ভ্রামরী প্রাণায়াম। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
করোনা আবহে দুশ্চিন্তা যেন আরও বেড়েছে। এদিকে সারাক্ষণ এসিতে থেকে অনেকেরই গলায় ব্যথা। লকডাউনের ফলে ঘুমের অভ্যাসেরও বদল ঘটেছে। এই সব সমস্যা দূরে থাকতে পারে প্রাণায়াম অভ্যাস করলে। কীভাবে অভ্যাস করবেন এই প্রাণায়াম
ভ্রামরী প্রাণায়াম
সংস্কৃত শব্দ ‘ভ্রমর’ অর্থ ‘মৌমাছি’। ভ্রামরী প্রাণায়ামের বৈশিষ্ট্য এই প্রাণায়ামটি অভ্যাসের সময় গুঞ্জনরত মৌমাছির মত শব্দ করতে হয়।
কী ভাবে করব
• ম্যাটের উপরে শিরদাঁড়া সোজা করে পা মুড়ে বসুন। মাথা ও ঘাড় টানটান রাখুন। দু’হাত থাকুক দুই হাঁটুর ওপরে। দরকার হলে কোমরের পিছনে একটা কুশন রাখতে পারেন। এ বার চোখ বন্ধ করে এই অবস্থানে আরামদায়ক ভাবে বসুন। প্রাণায়াম শুরুর আগে এই ভঙ্গিমা রপ্ত করা জরুরি।
• এ বার মুখমণ্ডলের দিকে খেয়াল করুন। ঠোঁট যেন বন্ধ থাকে, কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে রাখবেন না। দু’পাটি দাঁতের মধ্যে কিছুটা ফাঁক রাখুন।
• দুই হাত পাশের দিকে সোজা করুন। কনুই থেকে ভাঁজ করে কানের কাছে আনুন। মধ্যমা কিংবা মাঝের আঙুল দিয়ে কান বন্ধ করুন। কানের মধ্যে আঙুল না পুরে ইচ্ছে হলে দুই কান মুড়েও কান বন্ধ রাখতে পারেন।
আরও পড়ুন: সারা ক্ষণ মুখে মাস্ক বাড়াচ্ছে ব্রণ ও ত্বকের সমস্যা, কী করবেন
• এ বার নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ার সময় গলা থেকে মৌমাছির মতো গুনগুন শব্দ করুন। মুখ খুলবেন না শব্দ বেরবে গলা থেকে। যত ক্ষণ পারবেন শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে অত্যন্ত ধীরে গুনগুন শব্দ করবেন।
• গুনগুন শব্দ করার সময় মাথায়, চোয়ালে, দাঁতে ও গলায় মৃদু কম্পন অনুভব করবেন।
• মন থাকুন টেনশনমুক্ত। শরীর থাকুক শিথিল। গুনগুন শব্দ উপভোগ করুন।
• এক রাউন্ড শেষ হলে আবার গভীর ভাবে শ্বাস নিন ও একই ভাবে অভ্যাস করুন।
• ৫–৭ বার একই ভাবে ভ্রামরী অভ্যাস করার পর হাত নামিয়ে কয়েক মিনিট চুপ করে বসে থাকুন।
আরও পড়ুন: ডায়াবিটিস আছে? করোনা আবহে সতর্ক না হলে ফল হতে পারে বিপজ্জনক
কেন করব?
ভ্রামরী প্রাণায়াম আসলে মনকে একাগ্র করে ধ্যান বা মেডিটেশন পর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। শব্দের কম্পন মন ও স্নায়ুকে শান্ত করে সুখকর অনুভুতি আনতে সাহায্য করে। সুতরাং অতিরিক্ত পরিশ্রম বা মানসিক চাপের পর ইচ্ছে মতো ভ্রামরী প্রাণায়াম অভ্যাস করে মন শান্ত রাখার পাশাপাশি তরতাজা করেও তোলা যায়। এই প্রাণায়াম অভ্যাস করলে মনের চাপ ও টেনশন কমে। রাগ, দুশ্চিন্তা ও অনিদ্রা দূর হয় এবং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। শরীরের কোষকলাকে পুণরুজ্জীবিত করতে ভ্রামরী প্রাণায়াম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে গড়ে ওঠা নতুন অভ্যাসে অজান্তেই এই সব উপকার হচ্ছে, জানতেন!
সুতরাং কোনও অস্ত্রোপচার বা অসুস্থতার পর এটি অভ্যাস করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে গলার সমস্যা দূর হয় এবং গলা তেজি হয়। ভ্রামরীর গুনগুন শব্দে বাচ্চারাও এই আসনটি করতে আনন্দ পায়। নিয়িমিত অভ্যাসে তাদেরও মনঃসংযোগ, একাগ্রতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
সতর্কতা
শোওয়া অবস্থায় ভ্রামরী প্রাণায়াম অভ্যাস করা অনুচিত। কানে কোনও সংক্রমণ থাকলে এই প্রাণায়াম করা নিষেধ। সংক্রমণ সম্পূর্ণ কমলে তবেই এই প্রাণায়াম করুন।