প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিনের দু’টো ডোজ নেওয়ার পরও শরীরে কোনও অ্যান্টিবডির সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা টিকাকরণ হয়ে যাওয়ার পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখেছেন, ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার কোনও ক্ষমতাই তৈরি হয়নি তাঁদের শরীরে।
অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণা করছেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্ঞানেশ্বর চৌবে। তিনি জানিয়েছেন, অনেক বয়স্ক মানুষের শরীরে টিকাকরণের পরও কোনও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি। তিনি বললেন, ‘‘২৩০৯ করোনা রোগীদের পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাঁদের সকলের শরীরেই ন্যাচরাল অ্যান্টিবডি ছিল। কিন্তু প্রতিষেধক পাওয়া সকলের মধ্যে আমরা অ্যান্টিবডি পাইনি।’’
যেহেতু রোগের সঙ্গে লড়াই করার মূল অস্ত্র অ্যান্টিবডি, অনেকেই এ বিষয়ে চিন্তিত। এবং বেশ কিছু ‘ব্রেকথ্রু’ করোনা রোগীর কথা শোনাও গিয়েছে। মানে টিকা নেওয়ার পরও যাঁরা সংক্রমিত হয়ে পড়েছেন। তাহলে কি টিকে নিয়েও তাঁরা সুরক্ষিত নন? তার জন্য বোঝা প্রয়োজন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ঠিক কীভাবে কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা
যখন শরীরে কোনও ভাইরাস আক্রমণ করে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা দু’ভাবে লড়াই শুরু করে। এক, শরীরে স্বাভাবিক অ্যান্টিবডি, নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টি স্পাইক অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এটাকে বলে হিউমরাল রেসপন্স। দুই, শরীরের সেলুলার রেসপন্স জেগে ওঠে, যা টি-সেলগুলো কার্যকরী করে দেয়। টি-সে ভাইরাস চিনে বি-সেলকে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে। শরীরের ভাইরাস আক্রান্ত কোষগুলো নষ্ট করে দেয়। এবং পাশাপাশি এই রোগের একটা স্মৃতি তৈরি করে ফেলে। যাতে ভবিষ্যতে এই ভাইরাস ফের আক্রমণ করলে অনেক দ্রুত লড়াই শুরু করতে পারে।
শরীরের হিউমরাল রেসপন্স অনেক দ্রুত মিলিয়ে যায়। রোগ হওয়ার কয়েক মাস পর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু সেলুলার রেসপন্সের আয়ু আরও দীর্ঘ। বিদেশে টি-সেলের স্মৃতি নিয়ে গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে এটি কয়েক বছর, এমনকি সারা জীবনও থাকতে পারে।
প্রতিষেধক নেওয়ার পর সাধারণ অ্যান্টিবডি না হয়ে শুধু টি-সেল তৈরি হওয়া কি সম্ভব
টিকাকরণ হয়ে যাওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি না মিললেও, শুধু টি-সেল তৈরি হওয়া কি সম্ভব। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে একধিক সাংবাদিক সম্মেলনে তেমনই বলা হয়েছে। মানুষ যাতে প্রতিষেধক নিতে কোনও রকম দ্বিধা না করেন, সে-ও জানানো হয়েছে। নীতি আয়োগের সদস্য চিকিৎসক বি কে পল এ বিষয়ে বলেছেন, ‘‘অনেকেই টিকাকরণের পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করানোর কথা ভাবেন। কিন্তু তার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ শুধু অ্যান্টিবডির উপর শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা নির্ভর করে না। টি-সেল অ্যান্টিব়ডি পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। কারণ সেটা বোন ম্যারোয় পাওয়া যায়। তবে প্রতিষেধক নেওয়ার পরে আমাদের শরীরের টি-সেলের স্মৃতিতে অনেক রকম বদল আসে, তা নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন।’’
তবে প্রতিষেধক তৈরির সময় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে শুধু সেলুলার রেসপন্স পাওয়া গিয়েছে, হিউমরাল পাওয়া যায়নি, এমন কোনও তথ্যের কথা কেউ সঠিক ভাবে দিতে পারেননি।
অ্যান্টিবডি না থাকলেও কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবেন
জওহারলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোবর্ধন দাস এ বিষয়ে বলেছেন, ‘‘অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মতো টি-সেল বা বি–সেলের পরীক্ষাও সহজেই সরকার করে দেখতে পারেন। তবে চিন্তার বিষয়, এই সেলুলার রেসপন্স কতটা শক্তশালী।’’
ভারতে খুব কম ল্যাবরেটরি রয়েছে যেখানে সেলুলার রেসপন্স পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব। এবং তা-ও করা হয়ে মূলত গবেষণার কাজে। বেসরকারি কোনও ল্যাবে এই পরীক্ষা হয় না। এই ধরনের পরীক্ষার জন্য ল্যাব সেট আপের খরচ পরে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা এবং পরীক্ষা করাতে ৬০০০ টাকা মতো। চিকিৎসকেরা মনে করেন, সাধারণ মানুষের এই ধরনের পরীক্ষা করানোর কোনও প্রয়োজন নেই। বরং সরকারের পক্ষ থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
তাই টিকাকরণের পরও মাস্ক পরা এবং যাবতীয় কোভিড-বিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।