কিডনি রোগী যদি করোনা সংক্রমিত হন, জটিলতা বাড়তে পারে। ফাইল ছবি।
কিডনি রোগীদের সংক্রমণ বেশি হয়। বেশি হয় জটিলতাও। কারণ কিডনি আমাদের শরীরে ছাঁকনির কাজ করে। বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের ফলে রক্তে যে সমস্ত দূষিত পদার্থ জমা হয়, সে সব ছেঁকে বার করে শরীরকে সুস্থ রাখে সে। শরীরে জল ও উপকারী লবণের ভারসাম্য বজায় রাখাও তার কাজ।
কোনও কারণে কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে দূষিত পদার্থ জমতে থাকে শরীরে। জল জমে। ফলে শরীর এতই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। বাড়ে সংক্রমণজনিত অসুখ-বিসুখের আশঙ্কা। কাজেই কোভিডের এই পরিস্থিতিতে তাঁদের বিশেষ ভাবে সাবধান থাকা দরকার।
বিপদ আছে আরও। জটিল কোভিডে কিডনির ক্ষতি হয়। চিন, নিউইয়র্ক, ইটালি, ফ্রান্সে সমীক্ষা করে দেখা গেছে কোভিডের জটিলতা নিয়ে যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশের কিডনির ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশে প্রতি বছর আক্রান্ত ১০ কোটি, মেরুদণ্ডের এই সমস্যা আপনার নেই তো?
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌতিক পাণ্ডা জানিয়েছেন, "কোভিডের জটিল পর্যায়ে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা খুব বেড়ে যায় বলে সবচেয়ে ক্ষতি হয় কিডনি ও লিভারের। বহু রোগীকেই তখন ডায়ালিসিস করতে হয়। অর্থাৎ যন্ত্রের সাহায্যে রক্ত ছেঁকে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হয়। তারপর সুস্থ হওয়ার পরও কিডনির কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক হতে সময় লাগে কম করে ৩-৪ সপ্তাহ। কখনও আবার পুরো স্বাভাবিকও হয় না। বিশেষ করে যদি আগে থেকে সমস্যা থাকে।"
কাজেই কিডনির সমস্যা থাকলে বিশেষভাবে সাবধান থাকা দরকার।
আরও পড়ুন:আমি করোনা আক্রান্ত, এখন কী কী করছি
কোভিডের জটিল পর্যায়ে রক্ত জমাটের প্রবণতা খুব বেড়ে যায় বলে সবচেয়ে ক্ষতি হয় কিডনি। ফাইল ছবি।
বিশেষ সাবধানতা
• রোগের চিকিৎসায় কোনও রকম ঢিলেমি চলবে না। চিকিৎসক যেভাবে চলতে বলেছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। কোনও ভাবে যাতে রোগের বাড়াবাড়ি না হয়, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
• জল ও খাবারের ব্যাপারে ডাক্তার যা নির্দেশ দিয়েছেন, তার অন্যথা করবেন না। প্রোটিন জাতীয় খাবারের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবেন।
• নিয়মিত চেক-আপ করাবেন।
• ব্যথা-বেদনা হলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ব্যথার ওষুধ খাবেন না। কারণ ওই সব ওষুধে শরীরে জল জমার প্রবণতা বাড়ে।
• চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বেরবেন না। বেরনোর সময় মাস্ক ও শিল্ড পরবেন। যাঁদের ডায়ালিসিস চলে, তাঁরা ঘরেও পরে থাকবেন।
• কোভিড ঠেকানোর সাধারণ নিয়ম মেনে চলুন। হাত ধোওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি।
• বেশি ঠান্ডা ঘরে না শোয়াই ভালো। কারণ নিয়মিত সার্ভিসিং না হলে এসি-র ডাক্টে জীবাণুর রমরমা হয়, দুর্বল প্রতিরোধশক্তির মানুষ চট করে সেখান থেকে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন।
• জ্বর-সর্দি-কাশি হলে আলাদা ঘরে থাকুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন: কেউ উপসর্গহীন বাহক, কেউ করোনা সংক্রমিত, ভাইরাসের আচরণ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কেমন
ডায়ালিসিস করান নিয়মিত
"সময়মতো ডায়ালিসিস না হলে শরীরে দূষিত পদার্থ জমে সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা আরও কমে যায়। শরীরে জলের পরিমাণ বাড়ে। সারা শরীরের সঙ্গে সে তখন জমতে থাকে গলার শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে। জমে ফুসফুসে। এই অবস্থায় করোনা সংক্রমণ হলে বিরাট বিপদ। সেজন্য পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সপ্তাহে দু-তিন দিন, যাঁর যেমন দরকার ডায়ালিসিস চালিয়ে যান।" জানিয়েছেন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ সুব্রত ভৌমিক।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)