প্রতীকী ছবি।
করোনাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন কোনও ওষুধ এখনও নেই। ফলে এখনও পর্যন্ত চিকিৎসা চলছে উপসর্গের উপর ভিত্তি করে। তার পাশাপাশি বেশ কিছু পরিচিত ওষুধের নাম শোনা যাচ্ছিল বহুদিন ধরে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ, এইচআইভি ও ইবোলা মারার অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ ইত্যাদি। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিনের যুগলবন্দিকে অনেকে মুশকিল আসান বলে ভাবতে শুরু করেছিলেন। খেতেও শুরু করেছিলেন দেদার। এই সময় সামনে এল এফডিএ-র সতর্কবাণী। ক্লোরোকুইন-অ্যাজিথ্রোমাইসিন কোনও ম্যাজিক ওষুধ নয়। সব কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে যে তারা কাজ করবে এমন নয়। কাজেই রুটিনমাফিক এই ওষুধ দেওয়া যাবে না।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পাণ্ডা জানালেন, ‘চিনে যখন আচমকা মহামারি লেগে গেল, তখন ওই দিশেহারা অবস্থায় বেশ কিছু রোগীকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন দেওয়া হয়। কিছু উপকারও হয় তাতে। তবে এখনও পর্যন্ত চিকিৎসার যে সমস্ত আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গাইডলাইন আমরা মেনে চলি, তার কোথাও এর রুটিন ব্যবহারের কথা বলা নেই। অন্যান্য অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, লোপিনাভির ও রেটোনাভির কম্বিনেশনের সঙ্গে ক্লোরোকুইন দিলে বরং ক্ষতি হতে পারে। সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থাকলে অ্যাজিথ্রোমাইসিন দেওয়া হয়। এতে প্রদাহও কমে।’
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের ভূমিকা নেই?
‘'আছে তো অবশ্যই। কিন্তু সরাসরি করোনাভাইরাস মারার ওষুধ কোথায়?’ প্রশ্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের। ‘তবে নিউমোনিয়া নিয়ে রোগী ভর্তি হলে অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি অসেলটামিভির নামে একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হয় অনেক সময়। সোয়াব টেস্টের রিপোর্টে করোনা প্রমাণিত হলে আবার তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ এটি করোনার ওষুধ নয়, সোয়াইন ফ্লু-র ওষুধ। কিছুক্ষেত্রে রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়। জটিল রোগীর ক্ষেত্রে কাজও হয় অনেক সময়। তবে কোভিডের কোনও সরাসরি চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা হয় মূলত উপসর্গের উপর ভিত্তি করে।'’
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেবে এই মাল্টি-মাস্ক, দাবি গোয়ার ডিজাইনারের
চিকিৎসা উপসর্গভিত্তিক
• জ্বর, গা-হাত-পা-মাথাব্যথা কমাতে দেওয়া হয় প্যারাসিটামল। এতে প্রদাহের প্রবণতাও কিছুটা কমে।
• সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা ব্যাকটিরিয়া থেকে সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। কখনও দেওয়া হয় গোড়া থেকেই।
• প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬ ও ভিটামিন ই দেওয়া হয়। কিছু খনিজযুক্ত ওষুধও দেওয়া হয়।
• শ্বাসকষ্ট হলে প্রয়োজনে অক্সিজেন দেওয়া হয়।
• স্যালাইন চালানো হয় বুঝেশুনে। বেশি দিয়ে দিলে আবার রোগীর ক্ষতি হতে পারে। সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপেই চিকিত্সকদের।
আরও পড়ুন: কীভাবে শুরু মাস্কের ব্যবহার, এই মুহূর্তে কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে
আর কী মাথায় রাখা হয়
• রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে নানারকম সহায়ক ওষুধপত্র দেন চিকিৎসকরা, যাতে রোগের উপসর্গ যেমন কমে, কমে জটিলতাও। রক্ত জমাট বেঁধে সমস্যা বাধাচ্ছে মনে হলে রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ দেওয়া হয়। মাঝারি ও জটিল রোগীর ক্ষেত্রে অনেক সময় শুরু থেকেই এই ওষুধ দেওয়া হয়।
• বাড়াবাড়ি শ্বাসকষ্টে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটরের সাহায্য লাগতে পারে। তবে কয়েকটি বিরুদ্ধ মতও উঠে আসছে। অনেকেই মনে করছেন, চটজলদি ভেন্টিলেটর লাগিয়ে দিলে বরং রোগীর ফুসফুসের বেশি ক্ষতি হয়। তাই ভেবেচিন্তে তবেই ভেন্টিলেটর দেওয়া হচ্ছে রোগীদের।
কোভিডের চিকিত্সা উপসর্গভিত্তিক। তাই পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। ফাইল ছবি।
• কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে ডায়ালিসিস করাতে হয়।
• রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলে, ফুসফুসের যদি বেশ খানিকটা ক্ষতি হয়ে যায়, বাড়াবাড়ি নিউমোনিয়ায় বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম হলে, কিংবা যদি শরীরে সংক্রমণ বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে রোগী সেপটিক শকে চলে যান, খুব হিসেবনিকেশ করে স্টেরয়েড ও আরও কিছু জীবনদায়ী ওষুধপত্র দেন চিকিৎসকরা।
• সুযোগ ও প্রয়োজন থাকলে কিছু ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষামূলক পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হচ্ছে আজকাল। প্লাজমা থেরাপি তার মধ্যে অন্যতম। অনেক ক্ষেত্রেই বেশ ভাল কাজ হচ্ছে তাতে।
আরও পড়ুন: জ্বরের মধ্যে দাঁত মাজতে গিয়ে রক্ত? ডেঙ্গি হেমারহেজিক ফিভার নয় তো
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)