ভিটামিন সি অতিরিক্ত খাওয়াটাও ঠিক নয়। ছবি: পিক্স্যাবে
কোভিড মরসুমে অনেকেই বেশি করে লেবুজাতীয় ফল খেতে শুরু করেছেন।কারণ ভিটামিন সি। প্রথমত ফ্লু ঠেকাতে ভিটামিন সি-এর ভূমিকা আছে বলে অনেকের ধারণা।যদিও ধারণাটা সঠিক নয়।কারণ, ভিটামিন সি সাধারণ ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকায় না।রোগ হওয়ার পর তার প্রকোপ কম রাখতে সাহায্য করে।সাহায্য করে ভোগান্তির সময়কাল কমাতেও।কোভিড ১৯-ও যেহেতু এক রকম ফ্লু, মানুষ তাই ভাবতে শুরু করেছেন, এখন থেকে ভিটামিন সি খেলে একে ঠেকানো যেতে পারে।
এই ভাবনাকেই আরও উস্কে দিয়েছে 'চাইনিজ জার্নাল অফ ইনফেকশাস ডিজিজ'-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধ, যেখানে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন কোভিড-১৯ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীকে যদি বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দেওয়া যায়, শিরার মাধ্যমে, তাঁর ফুসফুসের কার্যকারিতা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা আছে।তাতে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র তথা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কিছুটা কমতে পারে।
ওই রিভিউ স্টাডি থেকে জানা গেছে এমন ব্যক্তির ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে থাকার প্রয়োজনীয়তা ৮ শতাংশ কমতে পারে।আর ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন কমতে পারে ১৮ শতাংশ।তবে এ সবই রয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে।অর্থাৎ ভিটামিন সি দিয়ে চিকিৎসা করলে কতটা কাজ হবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে তা নিয়ে।
আরও পড়ুন: ফুসফুস থেকে হার্ট...জটিল কোভিডে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী কী কী ক্ষতি হতে পারে
আরেকটি স্টাডি থেকে জানা গেছে, শিরার মধ্যে দিয়ে বেশি মাত্রায় ভিটামিন সি দিলে সোয়াইন ফ্লু ও অন্য আরও কিছু ভাইরাস সংক্রমণে ফুসফুসে যে প্রদাহ হয় তার প্রকোপ কিছুটা কমতে পারে।এই স্টাডিও রয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে।পশুর পর এখন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে এর ভাল-মন্দ যাচাই করা হচ্ছে।তবে কোভিডের ক্ষেত্রেও সে একই ভাবে কাজ করবে কিনা সে গবেষণা এখনও সে অর্থে হয়নি।
আরও পড়ুন: জ্বর না হয়েও করোনা আক্রান্ত অনেকেই, এ সব বিষয়ে সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা
চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা জানিয়েছেন, "সাধারণ অবস্থায় কোভিড ঠেকাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন সি খাওয়ার যুক্তি নেই।কারণ এই ভিটামিন শরীরে সঞ্চিত থাকে না।রোজের যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি খেলে তা ইউরিনের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।কিছু মানুষের আবার পেটের গোলমালও হয়।কাজেই যতটুকু প্রয়োজন, খান ঠিক ততটুকুই।"
আরও পড়ুন: জ্বর না হয়েও করোনা আক্রান্ত অনেকেই, এ সব বিষয়ে সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা
কতটা ভিটামিন সি প্রয়োজন?
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার।ধূমপায়ী হলে বা বাচ্চা মায়ের দুধ খেলে আরও ৩০-৩৫ মি্লিগ্রাম প্রয়োজন।ওটুকু নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।
মাঝারি একটা কমলালেবু খেলেই প্রয়োজনের ৭৭ শতাংশ পূরণ হয়ে যায়।
এক কাপ রান্না করা ব্রকোলি খেলে পাওয়া যায় ১১০ শতাংশ।
ভিটামিন সি আছে শাক-সবজি-ফলেও।
ভাতের পাতে স্রেফ একটা কাঁচা লঙ্কা খেলে পাবেন ১২১ শতাংশ।
একটা পেয়ারায় ভিটামিন সি আছে ১৪০ শতাংশ।
আধকাপ হলুদ বেলপেপার দেবে ১৫২ শতাংশ।
সকালে পাতিলেবুর রস খেলে সারাদিনের প্রয়োজনের ৯০ শতাংশ, ওখান থেকেই চলে আসবে। আমলকি খেলে তো কথাই নেই।কাজেই সুষম খাবার খেলে ভিটামিন সি নিয়ে আলাদা করে ভাবার দরকার নেই।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)