শবাসন। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
চাপিয়ে দেওয়া লম্বা ছুটিতে শরীরচর্চায় দাঁড়ি। জিম বন্ধ। হাঁটাহাঁটি, দৌড়ঝাঁপও অনেকটাই বন্ধ। তাতে কী? ঘরের কাজ সেরে বাড়তি সময় শরীরচর্চা করতেই পারেন। আমরা প্রতি দিন সন্ধান দিচ্ছি একটি করে ব্যায়ামের। অভ্যাস করে সুস্থ থাকুন। আজ ৫৩তম দিন।
শবাসন
সংস্কৃত শব্দ শব মানে মৃতদেহ। এই আসনটিতে মৃতের মতো স্থির হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। শরীর সম্পূর্ণ শিথিল করে নিরুদ্বেগ মন নিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকার ভঙ্গিমার নামই শবাসন। কার্যত শরীর শিথিল করে আরামদায়ক ভাবে শুয়ে থাকতে হবে, মন থাকবে উদ্বেগ মুক্ত কিন্তু সজাগ। এই আসন অভ্যাসের মূল উদ্দেশ্য শরীর ও মনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দূর করা।
কী ভাবে করব
· ম্যাটের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাত দু’পাশে রাখুন শরীর থেকে ৬ – ৮ ইঞ্চি দূরত্বে। হাতের চেটো ওপরের দিকে করে স্বাভাবিক ভাবে সামান্য মুড়ে রাখতে পারেন।
· দরকার হলে মাথার নীচে পাতলা বালিশ বা পাট করা নরম চাদর রেখে দিন।
আরও পড়ুন: ৫০তম দিন: আজকের যোগাভ্যাস
· আরামদায়ক ভাবে দুই পা সামান্য ফাঁক করে রাখুন। মাথা, ঘাড় ও শিরদাঁড়া এক সরলরেখায় রেখে চোখ বন্ধ করে করে রাখুন।
· শরীর শিথিল করে চুপচাপ শুয়ে থাকুন, একদম নড়াচড়া করবেন না।
· এই অবস্থানে তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ও আরাম করে শুয়ে থাকুন। কিছু ক্ষণ পর অনুভব করবেন প্রাত্যহিক জীবনের চাপ ও উৎকণ্ঠা কেটে গিয়ে শরীর ও মন ঝরঝরে লাগছে।
· এই অবস্থানে থেকে মনে মনে ২৭ থেকে উল্টো দিকে শূন্য অবধি গুনতে হবে। এই ভাবে গুনুন, ‘আমি ২৭ বার শ্বাস নিলাম, ২৭ বার শ্বাস ছাড়লাম, ২৬ বার শ্বাস নিলাম ও ২৬ বার ছাড়লাম’। এই ভাবে পিছন দিক থেকে শূন্য পর্যন্ত গুনতে হবে।
আরও পড়ুন: ৫১তম দিন: আজকের যোগাভ্যাস
· অন্যমনস্ক থাকলে সংখ্যা গোনার সময় ভুল হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু আবার ২৭ থেকে গোনা শুরু করতে হবে।
· শবাসন শেষ করার পর শরীর ও মন তরতাজা লাগবে।
কেন করব
শবাসন শরীর ও মনে প্রশান্তি আনে। ঘুমনোর আগে, যে কোনও আসন করার শেষে এবং অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগলে শবাসন অভ্যাস করলে ক্লান্তি কেটে যাবে, ভাল ঘুম হবে। শবাসন অভ্যাস করার সময় শরীর ও মন সম্পূর্ণ ভাবে শিথিল করা হয় বলে নিজের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ে। আসনটি অভ্যাস করার সময় উল্টোদিক থেকে শ্বাস প্রশ্বাস গুনতে হয় বলে মনের মধ্যে জমে থাকা দুশ্চিন্তা দূর হয়, নানান উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার অবসান হয়। নিয়মিত শবাসন করলে মাইল্ড ডিপ্রেশন বা অল্প অবসাদ কেটে যায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে, মাথাব্যথা, অনিদ্রা ও শ্রান্তি দূর হয়। একইসঙ্গে হার্ট ও নার্ভের চাপ কমে গিয়ে তরতাজা লাগে। তবে আসন কিন্তু কোনও ম্যাজিক ড্রাগ নয়, রাতারাতি ফল পাওয়া যায় না। ধৈর্য্য ধরে আসন করলে নীরোগ দীর্ঘজীবন পেতে পারেন সহজেই।