জ্বরে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে মেনে চলুন চিকিৎসকের পরামর্শ। ফাইল ছবি।
সন্ধ্যা হলে ছাতিম ফুলের গন্ধ আর শিরশিরে বাতাস মন ভাল করে দেয়। হেমন্তের এই আবহাওয়া আবার রোগ জীবাণুদের জন্য আদর্শ। তাই ঋতু পরিবর্তনের সময় জ্বরের প্রকোপ কিছুটা বাড়ে। তবে এ বারের কোভিড-১৯ আতঙ্কে জ্বর হলেই ভয়। তবে জ্বর তো কোনও অসুখ নয়, উপসর্গ মাত্র।
রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে বা শরীরের অভ্যন্তরে কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে শরীরের রোগ প্রতিরোধী যে সিস্টেম তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় যাতে উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে তারা শরীর ছেড়ে চলে যায়। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের পাশাপাশি অনেক সময় জটিল কোনও রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও জ্বর আসে।
ইন্টারনাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ অর্পণ চৌধুরী জানালেন, করোনা পরিস্থিতিতে জ্বর হলেই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোভিড-১৯, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ছাড়াও টাইফয়েডের কারণেও জ্বর হতে পারে, তাই এ সব টেস্ট করাতে হয়। মূত্রনালী সংক্রমণ, টনসিলাইটিস, শ্বাসনালীর উপরিভাগে সংক্রমণ, ফুসফুসের প্রদাহ কিংবা নিউমোনিয়া অথবা মেনিনজাইটিসের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবেও জ্বর হতে পারে।
আরও পড়ুন: নাক ডাকার সমস্যায় নাজেহাল? রেহাই পেতে এই বিষয়গুলি জেনে রাখুন
আবার টিউবারকুলোসিস, গাউট, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, কোনও ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, লিম্ফ গ্ল্যান্ড ও রক্তের ক্যানসার-সহ অন্যান্য ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে একাধিক বার জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানালেন, জ্বর হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। অনেকের জ্বর আসার আগে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, মাথা ব্যথা করে আর গরমেও শীত করে।
আরও পড়ুন:কোভিডের উপসর্গে জ্বরের দোসর হাত-পা ব্যথা? কী খেয়াল রাখতেই হবে?
ভাইরাল জ্বরের অন্যতম উপসর্গ গা হাত পা ব্যথা, মাথার যন্ত্রণা-সহ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। অনেকের আবার খুব শীত করে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। সব রকমের জ্বরেই গলা ও কানে ব্যথা হতে পারে। আবার পেটে ব্যথা ও হজমের সমস্যা হয়। খেতে ইচ্ছে করে না, বমি হয় ভাব থাকতে পারে। তবে বমি হলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার, বললেন অর্পণ চৌধুরী।
শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ডি-হাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এই সময় বারে-বারে জলপান করতে হয়। বমি হয়ে গেলে জল বা ওআরএস খেলেও বিশেষ লাভ হয় না। তখন স্যালাইন দিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে হবে।
সতর্ক থাকুন বাচ্চাদের জ্বরেও। ফাইল ছবি।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শান্তনু রায় জানালেন, বাচ্চাদের জ্বর বাড়লে খিঁচুনি দিয়ে তড়কা অর্থাৎ কনভালশন হতে পারে। তাই ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর হলেই বয়স ও ওজন অনুযায়ী ঈষদুষ্ণ জলে স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্যারাসিটামল খাওয়ানো উচিত। বড়দেরও জ্বর বাড়তে দেওয়া চলবে না। জ্বর বাড়লে মাথায় জলপট্টি দেওয়ার যে রীতি আছে তাও মেনে চললে ভালো হয়। জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে গেলে অবশ্যই মাথা ধুইয়ে সমস্ত শরীর স্পঞ্জ করিয়ে দেওয়া দরকার। বাচ্চাদের জন্যেও একই নিয়ম। সব চিকিৎসকই একটা বিষয়ে একমত যে ভাইরাল জ্বরের একমাত্র ওষুধ বিশ্রাম আর পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও জলীয় খাবার।
আরও পড়ুন: একাধিক রোগ থাকবে দূরে, কোন মাছ সপ্তাহে ক’দিন খাবেন, কতটা?
অনেকে জ্বর হলেই দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করেন। এই অভ্যাস অত্যন্ত বিপজ্জনক। জ্বরে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়া আর কোনও ওষুধ খাবার দরকার নেই। জ্বর হলে বারে বারে জল, ডাবের জল, স্যুপ, গোটা ফল বা বাড়িতে তৈরি ফলের রস খেলে দুর্বলতা কমে যায়। ভাইরাল জ্বর হলে বাড়িতে রান্না করা সব খাবারই খাওয়া যায়। জ্বরের সঙ্গে পেট খারাপ হলে দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার না দেওয়াই ভাল। রোদে ঘোরাঘুরি করলে বা বেশি ধকল নিলে জ্বর বাড়ে। তাই জ্বর হলে দিন-দুয়েক বিশ্রাম নিতে হবে। ভিড়ের মধ্যে পুজোর বাজার করতে গেল কোভিড জ্বরের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। জ্বরকে জব্দ করতে দূরত্ব বজায় রাখুন, মাস্ক পরতেও ভুলবেন না যেন।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)