কাজের ফাকে মডেল-অভিনেত্রী স্নেহা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
রেস্তরাঁ খোলা রাখার নানা রকম নিয়ম, বাজার কখন খোলা থাকবে তা-ও নির্ধারিত, সিনেমা-সিরিয়ালের শ্যুটিং হলেও রয়েছে নানা রকম বিধি-নিষেধ। লক়ডাউনের নিয়ম শিথিল হওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু কড়া নিয়ম-কানুন বেঁধে দেওয়া হয়েছে যে কোনও কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু মডেলিং দুনিয়ায় কী হচ্ছে? বিভিন্ন ফ্যাশন ফোটোশ্যুট, বিজ্ঞপনী ফোটোশ্যুট— এ সব ক্ষেত্রে কে নিয়ম তৈরি করছে? কতটাই বা মানা হচ্ছে আদপে। খোঁজ নিল ‘আনন্দবাজার অনলাইন’।
কলকাতা মডেলিং দুনিয়ায় পরিচিত মুখ দিতি সাহা জানালেন, কলকাতায় বিজ্ঞাপন বা ফোটোশ্যুটের কাজ হচ্ছে স্বাভাবিক ভাবেই। কোনও কোনও ব্র্যান্ডের শ্যুটের আগে জানতে চাওয়া হয় মডেলের টিকা নেওয়া হয়েছে কি না। কিন্তু সেটার উপর নির্ভর করে মডেল বাছাই হচ্ছে না। অথচ মডেলদেরই ভয় বেশি। তাঁদেরই বেশির ভাগ সময় বিনা মাস্কে থাকতে হচ্ছে। তা হলে কী করে নিজেদের সুরক্ষিত রাখছেন তাঁরা? দিতি বললেন, ‘‘আসলে কলকাতায় এই পেশায় হাতেগোনা লোকেরা কাজ করে। সকলকেই তো চিনি। কার টিকা নেওয়া হয়েছে, কার হয়নি এখন তো নেটমাধ্যমেই সব জানা যায়। তবে নতুন লোকদের সঙ্গে কাজ করতে একটু দ্বিধা হয়। খুব একটা করছি না। করলেও আগে থেকে সকলের নম্বর নিয়ে কথা বলে নিচ্ছি। যে স্টুডিয়োয় কাজ হবে, সেটা ঠিক করে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে কি না সেটা খোঁজ নিচ্ছি। এখন বাজেট কমে গিয়েছে বলে অনেক সময় কারও বাড়িতেও শ্যুট করা হচ্ছে। তাঁরা যে খুব খুঁটিয়ে সব জানতে চাইছেন, তেমন নয়। কিন্তু সকলেই যেহেতু মুখচেনা, একটা মৌখিক বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে পুরো বিষয়টা।’’
ফোটোশ্যুটে দিতি সাহা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
বিজ্ঞপনী শ্যুটের একটা সুবিধা কম লোক নিয়ে কাজটা হয়ে যায়। তাই ভয় কম। তারকা-স্টাইলিস্ট অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কম লোক থাকে বলে একটা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়। সকলে মাস্ক পরছেন কি না, নিজেরাই খেয়াল রাখছি। স্যানিটাইজ করছি। কিন্তু তার মধ্যে কিছু লোক রয়েছেন, যাঁদের এ সব কিছুর বালাই নেই। এই পরিস্থিতিতেও মুখের সামনে ধূমপান করে যাচ্ছেন, মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমি খুবই প্রতিবাদ করি এ সব দেখলে।’’
বিজ্ঞাপনের শ্যুট ছাড়াও কিছু বিয়ের কাজ করতে হয় মেকআপ শিল্পীদের। সেখানেও তেমন কোনও নিয়ম মানার ব্যাপার নেই। তারকা মেকআপ শিল্পী অভিজিৎ চন্দ বললেন, ‘‘বিয়ের আগে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা অনেকেই করিয়ে নিচ্ছেন, বাড়িতেই লোক পাঠিয়ে। তবে মেকআপ শিল্পী বাছার সময়ে টিকাকরণ হয়েছে কি না ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। আমরা নিজেরাই চেষ্টা করছি সাবধান থাকার। আগে বাড়িতে ডেকে মেকআপ করতাম। এখন সেটা বন্ধ রেখেছি। ছোট টিম নিয়ে যাই। মেকআপের ঘরে খুব বেশি ফোটোগ্রাফারদের ভিড় হয়ে গেলে অনুরোধ করি, যদি একটু খালি করে দেওয়া যায়। আর নিজের মেকআপের সরঞ্জাম নিয়ে আমি বরাবরই সচেতন। গত ১৫ বছর ধরে সব কিছু স্যানিটাইজ করি। এটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়।’’
প্রতীকী ছবি।
মডেল-অভিনেত্রী স্নেহ বসু অবশ্য জানালেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বদল এসেছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর টিকারকরণের কথা অনেকেই জানতে চাইছেন। ‘‘আগে অনেক মডেল একসঙ্গে ডেকে শ্যুট করা হত। এখন সেটা বন্ধ রয়েছে। একেক জনকে একেক সময় ডাকা হয় এবং সিঙ্গল শ্যুট হচ্ছে। কখনও সময়ের আগে পৌঁছে গিয়ে দেখেছি স্টুডিয়ো ভাল করে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে,’’ বললেন স্নেহা।
শহরের আরেক বিশিষ্ট মেকআপ শিল্পী অভিজিৎ পাল অবশ্য বললেন, কোনও বিয়ের মেকআপ থাকলে কেউ তাঁকে কোভিড-পরীক্ষা করার কথাও সে ভাবে বলছেন না। ‘‘আসলে আমাদের নিজেদেরও তো ভয় রয়েছে। তাই নিজেরাই সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করছি। যতটা অল্প লোক নিয়ে কাজ করা যায় চেষ্টা করি তাই করতে। কনে ছাড়া আর কারও সঙ্গে সে ভাবে মেলামেশা করি না বিয়েবাড়ি গেলে। কোভিড পরীক্ষা কেউ করতে বলছেন না। কিন্তু আমিও নিশ্চয়ই জ্বর গায়ে গিয়ে মেকআপ করব না। আমি তো নিজের পরিচিতি খারাপ করতে চাই না। আমাদের পেশার দুনিয়াটা খুব ছোট। এখানে একটা পরিচিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কেউ-ই সেটা নষ্ট করতে চাইবে না,’’ বললেন অভিজিৎ।