প্রতীকী ছবি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ রেহাই দিচ্ছে না বাচ্চাদেরও। তবে আশার কথা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের উপসর্গ অল্প থাকায় বাড়িতে নিভৃতবাসে যত্নে ও সঠিক পর্যবেক্ষণে রাখলে সেরে উঠছে তারা। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের ঘরবন্দি করে রাখা মুখের কথা নয়। বাচ্চার সঙ্গে বাবা বা মাকে থাকতে হয় কিছু নিয়ম মেনে।
শিশুরোগ চিকিৎসক পল্লব চট্টোপাধ্যায় জানালেন, বাচ্চারা সাধারণত বাড়ির বাইরে যায় না। বাবা, মা বা বাড়ির বড়দের থেকে ওরা সংক্রমিত হয়। তাই বাচ্চার উপসর্গ দেখলে তার সঙ্গে বড়দেরও পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। মৃদু উপসর্গ হলে বাড়িতে নিভৃতাবাসে সেরে যাবে। তবে নিভৃবাসে থাকাকালীন শরীরের সঙ্গে বাচ্চাদের মনের যত্ন নেওয়া জরুরি।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাবা মায়েরা ঘরবন্দি বাচ্চাকে সামলাতে মোবাইল বা টেলিভিশনের সাহায্য নেন। কিন্তু এর ফলে বাচ্চারা ভীষণ ভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। মোবাইল গেম বা টিভির পরিবর্তে ওদের গল্পের বই পড়া, ছবির বই দেখে আঁকতে উৎসাহ দেওয়া, গল্প বলার মতো কিছু ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পল্লব বললেন, ‘‘নিভৃতাবাসে থাকাকালীন নিয়ম করে পাল্স অক্সিমিটার দিয়ে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপতে হবে। তবে ছোট বাচ্চা হলে হাতের আঙুলের বদলে পায়ের আঙুলেও অক্সিজেনের পরিমাণ মাপা যায়। বাচ্চাদের অক্সিজেনের মাত্রা মাপার নিয়ম একটু আলাদা। এক বার মেপে বাচ্চাকে ৬ মিনিট ঘরের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করিয়ে বা ২০ বার ওঠবোস করতে বলে আবার মাপতে হবে। যদি দেখা যায় আগের বারের তুলনায় রি়ডিং ৪ বা তারও কম এসেছে তখন অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বাচ্চার অক্সিজেন কমে যাওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।’’
শিশুরোগ চিকিৎসক শান্তনু রায়ের মতে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়েও বেশি মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে। তাই বাচ্চাদের খুব সাবধানে রাখা দরকার। তিনি বললেন, ‘‘সাধারণত আমরা দেখেছি বাচ্চাদের খুবই মৃদু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগই বাড়িতে ৩-৫ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অক্সিজেন থেরাপি করতে হচ্ছে, এমনকী আইসিইউতেও দিতে হতে পারে। তাই বাড়িতে থাকলে নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা জরুরি।’’
যে বিষয়ে নজর দেবেন
১। তিন বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের মাস্ক পরে থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা। মাস্ক পরা, হাত ধোওয়া এবং নাক -মুখ ঢেকে হাঁচি, কাশির অভ্যাস— এই বিষয়গুলি বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
২। পর্যাপ্ত জলপান ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। ঘরবন্দি হয়ে থাকলে বাচ্চারা খেতে চায় না। ডিম, চিকেন, চিজ সহ পছন্দের খাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেতে দিন।
৩। ফল খেতে ভাল না লাগলে ফলের স্যালাড বা রস করে সুন্দর পাত্রে পরিবেশন করতে হবে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ