Covid-19

কোভিড হানায় ব্যাহত স্তন ক্যানসারের চিকিৎসাও

চলতি বছরে শুধু সে দেশেই মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ৬৯০ জনের, যাঁদের মধ্যে ৫২০ জন পুরুষ।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৬:১২
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বিশ্বে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ২৯ লক্ষ রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৬ লক্ষ ২৭ হাজার জনের। জাতীয় স্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু ২০১৮ সালেই ভারতে স্তন ক্যানসারে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৪৬৮ জন নতুন রোগীর খোঁজ মিলেছিল। ওই বছর মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৮৭ হাজার রোগীর। এ দেশে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত প্রতি দু’জন নতুন মহিলা রোগীর মধ্যে মৃত্যু হয় এক জনের। যার মূল কারণ, দেরিতে রোগ নির্ণয়। কোভিড পরিস্থিতি রোগ নির্ণয়ে দেরি এবং সেই দেরির কারণে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। করোনার এই সময়ে বিশ্ব জুড়ে প্রবল ভাবে ব্যাহত হচ্ছে স্তন ক্যানসারের স্ক্রিনিং। অক্টোবর এই রোগের সচেতনতার মাস। তাই স্তন ক্যানসারের সচেতনতায় এই সময়ে বেশি প্রচার চললেও সারা বছর ধরেই কমবেশি স্ক্রিনিং চলে।

Advertisement

গত প্রায় আট মাস ধরে যা বন্ধ রয়েছে।

অতিমারির এই বছরে স্তন ক্যানসার নিয়ে তথ্য তুলে ধরেছে গবেষণাকারী একটি সংস্থা। তাতে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকাতেই এই রোগে এ বছর নতুন করে আক্রান্ত মহিলার সংখ্যা ২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৪৮০ এবং আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা ২ হাজার ৬২০!

Advertisement

চলতি বছরে শুধু সে দেশেই মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ৬৯০ জনের, যাঁদের মধ্যে ৫২০ জন পুরুষ।

“হ্যাঁ, স্তন ক্যানসার হয় পুরুষদেরও। প্রতি একশো জনের মধ্যে এক জন পুরুষ রোগী পেয়ে থাকি। রোগের লক্ষণ মহিলাদের মতোই। অথচ, এ নিয়ে সচেতনতাই নেই! যে হেতু পুরুষদের স্তনে চর্বি কম থাকে, তাই তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সহজ। পুরুষ ও মহিলা নির্বিশেষে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সতর্ক থাকা জরুরি,” বলছিলেন ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়। মহিলাদের মতো পুরুষদের স্তনেও টিসু থাকে। তবে তা অনেক কম।

‘আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি’ জানাচ্ছে, মহিলাদের স্তনের বিভিন্ন অংশের মতোই পুরুষের স্তনের সেই সব গ্রন্থি বা নালি, তা নিষ্ক্রিয় হলেও সেখানে ক্যানসার থাবা বসাতে পারে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পুরুষদের এই রোগ বিরল। পুরুষদের স্তন ক্যানসার নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তাই পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও মহিলাদের চিকিৎসা পদ্ধতি মেনেই পুরুষদের চিকিৎসা হয়।

ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, “স্তন ক্যানসারের নির্ধারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক দেরিতে হয়। যার মূল কারণ, সঙ্কোচ। ফলে অবহেলা করেন রোগীরা।

অথচ, রোগ প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে কিন্তু এই ক্যানসারে সুস্থতার হার বেশি‌। এ জন্যই বছরভর সচেতনতার প্রসার এবং স্ক্রিনিং করা জরুরি।

যেটা এ বছর প্রায় কোথাও হচ্ছেই না।”

স্ক্রিনিং কী? নিজের স্তনের পরীক্ষা করে সন্দেহজনক কিছু পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ক্লিনিক্যাল এগজ়ামিনেশন, মেমোগ্রাফি, ইউএসজি এবং এফএনএসি (ফাইন নিডল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি) করিয়ে দেখে নেওয়া হয় রোগের অস্তিত্ব। রোগ ধরা পড়লে শুরু হয় চিকিৎসা। শল্য চিকিৎসক সৌমেন দাস জানাচ্ছেন, চলতি মাসে সচেতনতার প্রসারে নয়াবাদের এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে চালু ছিল ‘ওয়ান স্টপ ব্রেস্ট ক্লিনিক’। যেখানে ক্লিনিক্যাল এগজ়ামিনেশন, মেমোগ্রাফি, ইউএসজি এবং এফএনএসি করে শতাধিক মহিলার মধ্যে থেকে এখনও পর্যন্ত ২০ জনের রোগ চিহ্নিত করা গিয়েছে।

বাকি প্রায় সর্বত্র ব্যক্তিগত ভাবে রোগীরা এলে তবেই চিকিৎসা হচ্ছে। ক্যানসার চিকিৎসক জীবক ভট্টাচার্য বললেন, “যাতায়াতের অসুবিধা ও আর্থিক অনটনের কারণে রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ফলে স্টেজ তিন বা স্টেজ চার নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। রোগী ও তাঁর পরিবারের কাছে অনুরোধ, সমস্যা বুঝলে দেরি নয়। চিকিৎসার সময় দেবেন।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement