ রাখছেন কখন, কার বাড়িতে, কোন জিনিসের বেশি প্রয়োজন। তা বুঝে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন এই তরুণেরা।