লকডাউনে উদ্বেগ কমাতে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম জরুরি। -ফাইল ছবি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এখন গোটা বিশ্বেই চলছে লকডাউন। ফলে, সারা দিনই আমাদের গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। তাতে আমরা কিছুটা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। অন্য দিকে, প্রতি দিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কবে নতুন টিকা বা ওষুধ বাজারে আসবে, কবেই বা নিয়ন্ত্রণে আসবে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ, তা নিয়েও তীব্র অনিশ্চয়তায় আমাদের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে তীব্র শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই উদ্বেগ, অবসাদ ও শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে, শরীরকে ঝরঝরে রাখতে এখন সবচেয়ে জরুরি শ্বাস-প্রশ্বাসের কয়েকটি ব্যায়াম। এই ব্যায়ামগুলি আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে যেমন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবে, তেমনই উদ্বেগ ও অবসাদ কমানোরও সহায়ক হবে, শরীরকে তরতাজা রাখবে বলে।
এই পরিস্থিতিতে এখন মনকে শান্ত রাখাটার প্রয়োজনই সবচেয়ে বেশি। আর নিজেকে স্থিতধী রাখার সবচেয়ে ভাল উপায় নানা ধরনের ব্যায়াম করা। নিয়মিত। বেশ কিছুটা সময় ধরে। কারণ, উদ্বেগ উত্তরোত্তর বাড়লে তা শুধু মানসিক শান্তিতেই ব্যাঘাত ঘটাবে তা নয়; আমাদের শরীরে স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও তা দুর্বল করে দেবে, এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্য দিকে, শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে নিজেদের দূরে রাখতেও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামগুলি নিয়মিত ভাবে করার প্রয়োজন যথেষ্টই।
আরও পড়ুন: রিপোর্টের ক্ষেত্রে আশা করি কেন্দ্রীয় দল নিরপেক্ষ হবে: মুখ্যসচিব
আরও পড়ুন: কিট দেওয়ার নাম নেই, বদনামের চক্রান্ত: মমতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের এই ব্যায়ামগুলি এই পরিস্থিতিতে আমাদের সুস্থ, সবল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
১) পদ্মাসনে বসে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
প্রথমে মেরুদণ্ড সোজা করে বসে দু’টি পায়ের তালুকে উল্টো দিকের থাইয়ের উপর রেখে দু’টি হাত রাখতে হবে দু’টি হাঁটুর উপর।
তার পর দু’টি চোখ বন্ধ করে অন্তত মিনিট দশেক ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিতে হবে। তার পর সেটা বেশ কিছু ক্ষণ (কয়েক সেকেন্ড) ধরে চেপে রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে।
এই ভাবে বসে শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে হবে। -ফাইল ছবি।
এই ব্যায়াম আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখবে। শরীর, মনকেও রাখবে ঝরঝরে।
২) নাড়ি শোধন
প্রথমে মেরুদণ্ড একেবারে সোজা রেখে বসতে হবে। তার পর ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাসারন্ধ্র চেপে ধরতে হবে। যাতে ডান নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস না নেওয়া যায়। ওই সময় খুব ধীরে ধীরে বাম নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। অন্তত ৩ থেকে ৫ সেকেন্ড ধরে এটা করতে হবে।
তার পর বাম হাতের অনামিকা বা কনিষ্ঠা দিয়ে বাম নাসারন্ধ্র চেপে ধরতে হবে। যাতে বাম নাসারন্ধ্র দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস না নেওয়া যায়। অন্তত ৩ থেকে ৫ সেকেন্ড। ওই সময় ডান নাসারন্ধ্র দিয়ে খুব ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। এই ভাবে ৮ থেকে ১০ মিনিট ধরে করে যেতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাসের এই ব্যায়াম।
নাড়ি শোধনের ব্য়ায়াম করতে হবে এই ভাবে। ছবি-শাটারস্টক।
৩) শবাসনে থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
মাটি বা বিছানায় দু’টি পা দু’দিকে ছড়িয়ে রেখে শুয়ে পড়তে হবে। হাতদু’টি দু’পাশে ছড়িয়ে রাখতে হবে। হাত বা পা ছড়িয়ে রাখার ক্ষেত্রে যেন কোনও আড়ষ্টতা না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তার পর চোখ ও মুখ বন্ধ করে ৬/৭ সেকেন্ড ধরে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে। সেই শ্বাস কিছু ক্ষণ শরীরে ধরে রাখতে হবে। তার পর নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়তে হবে ধীরে ধীরে। এই ভাবে ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে অন্তত মিনিট দশেক।
শবাসনে থেকে এই ভাবে চালিয়ে যেতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাসের এই ব্যায়াম। ছবি- শাটারস্টক।
৪) তলপেট চেপে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
মাটি বা বিছানায় শুয়ে পড়তে হবে। মাথা আর হাঁটুর তলায় বালিশ থাকলে আরও ভাল। তার পর একটা হাত রাখুন পেটের উপর। অন্য হাতটি রাখুন হৃদপিণ্ডের উপর। এ বার শ্বাস নিতে শুরু করুন। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে সেই সময় পাকস্থলীর নড়াচড়া না হয়। এই ব্যায়াম মেরুদণ্ড সোজা করে পদ্মাসনে বসেও করা যায়।
এই ভাবে শ্বাস ছাড়ার সময় পাকস্থলীর পেশিগুলিকে চাপ দিতে হবে। -ফাইল ছবি।
শ্বাসটাকে কিছু ক্ষণ চেপে রাখার পর পাকস্থলীর পেশিগুলিকে চাপ দিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। এই ব্যায়াম ৫ থেকে ১০ মিনিট করতে হবে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)