জ্ঞানমুদ্রা। অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ।
জ্ঞানমুদ্রা
‘জ্ঞান’ শব্দটির অর্থ ‘আত্মজ্ঞান’ বা ‘বিজ্ঞতা’। ‘মুদ্রা’ অর্থে হাত বা শরীরের অন্য কোনও অঙ্গের সাহায্যে বিশেষ চিহ্ন তৈরি করা। শরীরের বিভিন্ন অংশে শক্তি প্রবাহিত করতে জ্ঞানমুদ্রার সাহায্য নেওয়া হয়। এই মুদ্রার সাহায্যে নিজের অনুভূতি ও স্বতলব্ধ জ্ঞানের উন্মেষ ঘটানোর চেষ্টা করা হয়।
কী ভাবে করব
• ম্যাটের উপর মেরুদণ্ড সোজা করে পা মুড়ে বসুন। অসুবিধে হলে চেয়ারে পা ঝুলিয়েও বসতে পারেন।
• দুই হাত রাখুন হাঁটুর উপর। এ বার তর্জনী ভাঁজ করে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের গোড়ায় নিয়ে আসুন।
• বাকি তিন আঙুল সোজা ভাবে খোলা থাকবে।
• হাঁটুর উপর এই অবস্থায় হাতের চেটো থাকবে নীচের দিকে।
• দুই হাতের বাকি তিনটে করে আঙুল আরামদায়ক ভাবে খোলা রাখুন।
• দুই হাত টানটান করে না রেখে আরামদায়ক ভাবে আলতো করে রাখতে হবে।
• এই অবস্থানে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নিন।
• মন চিন্তাশূন্য রাখার চেষ্টা করুন।
• মিনিট দুই-তিন এই অবস্থানে থাকলে ভাল হয়।
আরও পড়ুন: ৫৪তম দিন: আজকের যোগাভ্যাস
করোনার সঙ্গে যৌথ জীবনযুদ্ধে জিততে বদলাতে হবে নিজেকে
সতর্কতা
অনেকে জ্ঞানমুদ্রা করার সময় তর্জনী রাখতে পারেন বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের ডগায়। এটাও সঠিক পদ্ধতি। বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলেই এই মুদ্রা অভ্যাস করতে পারেন।
কেন করব?
জ্ঞানমুদ্রা আসলে ধ্যান বা মেডিটেশন এবং প্রাণায়ামের একটি বিশেষ ভঙ্গি। আঙুলের গুরুত্বপূর্ণ লকিং অভ্যাসের সাহায্যে ধ্যান এবং এই জাতীয় আসন মনকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। আসলে হাতের করতল ও আঙুলে অজস্র স্নায়ুর অন্তিম অংশ থাকে, এর মারফত শক্তি পরিবেশে মিশে যায়। তর্জনী যখন বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের আগা বা গোড়ায় ছুঁইয়ে রাখা হয় তখন শক্তি বাইরে বেরিয়ে না গিয়ে আবার শরীরের মধ্যেই প্রবাহিত হয়। হাত খোলা থাকায় সব সময় এই শক্তি পরিবেশে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু জ্ঞানমুদ্রা অভ্যাসের সময় শরীরের অন্তর্নিহিত শক্তি আবার শরীরের মধ্যেই ফিরে এসে মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করে। হাঁটুতে দুই হাত রেখে জ্ঞানমুদ্রা অভ্যাস করার সময় আর একটি প্রাণিক সার্কিট তৈরি হয়। এর সাহায্যেও প্রাণ অর্থাৎ শরীরের অন্তর্নিহিত শক্তি শরীরে প্রবাহিত হয়। আঙুলে আঙুল ঠেকিয়ে মুদ্রা অভ্যাস করার সময় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ চেতনার প্রতি এক আত্মপোলব্ধি গড়ে ওঠে। আধ্যাত্মিক শক্তির বোধ জাগে। শরীর ও মন দুই-ই শান্ত ও সমাহিত থাকে।